গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে টানা বর্ষণ আর দফায় দফায় বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবজি ও আমন ক্ষেত, নষ্ট হয়েছে ঘাস ও লতা-পাতাসহ সকল তৃণভূমি। ভারি বর্ষণের ফলে পঁচে গেছে শুকনো খর। ফলে চরম সংকট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের। গো-খাদ্যের এমন চরম সংকটে বিপাকে পড়েছেন ছোট বড় সব ধরণের গরু খামারি ও গৃহস্থরা। এবছর বৃষ্টিপাত ও ভারি বর্ষণ ছিল প্রচুর। একের পর এক আঘাত হানে বন্যা। এক দফার বন্যা যেতে না যেতেই শুরু হয় পরবর্তী দফার বন্যা। এভাবেই এ উপজেলায় তৃতীয় দফা বন্যা আর লাগাতার বৃষ্টি অতিষ্ট করে সকলকে। দির্ঘস্থায়ী এমন বন্যায় তলিয়ে যায় উপজেলার নয় ইউনিয়ন। উপজেলা কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্যে, শুধু শেষ দফার বন্যায় নিমজ্জিত হয় এক হাজার ৫”শ হেক্টর জমির রোপা আমন এবং সবজি ৭০ হেক্টর। অপরদিকে উপজেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের দেয়া তথ্যে দীর্ঘসময় পানির নিচে ডুবে থাকে ২৭০ একর গো-চারণভূমি। জলাবদ্ধতায় নষ্ট হয়ে যায় ৫৯ টন কাঁচা ঘাস। যার আনুমানিক দাম হচ্ছে তিন লক্ষ হাজার টাকা। এদিকে টানা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে গো-খাবারের শুকন্য খরের স্তুপ। অতিবৃষ্টিতে নতুন করে খর প্রস্তুত করে রাখাও সম্ভব হয়নি গো-খামারি ও গৃহস্থদের। ফলে খাদ্য সংকটে পড়েছেন উপজেলার এক লাখ ৩৯ হাজার ৬৩০ গরু, ৬২ মহিষ, এক লাখ ১৫ হাজার ৫৬৪ ছাগল ও ৩৪ হাজার ৫৮৪ ভেরা। এসব পশুর মুখে খাবার দেয়া নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মালিকরা। তারা জানায়, বন্যার আগে প্রতি একশ খরের আটির দাম ছিলো তিনশ থেকে সাড়ে তিনশ টাকা। অথচ এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩’শ থেকে ১৪’শ টাকা। এদিকে মাড়াই করা খরের দাম আরও বেশি। বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ খর ১২’শ থেকে ১৩’শ টাকা। তবুও মিলছে না খরের আটি বা মাড়াই করা খর। অপরদিকে দাম বেড়েছে সব ধরণের পশু খাদ্যের। বাধ্য হয়ে গবাদি পশু বাঁচাতে বিলের কচুরিপানা, কচি কলাগাছ, বাঁশের পাতা, কাঁঠালের পাতার উপর ভরসা করছেন পশু মালিকরা। এ অবস্থায় খাদ্য সংকটে থাকা গবাদি পশু মাঝে মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেকে সস্তা দামেই বিক্রি করে দিচ্ছেন তাদের গৃহপালিত পশু। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন পশু পালনকারীরা। কাপাসিয়া ইউনিয়নের মসলিম উদ্দিন জানান, তিনশ টাকার খর তিনি এখন ১৩’শ টাকায় কিনছেন। ঠিক মতো খাবার না পেয়ে তার গরুর চেহারা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই চড়া দামে খর কিনতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। মমিন মিয়া জানান, তিনিও খরের অভাবে কিছুদিন আগে কম দামে গরু বিক্রি করে দিয়েছেন। গরু যে দামে কিনেছেন এক বছর লালন পালন করার পর একই দামে সে গরু বিক্রি করতে হয়েছে তাকে। শ্রীপুর ইউনিয়নের আঃ জলিল মিয়া জানান, টানা বৃষ্টির কারণে তার অনেক খর পচে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে তিনি এবার ৯ হাজার টাকার খর কিনেছেন। অথচ অন্য সময় এসব খরের দাম সর্বচ্চ এক হাজার থেকে এক হাজার ৫’শ টাকা। বেলকা ইউনিয়নের কেরামত আলী বলেন, চরাঞ্চলের সব চারণভূমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ঘাসের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই ধানের কুঁড়ো, খুদের ভাত দিয়ে চলছে তার পাঁচটি মহিষের জীবন। এদিকে খাবারের অভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ছাগল ভেরাগুলোও। এমন অবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদী বন্যা আর টানা বৃষ্টিকেই দায়ী করছেন তারা। গো-খাদ্যের সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ফজলুল করিম জানান, ইতোমধ্যে দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এক হাজার ৪০১ জন খামারির মাঝে ৫ থেকে ১০ কেজি করে দানাদার খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার অর্থায়নে হরিপুর ইউনিয়নের ৯৩১ পরিবারের প্রত্যেকের মাঝে ৭৫ কেজি করে দানাদার খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন