শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

বগুড়ায় সেইফ জোনে হাজার কোটি টাকার চোরাই পণ্যের ব্যবসা

প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : বগুড়া তথা উত্তরাঞ্চলের অন্যতম দু’টি ঐতিহাসিক কাঁচামালের আড়ত যথাক্রমে ‘রাজা বাজার’ ও ‘ফতেহ আলী বাজার’ নামের দু’টি আড়ত সংলগ্ন ‘চুড়িপট্টি’ এখন অবৈধ ভারতীয় চোরাই পণ্যের আড়তে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় আইন-শৃংখলা বাহিনীর এক শ্রেণীর অসাধু কর্তাদের ম্যানেজ করে গুটি কয়েক পশ্চিমা মাড়োয়াড়ী, অবাঙ্গালী বিহারী আঙ্গুল ফুলে বটগাছ হলেও প্রকৃত ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে ব্যাংক ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই ও অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, বগুড়ার রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার ও চুড়িপট্টি এলাকায় আদিকাল থেকেই যারা প্রতিষ্ঠিত আমদানীকারক ও আড়তদার হিসেবে ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ভারত ও চীন থেকে পিঁয়াজ, রসুন, আদা, জিরাসহ সব ধরনের গরম মশল্লা ও অন্যান্য আইটেম আমদানী করে থাকেন। ’৯০-এর পর থেকে এক শ্রেণীর চোরাকারবারী সব ধরনের ভারতীয় গরম মশল্লার পাশাপাশি বিভিন্ন ক্রোকারিজ, ইমিটেশন গহনা, কৌটাজাত বিয়ার, কয়েক ধরনের মদ, পটকা ও ককটেল তৈরীর বারুদ, ইন্ডিয়ান পটকা ও মাঝে মাঝে ক্ষুদ্রকায় আগ্নেয়াস্ত্র আমদানী করে আসছে। এই সব চোরাকারবারীদের কোন ইমপোর্ট লাইসেন্স লাগে না, ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয় না, খুলতে হয়না এলসি। শুধু বগুড়া-কোলকাতা-বোম্বে কেন্দ্রিক মাফিয়াদের সাথে যোগাযোগ এবং স্থানীয় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী অসাধু কর্তাদের সাথে দফারফা, রাজনৈতিক মাস্তান ও কিছু মিডিয়ার লোককে মাসোহারা দিলেই চলে। রাতারাতি কোটিপতি হতে খুব একটা সময় লাগেনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজাবাজার, ফতেহ আলী বাজার ও চুড়িপট্টির ১৫ জন চোরাকারবারীর নেতৃত্বে বছরে এখানে অন্তত হাজার কোটি টাকার চোরাই পণ্যের কেনা বেচা হয়ে থাকে। বগুড়ার ডজন খানেক সুদের কারবারী এই চোরাই পণ্যের হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের কাজটা করে থাকে। লিয়াকত আলী নামের একজন অবাঙ্গালী এবং বৈরাগী নামে পরিচিত এক পশ্চিমা মাড়োয়াড়ী চোরাকারবারীদের পক্ষ থেকে ‘বিটমানি’ তুলে তা’ মাসে মাসে জায়গামতো পৌঁছানোর কাজ সম্পন্ন করে। অপরদিকে এই বাজারের দু’জন হাজী সাহেব কোটি কোটি টাকার বৈধ পণ্য আমদানীর আড়ালে অর্থাৎ কাঁচামাল ভরা ট্রাকের ভিতরে আগ্নেয়াস্ত্র, ফেন্সিডিল এনে বগুড়া থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিয়ে থাকে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। এরা বগুড়ার ক্ষমতাসীন দলের একাধিক উচ্চ পর্যায়ের নেতাকে হাত করে তাদের অবৈধ কর্মকাÐ চালাচ্ছে।
অন্তত ৫০ জন মহিলা নিয়মিত হিলি-বুড়িমারি-বাংলাবান্ধা-সোনামসজিদ বর্ডার থেকে বগুড়ায় ওই তিন বাজারের নির্দিষ্ট পয়েন্টে অবৈধ চোরাই পণ্য আনা নেয়ার পেশায় নিয়োজিত রয়েছে বলেও জানা গেছে। এই মহিলাদের সম্পর্কে পূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য প্রশাসনের কাছে থাকলেও তাদেরকে কখনই টাচ্ করেনা।
মোট কথা ক্ষমতাসীন দলের উঁচু স্তর, প্রশাসনের সাথে দহরমহরমের কারণে বাজার ৩টি এখন চোরাচালানের ‘সেইফ জোন’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন