বিশেষ সংবাদদাতা : মেয়েদের জুডোতে পর পর তিন তিনটি ইভেন্টেই রচিত হলো ইতিহাস। ৪৮ কেজিতে আজেন্টিনার পাউলো পেরেতো আজেন্টিনার হয়ে জুডোতে প্রথম স্বর্ণ জয়ের ইতিহাস করেছেন রচনা। পরদিন ৫২ কেজি ইভেন্ট থেকে কসভোর ইতিহাসে প্রথম স্বর্ণ জয়ের রেকর্ডটা করেছেন মেলেন্দি। রিও অলিম্পিকে প্রথম ২ দিন স্বর্ণপদকহীন কাটানো স্বাগতিক ব্রাজিল স্বর্ণের দেখা পেয়েছে নারী জুডোর ৫৭ কেজি ওজন শ্রেণি থেকে। রাফায়েল সিলভা নামের এক ডানপিটে মেয়ের হাত ধরেই স্বর্ণ পদকের শুরুটা আসরে করলো ব্রাজিল।
৬টি ম্যাচের সব ক’টিতে জিতেছেন। প্রথম রাউন্ডে মাত্র ৪৬ সেকেন্ডে কুপোকাত করেছেন জার্মান প্রতিদ্ব›িদ্ব মিরইয়াম রোপারকে। পরের রাউন্ডে বিশ্ব জুডো র্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় দ.কোরিয়ার কিমম জান দিকে হারিয়েছেন। সেমিফাইনালে প্রতিদ্ব›িদ্ব ছিলেন ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে রৌপ্য জয়ী রোমানিয়ার কোরিনা। লড়াইটা হয়েছে সেয়ানে সেয়ানে। নির্ধারিত ৪ মিনিটে লড়াই নিস্পত্তি না হওয়ায় গোল্ডেন স্কোর টাইম তিন মিনিট লড়তে হয় রাফায়েলাকে। কাউন্টার এ্যাটাকে ধরাশায়ী করেন ওই প্রতিদ্ব›িদ্বকে। ফাইনালে মঙ্গোলিয় প্রতিদ্ব›িদ্ব সুমিয়া। ৫৭ কেজি ওজন শ্রেণির নাম্বার ওয়ান এই প্রতিদ্ব›িদ্বর বিপক্ষে জিততে লেগেছে রাফায়েলার মাত্র ১ মিনিট!
ক্ষীপ্র এবং আক্রমণাত্মক মেজাজের কারণেই এই সাফল্য পেয়েছেন বলে মনে করছেন রাফায়েলাÑ ‘আমার প্রথম কোচ বলেছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজ প্রবনতা আছে আমার। তিনি যা বলতেন, অল্প সময়ের মধ্যে তা করতাম। আমি সব সময় যখন একটা ঘুড়ি পড়তো তা ধরতে দেয়ালের উপরে উঠে যেতাম।’
জুডো থেকে অলিম্পিকে ব্রাজিলের প্রথম স্বর্ণ জয়ের ইতিহাসই শুধু রচনা করেননি, স্বাগতিক ব্রাজিলকে আসরের প্রথম স্বর্ণ উপহার দিয়ে সেরাদের কাতারে পদক তালিকায় ব্রাজিলকে উঠিয়ে আনার প্রেরণা দিচেছন রাফায়েলাÑ ‘আশা করছি আমার পদক জয় এখন ব্রাজিলকে অনেক অনেক পদক জয়ের পথ সুগম করবে।’
ফেভিলায় দরিদ্র পরিবারে জন্ম রাফায়েল সিলভা শৈশবে ছিলেন ডানপিঠে। যেখানে কাটিয়েছে তার শৈশব, সেই জায়গাটি ছিল সংঘাতপূর্ণ। রাস্তায় ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলে, বাড়ির ছাদের উপর ঘুড়ি উড়িয়ে, ঘুড়ি কাটাকাটি করে কাটতো তার সময়। এভাবেই কেটেছে তার ৮টি বছর। বয়স যখন মাত্র ৫, তখন দুই মেয়েকে জুডোকার বানানোর ইচ্ছে পোষণ করেন বাবা-মা। জুডোতে হাতে-খড়ি, এই জুডো নিয়েই দেখেছেন স্বপ্ন। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে অংশ নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতাও আছে তার। অবৈধ ট্যাকেলের দায়ে প্রিলিমিনারি রাউন্ড থেকেই পড়েন তিনি ছিটকে। ওই ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ার আক্রমণাত্মক মন্তব্য শুনতে হয়েছে তাকে। বর্নবাদী মন্তব্য পর্যন্ত হয়েছে শুনতে, রিও অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ে সেই অতীতই এনেছেন প্রকাশ্যেÑ ‘সেবার লড়াইয়ে হেরে এমনিতেই মন খুব খারাপ ছিল। হেঁটে রুমে যেয়ে দেখি সোশ্যাল মিডিয়ার আক্রমণ। আমাকে সমালোচনা করে খাঁচায় বন্দি বানরের সঙ্গে তুলনা করেছে তারা। আমি ভেঙে পড়েছিলাম। এক পর্যায়ে জুডো খেলা ছেড়েই দিতে চেয়েছিলাম। সমস্যা কাটিয়ে সেখান থেকে উঠে আসা কঠিন ছিল। জুডোই আমার জীবন বলে ফিরতে পেরেছি।’
স্বপ্ন পূরনে গর্বিত রাফায়েলা- ‘আমার একটি স্বপ্ন ছিল। ওই সব শিশুদেরও স্বপ্ন আছে। যদি কেউ খেলায় স্বপ্ন পূরন করতে চায়, করুক। তাদের জন্য আমি উদাহরণ হতে পারি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন