শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

আরবে ফরাসি পণ্য বর্জন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ফ্রান্সের স্কুলে মহানবী মুহাম্মাদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র দেখানোর প্রতিবাদে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে আরব সংস্থাগুলি। শুধু তাই নয়, কুয়েত ও সউদী আরবের শপিং মলগুলোর তাক থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে ফ্রান্সের খাবার। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে এ মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং ‘বয়কট ফ্রেঞ্চ ফুড’।
এদিকে আরব দেশগুলোর প্রতি ফরাসি পণ্য বর্জন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে ফ্রান্স। রোববার ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ফরাসি পণ্য, বিশেষত খাদ্যপণ্য বয়কটের আহ্বান জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রকাশের বিষয়ে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হয়েছে। বয়কটের এসব আহ্বান ভিত্তিহীন। অবিলম্বে এসব বন্ধ হওয়া উচিত। একটি উগ্র সংখ্যালঘু গোষ্ঠী আমাদের দেশের বিরুদ্ধে যেসব হামলা চালিয়ে যাচ্ছে; তা বন্ধ হওয়া উচিত।
উল্লেখ্য, মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের জেরে এক মুসলিম উগ্রবাদী কর্তৃক একজন ইতিহাস শিক্ষককে হত্যার পর থেকেই উত্তপ্ত ফ্রান্স। ওই ঘটনার পর অন্তত ৫০টি মসজিদ ও মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় ভয়াবহ অভিযান চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। মহানবী (সা.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। তার এ ঘোষণায় মুসলিম বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। ইসলামের প্রতি এমন মানসিকতার জন্য ম্যাখোঁর মানসিক চিকিৎসা দরকার বলে মন্তব্য করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। মুসলিম দেশগুলোতে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়।
বিভিন্ন দেশে জনগণকে ফরাসি পণ্য চিহ্নিত করার উপায় বাতলে দিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরা। বর্জনের ডাকে সাড়া দিয়ে ইতোমধ্যেই কাতার ও কুয়েতের বিভিন্ন মার্কেটের সেলফ থেকে ফরাসি পণ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফরাসি পণ্য বর্জনের দাবিতে টুইটার হ্যাশট্যাগ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সউদী আরবসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও। এমন পরিস্থিতিতে রোববার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে ফরাসি পণ্য বর্জন বন্ধের আহ্বান জানালো ফ্রান্স।
বিবিসি জানায়, কুয়েত, জর্ডান এবং কাতারের কিছু কিছু দোকান থেকে ফরাসি পণ্য সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া লিবিয়া, সিরিয়া এবং গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভও দেখা গিয়েছে। তুরস্ক এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা ম্যাএখাঁর প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে অভিযোগ তুলেছেন যে তিনি ্রবিশ্বাসের স্বাধীনতাগ্ধ কে কদর করছেন না এবং ফ্রান্সের লাখ লাখ মুসলিমদের কোণঠাসা করছেন।
রোববার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যব এরদােগান বলেন, ইসলামের প্রতি মি. ম্যাএখাঁর দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে তার মানসিক চিকিৎসা করানো দরকার। শনিবার একই মন্তব্যের জন্য তুরস্কে থাকা ফরাসি রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল দেশটি।
বয়কট কতদূর গড়িয়েছে?
রোববার জর্ডান, কাতার ও কুয়েতের অনেক দোকানের তাক থেকে সরিয়ে নেয়া হয় ফরাসি পণ্য। ফ্রান্সে তৈরি হওয়া চুল এবং সৌন্দর্য পণ্য ডিসপ্লে-তে রাখা হয়নি। কুয়েতে প্রধান একটি রিটেইল ইউনিয়ন ফরাসি পণ্য বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। বেসরকারি ইউনিয়ন অব কনজ্যুমার কো-অপারেটিভ সোসাইটি বলে, মহানবী (স.)-কে ‘বার বার অসম্মান’ করার কারণে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিভিন্ন আরব দেশ যেমন সউদী আরবে অনলাইনে এ ধরণের বয়কটের আহ্বান জানানো হচ্ছে। আরব বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ সউদী আরবে ফরাসি সুপারমার্কেট চেইন শপ ‘ক্যাফৌউ’ বয়কট করা নিয়ে হ্যাশট্যাগ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ট্রেন্ডিং ইস্যু হিসেবে উঠে এসেছে। এদিকে, লিবিয়া, গাজা এবং উত্তর সিরিয়ার তুরস্ক সমর্থিত সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ফরাসি বিরোধী ছোট ছোট বিক্ষোভও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ফ্রান্স কিভাবে এই বিতর্কে জড়ালো?
মি. পাটির হত্যার পর ইসলামের নামে উগ্রতার বিপক্ষে এবং ফরাসি ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে মি. ম্যাএখাঁর অবস্থান মুসলিম বিশ্বের অনেকেরই ক্ষোভের কারণ হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট জনাব এরদোগান এক বক্তব্যে বলেন: ইসলাম এবং মুসলিমদের নিয়ে ম্যাখোঁর মতো ব্যক্তিদের কী সমস্যা? এর মধ্যে পাকিস্তানের নেতা ইমরান খান ফরাসি নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন যে তিনি কোন কিছু না বুঝেই তিনি ইসলামকে আক্রমণ করছেন।
এক টুইটে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁ ইউরোপ এবং পুরো বিশ্বে থাকা মুসলিমদের অনুভ‚তিকে আঘাত করেছেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে, ওই শিক্ষকের হত্যার আগেই মি. ম্যাখোঁ ফ্রান্সে ‘মুসলিম বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ রুখতে কঠোর আইন তৈরির পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তিনি ইসলামকে ‘সংকটে’ থাকা ধর্ম উল্লেখ করে বলেন, ফ্রান্সের প্রায় ৬০ লাখ মুসলিম ‘কাউন্টার সোসাইটি’ তৈরির চিন্তা করছে। ফ্রান্সে ইসলামের নবীর প্রতিকৃতি আঁকার অন্ধকার রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে।
২০১৫ সালে তার কার্টুন প্রকাশের পর ফরাসি ব্যঙ্গ-পত্রিকা শার্লি এবদোর ১২ জন এক হামলার মারা গিয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপের মুসলিম স¤প্রদায় মি. ম্যাখোঁর বিরুদ্ধে তাদের ধর্মকে দাবিয়ে রাখার অপচেষ্টা এবং তার এই প্রচারণা ইসলামোফোবিয়াকে বৈধতা দেয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে বলে অভিযোগ করেন। সূত্র : আল-জাজিরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Mojibur Rahman ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 1
আমার কাছে ফান্সের কোনো পণ্য নেই, আছে এক বুক ঘৃণা ❗ এই ঘৃণা টুকু তাদের জন্য, যারা প্রিয় রাসূল (সাঃ) কে অবমাননা করে সারা জাহানের মুসলমানদের কলিজায় আঘাত করেছে❗ আল্লাহ্ আপনি আপনার প্রিয় রাসূলের অবমাননা কারিদের সঠিক বিচার প্রদান করুন, আমীন ||
Total Reply(0)
Jannatul Minal ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:০৫ এএম says : 1
ফ্রান্সের পণ্য অবশ্যই বয়কট করা উচিত, তার সাথে আমাদের দেশে কিছু কিছু নাস্তিক আছে তাদেরকেও বয়কট করা উচিত,
Total Reply(0)
সপ্ন বালক মিজান ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:০৬ এএম says : 1
আমরা ব্যাক্তিগত ভাবে যে কোনো রাজনীতিক দলকে সমর্থন করতে পারি কিন্তু সবার আগে আমার পরিচয় আমি মুসলিম।আর সকল মুসলিমদের কলিজার টুকরা,আখেরি জামানার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ট নবী মোহাম্মদ (সঃ) সেই নবীর অপমানের প্রতিবাদে যদি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে হয়,তবে আল্লাহর কসম!হাসতে হাসতে বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত আছি,ইনশাআল্লাহ্!সকল মুসলিম ভাইয়েরা সবাই প্রস্তুত আছেন তো!
Total Reply(0)
Rubel Hossain Sohag ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:০৬ এএম says : 1
মুসলমানদের কলিজায় আঘাত করছে ম্যাক্রোঁর ম্যাক্রোঁর গর্দান নিয়ে নেওয়া উচিত বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা) কে যারাই অপমান করতে চেয়েছে তারাই ধ্বংস হয়েছে।ফ্রান্স, আল্লাহর গজবের অপেক্ষায় থাকো। আল্লাহ্ সবচেয়ে বড় পরিকল্পনা কারি।
Total Reply(0)
Mosiur Rahman ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:০৬ এএম says : 1
পৃথিবীর সব মুসলিমদের এক হওয়া খুবই জরুরী, এবং ইসলাম নিয়ে যারা খারাপ মন্তব্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া
Total Reply(0)
Rayhan Jojo ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:০৭ এএম says : 1
ফ্রান্সের সকল পণ্য সহ সকল প্রকার বানিজ্যিক পণ্য রপ্তানি বয়কট করুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে অনুরোধ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এর নিন্দা জানানো হোক।
Total Reply(0)
Abdur Rokib ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:০৭ এএম says : 1
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের গালে গালে জুতা মারো তালে তালে প্রেসিডেন্ট এর দুই গালে জুতা মারো তালে তালে
Total Reply(0)
Md Sharif Ahmed Abir ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ২:০৮ এএম says : 1
এর মাশুল কিভাবে দিবে ফ্রান্স সরকার এখনও বুঝে উঠতে পারে নি,,
Total Reply(0)
md anwar ali ২৭ অক্টোবর, ২০২০, ৮:৩৬ এএম says : 1
সারা বিশ্বের মুসলমানদেরে এক হওয়া দরকার।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন