স্পোর্টস ডেস্ক : ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’- নামটির মাহাত্ব্য শুধু নামেই নয়; এর কীর্তিতেও। প্রতিদিনই হচ্ছে রেকর্ড ভাঙা-গড়ার সাথে মন আর স্বপ্ন ভাঙা-গড়ার খেলা। অখ্যাত এক দেশের পতাকাতলে এসে নিজের গড়িমায় কেউ উঠে যাচ্ছেন ইতিহাসের পাতায় আবার কেউ শুনছেন দুয়ো। পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে কেউ পেয়েছেন বিয়ের প্রস্তাব আবার কাউকে শুনতে হয়েছে প্রিয় মানুষের বিদায়ের খবরও। হাসি আর কান্নার মিশেলে অদ্ভুত এক আসর অলিম্পিক। তবে গেলপরশু যা হলো তা বুঝি হার মানায় কল্পজগতকেও।
ব্রাজিলের ইতিহাসে বক্সিংয়ে প্রথম স্বর্ণ এনে দিয়েছেন এমন একজন, যাকে শহরের অন্যসব আগন্তুকের কাতারেই ফেলতো ‘এলিট সোসাইটি’। কনসেইকাও, যাঁর ছোটবেলাটা কেটেছে ব্রাজিলিয়ান শহর সালভাদরের রাস্তায় রাস্তায়। একের পর এক গাড়ির জানালায় টোকা দিয়ে চালকদের কখনো সেধেছেন আইসক্রিম, কখনোবা মৌসুমি সবজি। কখনো বা কোনো চালকের মন গলেছে, হাসিমুখেই পরের চালকের কাছে আবারও আবদার জানিয়েছেন, কখনো আবার ধমক খেয়ে মুখ কালো করে ফিরে গেছেন।
এক লহমায় সেসব দুঃসহ স্মৃতি কাল ধুয়েমুছে গেছে কনসেইকাওর মন থেকে। শুধু তিনি আছেন বলেই তো প্রথমবারের মতো কানায় কানায় ভরে উঠল রিওর বক্সিং রিং। লাইট ওয়েটের ফাইনাল দেখতেই চলে এলেন সবাই। বক্সিংয়ের কোর্ট যেন হয়ে উঠল ফুটবলের মাঠ। ‘ব্রাজিল’ ‘ব্রাজিল’ ধ্বনিতে কেঁপে উঠল পুরো চত্বর। কনসেইকাওর উল্টো দিকে থাকা ফ্রেঞ্চ সোফিয়েন ওমিহার উদ্দেশে হুংকার ছাড়া হলো, ‘তুমি মরতে যাচ্ছ!’ এমন বুনো সমর্থন বৃথা যায়নি। ওমিহাকে হারিয়ে ব্রাজিলকে বক্সিংয়ের প্রথম স্বর্ণ এনে দিয়েছেন কনসেইকাও। ‘আমি একজন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। আমার জীবনটাই পাল্টে গেল আজ থেকে। আমার জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত।’
কনসেইকাও কথাটি না বললেও চলত। দেশের হয়ে প্রথম অলিম্পিক সোনা জেতার মুহূর্তটি যে অনন্য, সেটি আসলে আলাদা করে না বললেও চলে। ২৭ বছর বয়সী এই লাইটওয়েট বক্সার নিজের এমন গৌরবের পেছনে নিজের দুই বছরের মেয়ের অবদানই দেখছেন, ‘আমি ওকে বলব, তুমিই আমার সবচেয়ে অনুপ্রেরণা এবং তাকে আমি সবচেয়ে বড় উপহারটিই দিতে চেয়েছিলাম।’
এমন দিনেও নিজের অতীতের কথা ভোলেননি কনসেইকাও, ‘আমি অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি, তাই এ পদক শুধু আমার সাফল্য নয়, বরং আমার পরিবারের এবং যাঁরা আমাকে এ পথে এগোতে সাহায্য করেছে, আমাকে ছোটবেলা থেকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।’ এ বন্ধুর পথে কনসেইকাওর নিজের অবদানও কম নয়। বক্সিংয়ের অনুশীলনের জন্য চোট পাওয়ার ভান করে হাসপাতালে যেতেন। হাতে বাঁধা ব্যান্ডেজ খুলে, সেটিতে কবজি মুড়ে বাউটে নামতেন তিনি। সেসব দিন পেরিয়ে এসেছেন কনসেইকাও। অলিম্পিকের মতো মহাযজ্ঞে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ইতিহাস গড়ে জিতেছেন অলিম্পিকের স্বর্ণ! জীবনের গল্প মাঝে মাঝে রূপকথাকেও হারিয়ে দেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন