এবার প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস কেড়ে নিলো স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম খেলোয়াড়, জাতীয় দল ও ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের তারকা স্ট্রাইকার নওশেরুজ্জামানকে। ২১ সেপ্টেম্বর (সোমবার) রাত সাড়ে ৯টার সময় ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে নওশেরের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য আতœীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী রেখে যান।
নওশেরুজ্জামানের মৃত্যু সংবাদটি নিশ্চিত করে তার চাচাতো ভাই সাইদুজ্জামান জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে নওশেরুজ্জামানের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। চলতি মাসের শুরুতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন সাবেক তারকা ফুটবলার নওশের। করোনা পজিটিভ হওয়ায় প্রথমে তাকে ভর্তি করানো হয় রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে। পরে গ্রীন লাইফ হাসপাতাল হয়ে ইবনে সিনায় ভর্তি হয়েছিলেন নওশেরুজ্জামান। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই সদস্য।
হাসপাতালে ভর্তির শুরু থেকে আইসিও শয্যার প্রয়োজন থাকলেও তিনি তা পাননি। অবশ্য পরে কয়েকদিন আইসিওতে থাকলেও তার শারীরিক জটিলতা কাটেনি। অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হয়েছিল নওশেরকে। ক’দিন আগেই তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু আর ফেরানো যায়নি। প্রায় সপ্তাহখানেক জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থেকে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন কৃতি স্ট্রাইকার নওশের।
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য নওশের ছিলেন দেশসেরা স্ট্রাইাকারদের একজন। স্বাধীনতার আগে তিনি খেলেছেন রেলওয়ে, ওয়ারী, ফায়ার সার্ভিস ও ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা দলের হয়ে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় খেলেছেন তিনি।
স্বাধীন বাংলাদেশে ওয়াপদা ফুটবল দলে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪, ঢাকা মোহামেডানে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ এবং ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত খেলেছেন নওশের। তিনি জাতীয় দলের সদস্য ছিলেন ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত। এই সময়ে দেশের হয়ে অনেক স্মরণীয় ম্যাচ খেলেন নওশেরুজ্জামান।
ফুটবল ছাড়াও ক্রিকেটে তার ছিল সমান দাপট। মোহামেডানের মতো নামি দলে নিয়মিত খেলে গেছেন সাবেক এই ওপেনার। এছাড়া ভিক্টোরিয়াতে তিন বছর ও কলাবাগানে পাঁচ বছর খেলেছেন।
দেশের খেলাধুলায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্লু’ পদক পেয়েছিলেন তিনি। তবে একটি আক্ষেপ নিয়েই পরপারে পাড়ি জমালেন নওশের। আর তা হলো- মৃত্যুর আগে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেখে যাওয়া হলো না এই তারকা ফুটবলারের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন