নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় এক নারীকে (৩৬) বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফুসে উঠছেন নেট দুনিয়ার বাসিন্দারা। দেশের ইতিহাসে নারীর প্রতি জঘন্যতম এই নির্যাতনের ঘটনা ব্যাপক ক্ষোভ জন্ম দিয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে। ক্ষোভ নিন্দা আর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালানোর এক মাস পর ওই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রোববার পুলিশ একজনকে আটক এবং ৩৫ বছর বয়সী এই নারীকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়েছে। আটক আব্দুর রহিম (২৭) বেগমগঞ্জ উপজেলার পূর্ব একলাশপুর গ্রামের হাড়িধন বাড়ির বাসিন্দা।
উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে অনৈতিক কাজের অপবাদ দিয়ে ওই নারীকে সমস্ত শরীর বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনকারীদের বারবার বাবা ডেকেও শেষ রক্ষা হয়নি ওই নারীর।
নারকীয় এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের ঘটনার ভিডিও দেখার পর আমার বোধ বুদ্ধি বিবেক সবকিছু অবশ হয়ে গেছে। মানুষ হিসেবে নিজেকে ধিক্কার দিয়েও সান্তনা পাচ্ছিনা। এটা সর্বকালের সমস্ত নারকীয়তা ছাড়িয়ে গেছে। এই সন্ত্রাসীদের কঠোর শাস্তি না হলে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অর্থহীন!!!’’
ইস্রাফিল চৌধুরী লিখেছেন, ‘‘আজ নিজেকে বেগমগঞ্জবাসী বলতে লজ্জা হচ্ছে। এ কেমন বর্বরতা? মানুষ হিসেবে আজ আমাদের এত অধঃপতন।
লোমহর্ষক এই নির্যাতন আজ নোয়াখালীকে কে কলঙ্কিত করল। আমরা নোয়াখালীবাসী আইনের মাধ্যমে অতি শীঘ্রই সুষ্ঠু বিচার চাই যাতে এমন ঘটনা আর দ্বিতীয়বার না ঘটে।দেশে নারী প্রধানমন্ত্রী হয়েও নারীর প্রতি এমন অমানবিক আচরণ আর সহ্য করা যাচ্ছে না। বিচার ব্যবস্থায় সরকারের অবস্থান অতি দুর্বল। দেশের নাগরিক হিসাবে সরকার থেকে এটা মোটেও কাম্য নয়। সরকারকে আরও কঠোর থেকে কঠোরতম হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’’
জুয়েল রানা লিখেছেন, ‘‘এমন ঘৃণ্য অপরাধের নিন্দা এবং তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আশা করি। সেই সাথে যারা এই ঘটনায় ভিকটিম তাদের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি এবং তারা যাতে ন্যায় বিচার পায় সে আশাবাদ ব্যক্ত করছে। আসুন আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে সকল অপরাধির পরিচয় উন্মোচন করে তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে সাহায্য করি।’’
আহমেদ পাবেল লিখেছেন, ‘‘আইন-শৃংখলা বাহিনীর প্রতি আকুল আহ্বান আপনারা দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন যাতে প্রিয় মাতৃভূমির মা-বোনেরা নিরাপত্তার সাথে জীবন যাপন করতে পারে আর কোন বাহিনীর নাম শুনতে চাই না সব চুরমার করে দেখিয়ে দেন অপরাধীদের স্থান বাংলার মাটিতে হতে পারে না।’’
নিশাত তাসনিম লিখেছেন, ‘‘আমি স্বাভাবিক হতে পারি নি অনেক্ষণ। মানসিক অসুস্থ লাগছিল নিজেকে। জানি না আরো কতো ঘটনা ঘটে আমাদের অগোচরে। এরকম ঘটনা ঘটার আল্লাহ তালা যেন আগে মৃত্যু দেন।’’
সানজিদা নিলিমা লিখেছেন, ‘‘এমন ঘটনার পরও যদি এই ধর্ষকদের শাস্তি না হয়, কোন বিচার না হয় তাহলে অপেক্ষা করুন, আমাদের সামনের দিন আরও অনেক বেশী ভয়ঙ্কর। শুধু এতটুকুই বললাম।’’
তানিয়া হায়দার তন্নি লিখেছেন, ‘‘এইদেশে ৫০ বছর আগের যুদ্ধপরাধীর বিচার হয় কিন্তু ধর্ষণের বিচার হয়না,,,আমরা কি সত্যি স্বাধীন দেশে বাস করি,,আমি লজ্জিত আমি নারী,,আমি লজ্জিত আমার জন্ম বাংলাদেশে যে দেশে ধর্ষণের বিচার হয় না,,,,আচ্ছা বিচার কি সেদিনও হবে না যেদিন মন্ত্রী, নেতাদের ঘরের মা/বোন/বউ/মেয়ে ধর্ষিত হবে।’’
অ্যাডভোকেট আমিনুর লিখেছেন, ‘‘গভীর চিন্তার বিষয়। হঠাৎ করেই এই জঘন্য অপরাধ বেড়ে গেলো কেন? তার অবশ্যই কোন না কোন কারণ আছে। সমাজে কি এক দিনেই এই ধ্বস নেমেছে? এর পেছনের কারণ গুলো খুজে বের করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বিচার করে, সাজা দিয়ে কিংবা ক্রসফায়ার করে কি অপরাধ কমানো যায়! আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের মূল কারণ গুলো চিহ্নিত করতে হবে। চিহ্নিত করে এর প্রতিষেধকের ব্যাবস্থা করতে হবে।’’
স্বর্ণা লিখেছেন, ‘‘আল্লাহ এদের উপর যতদ্রুত সম্ভব গজব দান করো। আমি তো ভিডিওটা দেখিনাই বাট এই লেখা টা পড়ে অবশ হয়ে গেছি। আল্লাহ যদিও পাপের শাস্তি সাথে সাথে দেয়না, কিন্তু এসব ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক সাজা দাও আল্লাহ।’’
গত ২ সেপ্টেম্বর উপজেলার একলাশপুর ইউপির খালপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই গৃহবধূকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ভয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ বিষয়টি কাউকে জানাননি। তাই ঘটনার ৩২ দিন পার হলেও এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ করতে পারেননি তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন