শামীম চৌধুরী : ২০০৬ সালে কলোম্বোয় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের সেই হারের ছবিটা মেহেদী হাসান মিরাজদের যে তিনজনের মনে করিয়ে দেয়ার কথা, পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) খেলতে ওই তিনজন (সাকিব, তামীম, মুশফিক) এখন দুবাইয়ে। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা দলটির ৫ জন পরবর্তীতে খেলেছেন টেস্ট, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে ফেলেছে ওই দলটির ৭ জন। তারপরও ইংল্যান্ডকে দেশের মাটিতে ৬-০তে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে যে দলটি ফেভারিট মর্যাদায় শুরু করেছিল ২০০৬ সালের আসরটি, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, উগান্ডাকে উড়িয়ে দিয়ে, গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই দলটিই কি না কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে গেছে হেরে ! সেই অতীতই গতকাল মনে করিয়ে দিয়েছে মিরাজদের মিডিয়া। সাকিব, তামীম, মুশফিকুরদের সে যন্ত্রণা লাঘবে নুতন ইতিহাস রচনার সংকল্প মিরাজের। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল কখনো সেমিফাইনালের মুখ দেখেনি। নুতন করে সেই ইতিহাস রচনায় প্রত্যয়ী বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়কÑ ‘যেহেতু কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছি, এটা আমাকে অনুপ্রাণিতকরছে। এর আগে মুশফিক ভাইরা ভাল পজিশনে থেকে পারেননি। আমাদের সামনেও ভালো করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশ এর আগে কখনো সেমিফাইনাল খেলেনি, যদি নেপালের সঙ্গে জিততে পারি, সেটি অনেক বড় অর্জন হবে।’
২০০২ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে বাংলাদেশ। আফতাব, আশরাফুল, নাফিস ইকবাল, সৈয়দ রাসেলদের সেই দলটির প্লেট সেমিতে নেপালের কাছে ২৩ রানে হার এখনো বড় ধরনের ট্র্যাজেডি। কোয়ার্টার ফাইনালে নেপাল যখন প্রতিপক্ষ, যাদের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে একবার মোকাবেলায় ওই হারটির জবাব ১৪ বছর পর দিতে চায় মিরাজÑ ‘নেপাল সম্পর্কে জানি। ওদেরকে সহজভাবে নেওয়ারকিছু নেই। ওরা যেহেতু কোয়ার্ট পর্যাার ফাইনালে কোয়ালিফাই করেছে, অবশ্যই তারা ভালো দল। ওদের হালকাভাবে নিলে আমাদের সমস্যা হবে।’ তবে ১৪ বছর আগে নেপালের কাছে ওই হার সামনে আনতে চান না কোচ মিজানুর রহমান বাবুলÑ ‘বর্তমান দলটির অনেকে আসলে জানেই না নেপালের কাছে হেরেছিলো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। ওই ঘটনা আমরা ওদের সামনে উত্থাপন করতে চাই না। এটা ছোটদের টুর্নামেন্ট। যে দল এখানে ভালো ক্রিকেট খেলবে তারাই জিতবে।
আর মাত্র তিনটি হার্ডল। আজ প্রথম হার্ডল পেরুলে সেমিফাইনাল। তবে প্রত্যাশার চাপ স্বাভাবিক খেলাকে ব্যাহত করবে বলে মনে করছেন না মিরাজÑ ‘যেহেতু দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, তাই সবাই প্রত্যাশা করছে সে অনুযায়ী খেলতে হবে। তবে এতে চাপ ঠিক নয়, চেষ্টা থাকবে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার।’
গ্রুপ রাউন্ডের তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই টপ অর্ডার করেছে হতাশ, একটি ম্যাচেও ওপেনিংয়ে আসেনি বড় পার্টনারশিপ। চেনা জানা মাঠ মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেটে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ফর্ম ফিরে পাবেন বলে আশা করছেন মিরাজÑ ‘আমরা খেলি দলীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী। কক্সবাজারে উইকেট মন্থর দেখে দলের পরিকল্পনা ছিল, ওপেনারদের ধীর-সুস্থে খেলতে হবে। উইকেট দেয়া যাবে না। সাইফ-ইমন ওভাবেই খেলেছে। এখানে উইকেটটা ভিন্ন হতে পারে। এখানে আমরা অভ্যস্ত। উইকেট ভালো থাকলে শুরুতেই ব্যাটসম্যানরা হয়তো শট খেলবে। রান তোলার চেষ্টা করবে।’
দলের উপদেষ্টা কোচ স্টুয়ার্ট ল’ মিরাজদের যে উপভোগের মন্ত্র দিয়েছেন, তাতেই মিরাজরা অনুপ্রানিতÑ ‘খেলার শুরুতে আমাদের যে মনোযোগ থাকে, শেষ পর্যন্ত যেনো সেই মনোযোগটা একইভাবে থাকে। তিনি মাঠে খেলটা চাপ হিসেবে না নিয়ে উপভোগ করতে বলেন।’
স্টুয়ার্ট ল’র ভূমিকার প্রশংসা করেছেন কোচ মিজানুর রহমান বাবুলÑ ‘স্টুয়ার্ট’ আমাদের এখানে পরামর্শক হিসেবে আছেন। যতটুকু যেভাবে সাহায্য করা যায় উনিও করছেন। বিশ্বকাপের আগে এখানে একমাস কাজ করে গেছেন। এখন উনি ছেলেদের ব্যাটিংয়ের ব্যাপারে পরামর্শ দি”েচ্ছন।’
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটে সকালে পেস ধরতে পারে বলে এই ম্যাচের একাদশে আসতে পারে পরিবর্তন। একজন অফ স্পিনার, না একজন পেসার বাড়তি খেলানো হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি কোচ। তবে এই ম্যাচে পেস বোলার হালিমের পরিবর্তে মেহেদী হাসান রানাকে নেয়ার কথা ভাবছে টীম ম্যানেজমেন্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন