অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে তথ্য প্রমাণ পেয়েছে র্যাব। র্যাবের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, হত্যার আগে থেকে সিনহা ও তার দলের ওপর নজর রাখছিল পুলিশ। সিনহাকে খুঁজতে টেকনাফ থানার পুলিশের দল একটি গ্রামেও গিয়েছিল বলে সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়েছে র্যাব। সিনহা হত্যা মামলায় ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাদের ১১ জন পুলিশ সদস্য ও ৩ জন গ্রামবাসী। র্যাব সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
তবে র্যাবের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, আসামির তালিকা থেকে দুজনের নাম বাদ যেতে পারে। আবার নতুন একজনের নাম যুক্ত হতে পারে। তবে কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গত সপ্তাহে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ নিয়ে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত আইনজীবীরা তদন্তের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখেন।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, সিনহা হত্যার তদন্ত শেষ হয়েছে। এখন অভিযোগপত্র দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। খুব শিগগির তা আদালতে জমা দেয়া হবে। র্যাব সূত্রে জানা গেছে, সিনহা হত্যা মামলা তদন্ত সবচেয়ে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল তা হলো, এই হত্যাকান্ড তাৎক্ষণিক না পরিকল্পিত, তা প্রমাণ করা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিও এ প্রশ্নের কোনো সুরাহা করতে পারেনি। কমিটি ফৌজদারি তদন্তের মাধ্যমে এটা বের করার পরামর্শ দিয়েছিল। এখন র্যাব বলছে, তারা তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে, এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ডই ছিল। হত্যাকান্ডের আগে থেকে সিনহা ও তার দলের লোকদের খোঁজখবর করছিল পুলিশ। টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এই দলের সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে প্রদীপ এ ব্যাপারে কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।
গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে নয়টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন কর্মকর্তা পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে পুলিশ আটক করে। পরে নুরকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পরে তারাও জামিনে মুক্তি পান।
অবসরপ্রাপ্ত এই সেনা কর্মকর্তার হত্যাকান্ড নিয়ে বাহিনীগুলোর ভেতরে উত্তেজনা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ কক্সবাজারে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে এ হত্যাকান্ডকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উল্লেখ করেন। সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। পুলিশের মামলায় নিহত সিনহাকেও আসামি করা হয়। এর কয়েক দিন পর হত্যা মামলা করেন নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলারই তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব। সিনহা হত্যার তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১ আগস্ট চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি ৬৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ৮০ পৃষ্ঠার মূল প্রতিবেদনসহ ৫৮৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাখিল করে।
সূত্র জানায়, তদন্ত প্রতিবেদনে কিছু ঘটনাকে সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকতকে মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিনের আটবার ফোন দেয়া, কোনো রকম যাচাই না করে ডাকাত ধরার অবিশ্বাস্য প্রস্তুতিহীন অভিযান পরিচালনা, গুলি করার স্পষ্ট কোনো কারণ না থাকার পরও গুলি করা, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে গুলিবিদ্ধ সিনহাকে ওসি প্রদীপের আঘাত করা, আহত সিনহাকে দ্রুত হাসপাতালে না নিয়ে ফেলে রাখা, ট্রাকে করে হাসপাতালে পাঠানো ও নিহত সিনহাকে আসামি করে ইয়াবা ও খুনের মামলা দেয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন