বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঝুলন্ত তার অপসারণ

উত্তরে গোছানো দক্ষিণে বিশৃঙ্খলা

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২০, ১২:৩২ এএম

দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পর রাজধানীর সড়ক থেকে ঝুলন্ত তারের জঞ্জাল অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সড়কের সৌন্দর্য্য বাড়াতে এবং ঝুলে থাকা তারের মাধ্যমে দুর্ঘটনা এড়াতে দুই সিটির এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে নগরবাসী। ২০০৮ সাল থেকে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) ও বিদ্যুৎ বিভাগ দফায় দফায় বৈঠক, আল্টিমেটাম দিয়েও যেটি করতে পারেনি, সেটিই এবার করে দেখাচ্ছেন দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে গত ৫ আগস্ট থেকে পরিত্যক্ত ও ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণ শুরু করেছে দক্ষিণ সিটি। অন্যদিকে উত্তর সিটিতে অবৈধ স্থাপনা, বিলবোর্ড, স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রমের পর গতকাল থেকে শুরু হয়েছে ঝুলন্ত তার অপসারণ। তবে দেরিতে শুরু করলেও তার অপসারণে অত্যন্ত গোছালো পদ্ধতিতে কাজ করছে উত্তর সিটি। সড়কের ঝুলন্ত তার অপসারণের পর তা যেনো পুনরায় ঝুলানো না হয় সেটি নিশ্চিত করেছেন আতিকুল ইসলাম। রোড ক্রসিংগুলোতে ডাক করে দেয়া হয়েছে, সড়কের পাশে সসার ড্রেনগুলোতে বসানো হবে পাইপ। এছাড়া নতুন যেসব রাস্তা তৈরি হচ্ছে সেগুলোতে রাস্তার নিচ দিয়ে লাইন নেয়ার ব্যবস্থাও করেছে ডিএনসিসি। ফলে তার কেটে দেয়ার পর কোন ধরণের ভোগান্তি ছাড়াই গ্রাহকরা নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট পাবেন, সার্ভিস প্রোভাইডারদেরও জন্য করা হচ্ছে স্থায়ী সমাধান। অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে তার অপসারণ করলেও দক্ষিণে তার কাটার পরই বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় দুই ঘণ্টার মধ্যে সেই এলাকায় পুনরায় তার ঝুলিয়ে ইন্টারনেট ও ডিস সংযোগ দিচ্ছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) ও ক্যাবল অপারেটররা।

দক্ষিণ সিটির অভিযান থেকে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট থেকে তার অপসারণ শুরু করে ডিএসসিসি। ইতোমধ্যে এই সিটির ভ্রাম্যমাণ আদালত ধানমÐি, ঝিগাতলা, হাজারীবাগ, ওয়ারী, খিলগাঁও, আজিমপুর, ঠাটারী বাজার, জয়কালী মন্দির, ওয়ারী, বঙ্গভবনের দক্ষিণ পাশ, পলাশী, বাটা সিগন্যাল, হাতিরপুল, মালিবাগ, রাজারবাগ, বেইলি রোড, মতিঝিল, টিকাটুলি, ঢাকা মেডিকেল এলাকাসহ দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে সড়কের পাশে ও বিদ্যুতের পিলারে ঝুলে থাকা তার অপসারণ করছে। দু’একদিন পরপরই সিটির কোন না কোন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে এই অভিযানে যেসব জায়গায় তার অপসারণ করা হচ্ছে তা বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ আদালত সড়কের পাশে ঝুলে থাকা তার একটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে কেটে দেয়। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় (আইএসপি’র অভিযোগ) এতে সেই এলাকায় ইন্টারনেট ও ডিস সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আবার ভ্রাম্যমাণ আদালত চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আইএসপি ও ক্যাবল অপারেটরদের লোকজন এসে দুই ঘণ্টার মধ্যেই সেই কেটে দেয়া তার পুনরায় টানিয়ে সংযোগ সচল করে দেয়। ফলে সড়কের দৃশ্য আগের অবস্থাতেই ফিরে যায়। কিন্তু মাঝের সময়টুকুতে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হক বলেন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা সিটি করপোরেশনের কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ইশতেহার, পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলতে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের অবশ্যই সিটি করপোরেশনের অধীনে নিবন্ধিত হতে হবে। নিবন্ধন ফি হিসেবে ২৫ লাখ টাকা সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে। রাজস্ব পেলে মাটির নিচ দিয়ে সংযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান আরিফুল হক।

উত্তরে ঝুলন্ত তার অপসারণ: ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশান ২ নম্বর গোলচত্বর থেকে অবৈধ ঝুলন্ত তার অপসারণ কাজের উদ্বোধন করেন। গুলশান এভিনিউতে ঝুলন্ত তার অপসারণের মাধ্যমে (পাকিস্তান অ্যাম্বেসি থেকে শুটিং ক্লাব পর্যন্ত) ডিএনসিসি এলাকায় ঝুলন্ত তার অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অবৈধ ঝুলন্ত তার অপসারণ উদ্বোধনকালে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, তারের জঞ্জাল আজ (গতকাল) থেকে ১০ বছর আগে যে অবস্থা ছিল, এখনো একই অবস্থা। কিন্তু এই শহরকে এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। মনে হচ্ছে ঝুলন্ত তার মানেই ঢাকা শহর, ঢাকার আসল চিত্র। এই যে দেখুন এই জায়গাটির একদিকে ফাইভ স্টার হোটেল, আরেক দিকে তারের জঞ্জাল। কিন্তু ঢাকার এই চিত্র আমরা কেউ দেখতে চাই না। তাই আমি গত কোরবানির ঈদের আগে বলেছিলাম, ১ অক্টোবর থেকে আমরা ঝুলন্ত তারগুলোকে নামিয়ে দেবো।
মেয়র বলেন, আমরা ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), ক্যাবল অপারেটরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এর সাথে সাত বার সভা করেছি, সবাইকে নিয়ে সিরিজ অফ মিটিং করেছি, সমস্যাটি সমাধানের জন্য। একটি কথা জানাতে চাই, যখনই আমরা মিটিং করছি, এনটিটিএন, আইএসপিএবি, কোয়াবের সাথে, যখনই মিটিং শুরু করি, মনে হয় একজনের সাথে আরেকজনের শত্রæতা। আইএসপিএবি দোষ দেয় এনটিটিএনকে, এনটিটিএন দোষ দেয় কোয়াবকে।

আতিকুল ইসলাম বলেন, গুলশান এভিনিউর উত্তর থেকে দক্ষিণে যত তার আছে সব গুলো কেটে দেবো। গুলশান এভিনিউতে টোটাল নয়টি মোড় আছে। এই নয়টি মোড়ের তার, তাদের অনুরোধে আরো সাত দিন সময় দেওয়া হলো। সাত দিনের মধ্যে ক্রসিংয়ের তারগুলোও কেটে দেবে। আমরা চাচ্ছি এটি টেকসই করার জন্য। স্বল্প মেয়াদী পদ্ধতিতে আমি যেতে চাচ্ছি না। আজকে যে তার কাটা হচ্ছে এটাই কিন্তু সেবা প্রদানকারীরাই কাটছেন। এই প্রথম তারা নিজের তার নিজেরা কাটছেন। তাদেরকে আমি এখানে ডাক দিয়েছি, কারণ ঢাকা হচ্ছে আপনাদের সকলের।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে এনটিটিএন কাজ করছে না, আমি মনে করছি এটি এনটিটিএন এর ব্যর্থতা। তারা ১০ বছর যাবৎ লাইসেন্স নিয়েছে, তারা কেন মাটির নিচ দিয়ে লাইন নেয় নাই? সুতরাং আমি সাব্যস্ত করেছি, তাদের সাথে মিটিং করে, আমাদের রাস্তার পাশে যে সসার ড্রেনগুলো আছে এগুলোর নিচ দিয়ে আমি পাইপ বসিয়ে দেবো। উনারা রাজি হয়েছেন। এ বাবদ ডিএনসিসিকে তারা ভাড়া দেবেন। আমি ইতোমধ্যে প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি, আমাদের যত নতুন রাস্তা হবে, সেই রাস্তাগুলোর নিচ দিয়ে লাইন নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা রাখা হবে। আমরা চাই একটা স্থায়ী সমাধান। গুলশান এভিনিউর তার অপসারণের পরে গুলশান ১ থেকে রাস্তার পূর্ব ও পশ্চিম পাশে, গুলশান ২ থেকে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে সকল তার অপসারণ করা হবে।

মেয়র শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আজ যদি ঢাকা শহরের তার পুরোটা কেটে দেই, তাহলে ঢাকা শহর কলাপ্স হয়ে যাবে। আমাদের বাচ্চাদের পড়াশোনা হবে না। আমি বিশ্বাস করি আমরা যেভাবে অভিযান পরিচালনা করছি, আগামী এক বছরের মধ্যে ডিএনসিসির সম্পূর্ণ এলাকার তারগুলোকে নামিয়ে ফেলার চেষ্টা করব। এটা আমাদেরকে নামাতেই হবে।

জানতে চাইলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি মো. আমিনুল হাকিম বলেন, দক্ষিণ সিটি যেমন হঠাৎ করে একেক দিন একেক এলাকায় ক্যাবল কাটছে, বিকল্প কোন ব্যবস্থাও করা হয়নি। উত্তর সিটি সেভাবে করছে না। তারা আমাদেরকে এক মাস সময় দিচ্ছে, বিকল্প হিসেবে রোড ক্রসিংগুলোতে এনটিটিএন অপারেটর বাহনের মাধ্যমে ডাক করে দিচ্ছে। সড়কের পাশে ড্রেনে ক্যাবল স্থাপনের সুযোগ করে দিচ্ছে। নতুন সড়কের নিচে ক্যাবল স্থাপনের সুযোগ করে দিবে।

তিনি জানান, দক্ষিণে ক্যাবল কাটার কারণে গত দুই মাসে আইএসপিগুলোর ১৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে না। দক্ষিণ সিটির রাজস্বের বিষয়ে আমিনুল হাকিম বলেন, একেকটা আইএসপি অপারেটরকে ২৫ লাখ টাকা দিতে বলা হচ্ছে, সেই পরিমাণ রেভিনিউ কী সেখান থেকে আসবে?

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
MD Rubel Islam ২ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০২ এএম says : 0
উদ্যোগটা নিয়েছেন ভালো স্যার কিন্তু আগে বিকল্প পদ্ধতি নেওয়া দরকার ছিল তার কাটার জন্য
Total Reply(0)
Zaman Uddin ২ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৩ এএম says : 0
সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবাই ঐকমতে ডিস লাইন তার অপসারন করা হচ্ছে
Total Reply(0)
Aminul Islam ২ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৪ এএম says : 0
বিষয়টা অতি গুরুত্বপূর্ণ এটা শুধু ঢাকায় নয় এটা সারা বাংলাদেশেই করা দরকার
Total Reply(0)
Liton Mia ২ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৪ এএম says : 0
খুব ভাল একটা উদ্যোগ, কিন্তু আমার মনে হয় এটা করার আগে বিকল্প ব্যবস্থা করা দরকার ছিল।
Total Reply(0)
এস এম এন ইসলাম ২ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৫ এএম says : 0
সিটি কর্পোরেশনের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই এবং ইহা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত আর ঝুলন্ত তারের পাশাপাশি যেখানে সেখানে দেয়াল লিখন,পোস্টার লাগানোর মতো বাজে কাজ গুলো চিরতরে বন্ধ করতে হবে।
Total Reply(0)
LITON ২ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৫ এএম says : 0
তার অপসারণের আগে মাটির নিচ দিয়ে লাইন করতে হবে আগে ।
Total Reply(0)
MD Yeasin Gazi ২ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৬ এএম says : 0
অনেক সুন্দর একটা কাজ করেছ অনেক অনেক ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Shipon Roy ২ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৭ এএম says : 0
good
Total Reply(0)
MH Mamun Hossain ২ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৮ এএম says : 0
এটা ঠিক হয় নাই, আগে একটা সমাধান করে তারপর কাটা ধরকার ছিলো
Total Reply(0)
সৌরভ ২ অক্টোবর, ২০২০, ৫:০৯ এএম says : 0
কারেন্ট এর তার কাটে না কেন?কারেন্ট তার কি রাস্তায় ঝুলন্ত না?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন