প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার পর গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে ওয়ালটনের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরুর পর একে একে ৮ কার্যদিবসে পা দিয়েছে। এই আটদিনেই ওয়ালটনের শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে হল্টেড হয়েছে।
দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এর আগে কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়ে লেনদেনের প্রথম আট কার্যদিবস টানা হল্টেড হয়নি। আইপিওতে সীমিতসংখ্যক শেয়ার ছাড়ার কারণে ওয়ালটনের শেয়ার দাম এমন বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, ওয়ালটন আইপিওতে এক শতাংশের কম শেয়ার ছেড়েছে। অন্যদিকে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বাজারে শেয়ারের এক ধরনের সংকট দেখা দেয়ায় টানা দাম বেড়ছে।
ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের খরচ মেটাতে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য গত ৭ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে বিডিংয়ে অংশ নেয়ার অনুমোদন দেয়।
এ অনুমোদনের ফলে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণে গত ২ মার্চ বিকাল ৫টা থেকে ৫ মার্চ বিকাল ৫টা পর্যন্ত যোগ্য বিনিয়োগকারীরা বিডিংয়ে অংশ নেন। এ সময়ের মধ্যে বিডিংয়ে অংশ নেন ২৩৩ জন। এসব বিনিয়োগকারীরা সর্বনিম্ন ১২ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৬৫ টাকা করে ওয়ালেটনের শেয়ার কেনার জন্য প্রস্তাব দেন।
এর মধ্যে সব থেকে বেশি সংখ্যক যোগ্য বিনিয়োগকারী ওয়ালটনের প্রতিটি শেয়ারের জন্য ২১০ টাকা দাম প্রস্তাব করেন। এ দামে ১৪ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক বিনিয়োগকারী দাম প্রস্তাব করেন ১৫০ টাকা করে। এ দামে ১০ বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার কেনার আগ্রহ দেখান।
তবে বিডিংয়ে বরাদ্দকৃত ৬০ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ারের জন্য ৩১৫ টাকার ওপরে বিডিং হয়। ফলে কাট-অফ প্রাইস হিসাবে ৩১৫ টাকা নির্ধারিত হয়। এর ওপর ভিত্তি করে কোম্পানিটি ১৫ লাখ ৪৮ হাজার ৯৭৬টি সাধারণ শেয়ার ২৫২ টাকা মূল্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীর (অনিবাসী বাংলাদেশিসহ) নিকট বিক্রি করে।
এই সীমিতসংখ্যক শেয়ার নিয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় ওয়ালটনের শেয়ার। প্রথম দিনেই কোম্পানিটির শেয়ার দাম বাড়ে ৫০ শতাংশ। দ্বিতীয় দিনেও শেয়ার দাম বাড়ে ৫০ শতাংশ।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, লেনদেনের প্রথম দু'দিন কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ওয়ালটনের শেয়ার প্রথম দুই দিনেই দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সেই সীমা স্পর্শ করে।
এরপর থেকে ডিএসই থেকে ওয়ালটনের শেয়ার দাম বাড়া বা কমার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া হয় সাড়ে ৭ শতাংশ। এ নিয়মেই ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ওয়ালটনের শেয়ার লেনদেন হচ্ছে।
প্রথম দুই কার্যদিবসের মতো ২৭ সেপ্টেম্বরও লেনদেন শুরু হতেই ওয়ালটনের শেয়ার দাম সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে। দাম বাড়ার এ প্রবণতা চলে গত সপ্তাহের প্রতিটি কার্যদিবসে।
চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারও তা অব্যাহত রয়েছে। আজ প্রথমে ৮৫১ টাকা ৫০ পয়সা করে ২৫০টি শেয়ার কেনার প্রস্তাব আসে। তবে লেনদেন শুরু হয় ৮৭৪ টাকা ৮০ পয়সা করে, তা দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা।
এ দামেও বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী তাদের কাছে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে ক্রেতা থাকলেও লেনদেন শুরুর আধাঘণ্টার মধ্যে ওয়ালটনের শেয়ারের বিক্রেতা নাই হয়ে গেছে।
দফায় দফায় কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দাম বাড়ার বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এক পরিচালক বলেন, বাজারে ওয়ালটনের এক শতাংশ শেয়ারও নেই। এতো কম শেয়ার থাকলে এমন পরিস্থিতি তো হবেই। তিনি বলেন, ওয়ালটন থেকে নীতি নির্ধারকদের শিক্ষা নেয়া উচিত। আর কোনো কোম্পানি যাতে এতো কম শেয়ার ছাড়তে না পারে তার ব্যবস্থা করা উচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন