ভেজালমুক্ত, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দেশে কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে শুরু হওয়া বিশেষ ক্যাম্পেইনে বেশ সাড়া পড়েছে। এখন পর্যন্ত দেশের ৮টি বিভাগে প্রায় ১০ লাখ স্কুল শিক্ষার্থী অনলাইন প্লাটফর্মে নিবন্ধন করে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণের অঙ্গিকার করেছে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমফ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) এর আয়োজনে ‘ভালো খাবো, ভালো থাকবো’ এই স্বপ্নপূরণের লক্ষ্য নিয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ক্যাম্পেইনটি শুরু হয়। দেশে করোন পরিস্থিতির আগ পর্যন্ত এতে প্রায় ৩ হাজার স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। ওই সময়ে স্কুলগুলোতে শিক্ষকরা কিশোর-কিশোরীদেরকে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে উৎসাহিত ও সচেতন করেন। ক্যাম্পেইনে শপথ গ্রহণের পাশাপাশি ভিডিও প্রদর্শনী, রচনা ও পোস্টার প্রতিযোগিতা এবং কিশোর-কিশোরীদের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হয়।
এই বছরের মার্চ মাসে করোনা পরিস্থিতির কারণে ক্যাম্পেইনে অনলাইন প্লাটফর্ম ও সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। করোনা পরিস্থিতিতে কিশোর-কিশোরীদের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধে কি খাওয়া উচিত তা সোশ্যাল মিডিয়াতে তুলে ধরা হয়। প্রচার করা হয় বিশেষ কার্টুন সিরিজ। পাশাপাশি ‘ভালো খাবো, ভালো থাকবো’ এই ফেইস বুক পেইজে স্ট্যাটাস দেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্তুজা এমপি। স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘প্রতিটি শপথ শিশুদেরকে নিরাপদ খাবারে উৎসাহিত করবে।’ এছাড়া বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে অংশ নেন তরুণ উদ্যোক্তা আইমন সাদিক, ফুড ব্লগার ইফতেখার রাফসান ও তারকা ফুটবলার জামাল ভূঁইয়া।
আয়োজকরা জানান, কিশোর-কিশোরীদের এই ভালো খাবার গ্রহণে দেশে পুষ্টির উন্নয়নে একটা বড় পরিবর্তন আনতে পারবে। কারণ ভালো ও পুষ্টিকর খাবার খেলে শরীর সুস্থ থাকে। আর শরীর ঠিক থাকলে মনও ভালো থাকে। শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকলে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যত স্বপ্নপূরণে অনেকটা এগিয়ে যায়।
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমফ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন)- বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. রুদাবা খন্দকার বলেন, কিশোর-কিশোরীদের নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে এই ক্যাম্পেইন শুরু হয়। এই সময় পর্যন্ত ১০ লাখ শিক্ষার্থী নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণে শপথ গ্রহণ করে। এই স্বল্প সময়ে এটা আমাদের একটা বড় অর্জন। আর এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে কার্যক্রম পরিচালনার কারণে। এই সাফল্য অব্যাহত রাখতে আমি আমাদের অংশীদার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের কিশোরী-কিশোরীদের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে পুষ্টিকর ও নিরাপদ খাবার সরবরাহ বাড়ানোর আহবান জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, স্টেট অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন বাংলাদেশ, ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী- বাংলাদেশে ১০-১৮ বছরের কিশোরীদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ অপুষ্টির শিকার। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে-২০১৪ এর তথ্য অনুযায়ী ১৫ থেকে ১৯ বছরের বিবাহিত কিশোরীদের ৩১ শতাংশ অপুষ্টিতে ভূগছে। এইরকম প্রেক্ষাপটে পুষ্টিকর, ভেজালমুক্ত, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দেশে কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে এই ব্যতিক্রমী ক্যাম্পেইন শুরু হয়। যা এখনও অব্যাহত আছে। এই ক্যাম্পেইনে আর্থিক পৃষ্টপোষকতা করেছে নেদারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন