তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেপ এরদোগান জেরুজালেমকে “আমাদের শহর” বলে অভিহিত করেছেন। বৃহস্পতিবার তুর্কি আইন প্রণেতাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন। এ সময় এরদোগান বলেন, “এই শহর থেকে আমাদের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অশ্রুসিক্ত হয়ে চলে যেতে হয়েছিল। তবে অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিরোধ এখনো খুঁজে পাওয়া সম্ভব। সুতরাং জেরুজালেম আমাদের শহর, শুধুমাত্রই আমাদের। এই শহরেই আমাদের প্রথম কিবলা। আল-আকসা আমাদের বিশ্বাসের মসজিদ। এরদোগান এ সময় ফিলিস্তিনিদের প্রতি আবারও সমর্থন জানিয়ে বলেন, প্রতি ক্ষেত্রে নিপীড়িত ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারে মত প্রকাশের জন্য আমরা আমাদের দেশ ও জাতির পক্ষে সম্মানের বিষয় হিসাবে বিবেচনা করি। অপরদিকে পৃথিবীর মজলুম মুসলিমদের পক্ষে সব সময় সরব তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, আফগানসহ যেখানে মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেখানেই তার ভূমিকা থাকবেই। এবার দাঁড়িয়েছেন আজারবাইজানের পাশে। বিরোধপূর্ণ নাগরনো-কারাবাখ অঞ্চলে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। বৃহস্পতিবার সংঘাতের পঞ্চম দিনেও দুই পক্ষের মধ্যে ভারি গোলাবর্ষণ হয়েছে। আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, দখলকৃত অঞ্চলে আর্মেনীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে রাতভর গোলাবর্ষণ চালিয়েছে তারা। প‚র্ব ইউরোপে দক্ষিণ ককেশাসের নাগরনো-কারাবাখকে কেন্দ্র করে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে কয়েকদিন ধরে তীব্র লড়াই চলছে। এই অঞ্চল নিয়ে দুটো দেশের মধ্যে এর আগেও থেকে থেকে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, সামরিক সঙ্ঘাতও হয়েছে, কিন্তু সেগুলো সবই ছিল সীমিত পরিসরে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের এই দুটো দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে শুরু হওয়া এবারের যুদ্ধ আগের সঙ্ঘাতগুলোর তুলনায় ভিন্ন। বর্তমান সংঘর্ষের মাত্রা, ধরণ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতিক্রিয়া- এসব কিছুই ওই অঞ্চলের সাম্প্রতিক কালের সব উত্তেজনাকে ছাড়িয়ে গেছে। এদিকে দেশ দুটির মধ্যে সঙ্ঘাতে আজারবাইজানের পাশে দাঁড়িয়েছে তুরস্ক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। তিন দেশই মনে করে আজারবাইজানের ভূখন্ডে আর্মেনীয় দখলদারিত্ব বন্ধ করতে হবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আজারবাইজানকে জোরালো সমর্থন দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। বৃহস্পতিবারও প্রেসিডেন্ট এরদোগান দেশটির প্রতি তার জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যাক্ত করেছেন। তিনি বলেন, নাগার্নো কারাবাখ নিয়ে আর্মেনিয়ার সাথে চলমান যুদ্ধে আজারবাইজানের প্রতি সর্বশক্তি নিয়ে সমর্থন অব্যাহত রাখবে তুরস্ক। বৃহস্পতিবার রাজধানী আঙ্করায় তুরস্কের পার্লামেন্টের ১৪তম অধিবেশনের সূচনা বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। তিনি আরো বলেন,‘আমরা যেকোনো মূল্যে সর্বশক্তি দিয়ে আজারবাইজানি ভাইদের প্রতি হৃদয় থেকে আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবো। আমরা ‘‘এক জাতি, দুই রাষ্ট্র’’ নীতির ওপর ভিত্তি করে আজারবাইজানের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবো।’ প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, আর্মেনীয়া কর্তৃক কারাবাখ দখলের মাধ্যমে এ অঞ্চলে যে সংকট শুরু হয়েছিল অবশ্যই তার অবসান ঘটাতে হবে। তিনি আরো বলেন, আর্মেনীয়াকে অবশ্যই অবিলম্বে আজারবাইজানের ভূখন্ড ছাড়তে হবে। একমাত্র এর মাধ্যমেই এ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আল-জাজিরা, ইয়েনি শাফাক।
২৭ নেতার কাছে চিঠি
ইইউ নেতারা তুরস্কের সাথে সম্পর্কের অবনতি চান না। ভূমধ্যসাগরে গ্রিসের সাথে তুরস্কের বিরোধে সাইপ্রাসের পক্ষে ইইউ অবস্থান নিলেও আঙ্কারার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে দোদুল্যমান। ইউরোপীয় নেতারা ইইউ-তুরস্ক সম্পর্কে ভারসাম্য বজায় রাখতে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। গত বুধবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ইউরোপের ২৭ দেশের নেতার প্রতি এক চিঠিতে লিখেছেন, আমি আবারো কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই গ্রিসের সাথে সংলাপে বসার প্রস্তুতির কথা গুরুত্বের সাথে জানাতে চাই। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের এই নতুন পরীক্ষায় ইইউ নিরপেক্ষ থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। আল-জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন