রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

সেমিতে উঠে যুবাদের ইতিহাস

প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৬ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

শামীম চৌধুরী : শেষ ১২ বলে প্রয়োজন যখন মাত্র ৭ রান, তখন ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সবাই। খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। দিপেন্দ্র আইরিকে লং অনের উপর দিয়ে জাকিরের ছক্কার সঙ্গে সঙ্গে বাউন্ডারি রোপ থেকে এক দল ক্রিকেটারের সে কি দৌড়! মাঠেই ল্যাপ অব অনার। নেপাল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে ১০ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে জয়ে নতুন ইতিহাস রচনায় এমন উৎসবটাই যে কাম্য ছিল সবার। সাকিব, মুশফিক, তামীম, রকিবুলদের মতো সময়ের সেরাদের নিয়ে ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের বাধা পেরুতে পারেননি অধিনায়ক মেহরাব জুনিয়র। পরের আসরে সোহরাওয়ার্দী শুভদেরও ট্র্যাজেডির নাম কোয়ার্টার ফাইনাল। ২০১২ সালে এনামুল বিজয়রাও পেরুতে পারেননি কোয়ার্টার ফাইনালের বাধা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে নিজেদের দশম আসরে এসে সে আক্ষেপের অবসান হলো। এই প্রথম সেমিফাইনালে উঠে নতুন ইতিহাস রচিত করলো মেহেদী হাসান মিরাজরা। শিরোপা থেকে এখন ২ ধাপ দূরে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারী ফতুল্লায় পাকিস্তান-উইন্ডিজের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের বিজয়ী দলকে ১১ ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয় সেমিফাইনালে পাবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
তবে কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ নেপালকে হারিয়ে নতুন ইতিহাস রচনার ম্যাচটি কিন্তু সহজ ছিল না। গ্রুপ রাউন্ডের তিনটি ম্যাচের সব ক’টিতে সহজে জিতলেও নেপালের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়তে হয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে। তারপরও আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশের সঙ্গে পূর্ণ সদস্য দেশের পার্থক্যটা এই ম্যাচে বুঝিয়ে দিতে পেরেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। চাপের মুখে জয়ে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল শ্লগেই পার্থক্য তৈরি করেছে। কি ব্যাটিং, কি বোলিংÑম্যাচে ২ দলের প্রথম ৪০ ওভারে এগিয়ে ছিল নেপাল। সেখান থেকে নেপালকে টেনে নামিয়েছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল শ্লগে। শেষ ১০ ওভারে নেপালকে ৫০’র বেশি যোগ করতে দেয়নি মিজানুর রহমান বাবুলের শিষ্যরা। নিজেদের শেষ ১০ ওভারে জয়ের জন্য ৬৮ রানের টার্গেট পাড়ি দিতেও বেগ পেতে হয়নি জাকির-মিরাজকে।
বয়স বিতর্ক নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নেপাল অধিনায়ক রাজু রিজাল। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বোলারদের ফেলে দিয়েছিলেন পরীক্ষায়। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের প্রধান শক্তি স্পিন এদিন নির্বিষ করে ছেড়েছে নেপাল যুবারা এদিন। অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের দ্বিতীয় ওভারে ডাউন দ্য উইকেটে রাজু রিজালের ছক্কায় দুর্ভাবনার আলামতই ছিল। ৩৭ রানের মাথায় অবধারিত রান আউট থেকে গেছেন বেঁচেন, ৪৪ রানের মাথায় কট বিহাইন্ডে তাকে পরিণত করতে পারেনি জাকির। বয়স বিতর্ক যাকে এই ম্যাচে চাপে ফেলবে বলে ধরে নিয়েছিলেন যারা, চলমান অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেই রিজালই কি না প্রথম ফিফটি করেছেন উদযাপন (৮০ বলে ৮ চার ১ ছক্কায় ৭২)। পয়েন্ট থেকে শান্ত’র মাপা থ্রো-তে রান আউটে নেপাল মিডল অর্ডারের রান আউটে কাঁটা পড়ায় ম্যাচে ফিরতে পেরেছে বাংলাদেশ যুবারা। এই ম্যাচে পেস বোলার সাইফউদ্দিন (২/৩৮) ছাড়া কারো বোলিং মেটাতে পারেনি প্রত্যাশা। তবে ফিল্ডিংটা করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল অসাধারণ, চার চারটি রান আউট, ডিপ মিড উইকেটে জয়রাজ শেখের ডাইভিং ক্যাচÑএক কথায় অসাধারণ। এমন ফিল্ডিংয়েই ২১১/৯-এ নেপাল অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে আটকে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ যুবারা।
গ্রুপ রাউন্ডেএকটার পর একটা জয়ে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ছিল না তেমন অবদান। কোয়ার্টার ফাইনালেও ব্যতিক্রম হয়নি তার। শুরুতে রানের জন্য ধুঁকতে হয়েছে এই ম্যাচেও। বাধ্যতামূলক পাওয়ার প্লে’র প্রথম ১০ ওভারে অহেতুক দলকে চাপে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ টপ অর্ডাররা (২১/০)। স্পিন দিয়ে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গে লড়ার হুংকার দিয়ে সে চেষ্টা ভালই করেছে নেপাল যুবারা। অফ স্পিনার ধামালকে ফ্রন্ট ফুটে খেলতে যেয়ে সাইফের এলবিডাব্লুতে কাঁটা পড়ার (৫) পর জয়রাজ-পিনাকের ৪৬ রানের জুটিটা ভেঙেছে নেপাল অনূর্ধ্ব-১৯ দল এই দুই টপ অর্ডারের রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে বোঝাপড়ার সমস্যায়। কভারে খেলে সিঙ্গলে সšষ্ট থাকার কথা, অথচ পিনাকের ডাবলের কল! আত্মকেন্দ্রিক সিদ্ধান্তে হাফ পিচ থেকে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। এক সঙ্গে ২ ব্যাটসম্যান পপিন ক্রিজে ফিরতে স্প্রিন্ট দিচ্ছেন, এমন দৃশ্যের অবতারণাও হয়েছে। পিনাকের এমন আত্মকেন্দ্রিক সিদ্ধান্তে ২৬ রানের মাথায় রান আউট, তা ক্ষীপ্ত করে তুলেছিল জয়রাজকে। তবে টিভি রিপ্লেতে আত্মকেন্দ্রিক পিনাক ফিরেছেন রান আউটে (৩২), বেঁচে গেছেন জয়রাজ (২৬)। লামিচানের শর্ট বলকে অণ সাইডে পাঞ্চ করতে যেয়ে শান্তর রিটার্ন ক্যাচ (৮), ধামালকে পুল করতে যেয়ে জয়রাজের এলবিডাব্লু (৩৮) বিপদের আলামত ছিল। ১৩১ বলে১১৪ রানকে তখন দুরূহই মনে হচ্ছিল। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেছেন ৫ম জুটিতে জাকির-মিরাজ জুটি। শুরু থেকে রানের চাকা সচল রাখতে সিঙ্গল, ডাবলসকে গুরুত্ব দিয়ে চলমান অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে প্রথম ফিফটি উদযাপন করেছেন জাকির। ৬৭ বলে ফিফটি উদযাপন করে শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন ছিলেন তিনি ৭৫এ (৭৭ বলে ৫ চার ১ ছক্কা)। এমন আদর্শ ব্যাটিং পার্টনার পেয়ে চলমান আসরে নিজের দ্বিতীয় এবং অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে ১০ম ফিফটি উদযাপন করেছেন অধিনায়ক মিরাজ। সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিতে হয় কিভাবে, সেটাই জানিয়ে দিয়েছেন মিরাজ (৬৫ বলে ৫৫ নট আউট)। ভাগ্যটাও ছিল তার সঙ্গে। লামিচিনের বলে ২৫ রানে এবং প্রেম তামাঙ্গের বলে ৫৫ রানের মাথায় ২ বার স্ট্যাম্পিংয়ের হাত থেকে বেঁচে গেছেন। ১০৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে নেতৃত্ব দিয়ে প্রকৃতই ক্যাপ্টেনস নক করেছেন তিনি। পার্টনার জাকিরে উদ্বুদ্ধ মিরাজ। শেষ ৪২ বলে ৪৯’র টার্গেটে স্লগের আদর্শ ব্যাটিং প্রদর্শনী করেছেন এই ২ ব্যাটসম্যান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Laboni ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ৩:১৪ পিএম says : 0
Well played boys . Go Ahead
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন