শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কুরিয়ারে মাদক পাচার

নজরদারী বাড়ানোর তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

মাদক এখন কুরিয়ারে পাচার হচ্ছে। দেশি-বিদেশী কোরিয়ার সার্ভিস গুলোতে মাদকের পণ্যের আড়ালে মাদক আনা নেয়া হচ্ছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছে। অ্যামফিটামিন নামের এক ধরণের মাদক বাংলাদেশে তৈরি না হলেও পাচারে রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ঢাকা। গত ৯ সেপ্টেম্বর ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ম‚ল্যের মাদক অ্যামফিটামিন পাচারের চেষ্টায় ব্যবহার করা হয়েছে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস। এক্ষেত্রে দেয়া হয়েছে মিথ্যা তথ্য। আমদানির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ঠিকানায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে কারও সন্ধান পায়নি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। যে কারণে ওই চালানের সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনো আটক করা যায়নি।

কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (সিএসএবি) সভাপতি হাফিজুর রহমান পুলক বলেন, কুরিয়ার সার্ভিস কখনো মাদকের চোরাচালানে সহযোগিতা করে না। আমরা সরকারের কাছে স্ক্যানার চেয়েছি। ভর্তুকিও দিচ্ছি। প্রয়োজনে পার্সেল স্ক্যানপ্রতি ১০-২০ পয়সাও দিতে চেয়েছি। তবু স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন না উঠুক কুরিয়ার সেক্টরে। কিন্তু সরকার তো সে ধরনের কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি।

জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) উপ-পরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে মাদকের চোরাকারবার হচ্ছে। শুধু এ বছরেই কুরিয়ারের মাধ্যমে মাদকের চোরাচালানের অভিযোগে ১২টি অভিযান পরিচালনা করেছি, জব্দ করেছি বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। কুরিয়ার সার্ভিসে যেন মাদক জাতীয় কোনো কিছু চোরাচালান না হয় সেজন্য নিয়ন্ত্রণ এবং কিছু ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতার প্রয়োজন তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশে পাঠানোর প্রাক্কালে অ্যামফিটামিনের ওই চালানই দেশে বড় মাদকের চালান জব্দের ঘটনা। মাদকের চোরাচালান বন্ধে কুরিয়ার সার্ভিসে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি সুরক্ষা নীতি গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুরিয়ার সার্ভিসে মাদকের হোম ডেলিভারির খবর গণমাধ্যমে এসেছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো অভিযানও চালিয়েছে। কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিসকে সুরক্ষামূলক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শক্তিশালী নজরদারি প্রয়োজন। দরকার জড়িতদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে যুগোপযোগী আইন ও নীতিমালা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের মতো বৈশ্বিক দুর্যোগেও থেমে নেই মাদককারবারি চক্রের অবৈধ কারবার। তল্লাশি ও নজরদারিতেও বিভিন্ন কৌশলে তারা দেশে মাদকের চালান আনছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফ থেকে ইয়াবা, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর মতো সীমান্ত থেকে আসছে ফেনসিডিল। ত্রাণ বিতরণ, ওষুধসহ বিভিন্ন পণ্যের আড়ালেও কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো পার্সেলকে ব্যবহার করা হচ্ছে মাদকের চোরাকারবারে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর দারুসসালাম থানাধীন কল্যাণপুরের সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ মাদক ও গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় আটক করা হয় নারায়ণগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুল জলিল মাতবরকে। পার্সেল থেকে একটি দেশি পিস্তল, ৪০ রাউন্ড পিস্তল ও রাইফেলের গুলি, ৫ হাজার ২৮৯ পিস ইয়াবা, ১ কেজি ৩শ গ্রাম গাঁজা, ৯ ক্যান বিয়ার ও ৪০ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করা হয়।

গত ১৫ জুন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় আনা হয় আমভর্তি কার্টন। আমের আড়ালে হেরোইনের বড় চালান আসার খবর পেয়ে এলিফ্যান্ট রোডে তল্লাশি চৌকি বসায় র‌্যাব-২। সেখানে আটক করা হয় হাবিবুর রহমান (২৯) ও দিলরুবা দিপা (২৯) দম্পতিকে। গত ৩১ আগস্ট সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আসবাবপত্রের আড়ালে কুমিল্লা থেকে বিপুল পরিমান গাঁজা রাজশাহী পৌঁছালে র‌্যাবের হাতে সেগুলো জব্দ হয়। গত ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল কক্সবাজার থেকে ইয়াবার বড় একটি চালান রাজশাহীতে পৌঁছে এসএ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে। জয়পুরহাটের দুই ভাই সেই ইয়াবা কুরিয়ার সার্ভিস থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় নগরীর ভদ্রা বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের আটক করে র‌্যাব। ওই বছরের ১৯ মে রাজধানীর উত্তরায় এসএ পরিবহনের অফিস থেকে এক লাখ পিস ইয়াবা জব্দসহ দুই মাদক কারবারিকে হাতেনাতে আটক করে র‌্যাব। একই সালের ১৬ ডিসেম্বর রাজধানীর কাকরাইল থেকে ৯২০০ পিস ইয়াবাসহ আন্তঃজেলা মাদক ব্যবসায়ী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে র‌্যাব।

এ ব্যাপারে মাদক বিশেষজ্ঞ সাবেক সচিব ভূইয়া শফিকুল ইসলাম বলেন, সবকিছুর আগে দরকার মোরালিটি। কিন্তু দেশে তো গণতন্ত্র বলেন, আর রাজনীতি বলেন, কোনো কিছুতেই তো এর উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না। দেশে ইয়াবা বা অ্যামফিটামিন যে তৈরি হয় না, এ ব্যাপারে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। তিনি আরো বলেন, কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যক্রম মনিটর করতে হবে। কিন্তু মনিটর কে করবে? এক কেজি দেড় কেজির একটা প্যাকেটে লাখ পিস ইয়াবা থাকতে পারে। সেটা মনিটর করার মতো ব্যবস্থাপনা সরকারকেই করতে হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) ডিআইজি মাসুম রব্বানী বলেন, কুরিয়ার সার্ভিসকে নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের কাজ নয়। কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিসে মাদকের চোরাচালান ঠেকাতে যা যা করা দরকার সেটা আমরা করবো। আমরা চাই তারা আরও স্বচ্ছতা নিয়ে আসুক।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন