আজ ১১ নভেম্বর বুধবার, ফিলিস্তিনি মুক্তি সংগ্রামের অবিসংবাদিত মহান নেতা ইয়াসির আরাফাতের ১৬-তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। অভিশপ্ত ইসরায়েলের দখলদারিত্ব থেকে মাতৃভূমি ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন তিনি। ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতীক ইয়াসির আরাফাত। ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতা ছিলেন তিনি।
২০০২ সাল থেকে রামাল্লায় একটি বাড়িতে ইয়াসির আরাফাতকে অবরুদ্ধ করে রাখে ইসরায়েল। এসময় তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক ইয়াসির আরাফাত ছিলেন এক অবিসংবাদিত আরব জাতীয়তাবাদী নেতা। ১৯৬৯-২০০৪ পর্যন্ত প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগেনাইজেশন (পিএলও)'র চেয়ারম্যান ও ১৯৯৪-২০০৪ পর্যন্ত প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল অথরিটি (পিএনএ)'র প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
মিশরের কায়রোতে এক ফিলিস্তিনি পরিবারে ১৯২৯ সালের ২৪ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন ইয়াসির আরাফাত। শৈশবের অধিকাংশ সময়ই তিনি মিশরের কায়রোতে ছিলেন। আরাফাতের পুরো নাম মুহাম্মদ আবদেল রহমান আবদেল রউফ আরাফাত আল-কুদওয়া আল-হুসাইনি। কৈশোরে তিনি ইয়াসির নামে পরিচিত ছিলেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে সমর্থকরা আবু আম্মার নামে সম্বোধন করতে থাকেন। আরাফাত ছিলেন একটি ফিলিস্তিনি সুন্নি মুসলিম পরিবারের সন্তান। তার বাবা আবদেল রউফ আল-কুদওয়া আল-হুসাইনি গাজার এবং মা জোয়া আবুল সাউদ জেরুজালেমের অধিবাসী ছিলেন। মাত্র চার বছর বয়সে মাকে হারান আরাফাত। লেখাপড়া করেছেন মিশরের কিং ফুয়াদ ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে অধ্যায়নরত অবস্থায়ই তিনি আরব জাতীয়তাবাদে আকৃষ্ট হন এবং ইহুদিবাদ বিরোধী আদর্শে প্রভাবিত হন।
১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভাগ করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে এর প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের পক্ষে তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৫২-৫৬ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি ছাত্রদের জেনারেল ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসরাইলকে উৎখাত করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র পুনঃপ্রতিষ্ঠাকে জীবনের ব্রত হিসাবে গ্রহণ করে ১৯৫৯ সালে তিনি আধাসামরিক সংগঠন ‘ফাতাহ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৯ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত তিনি এ দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ দলটি মিশর, জর্ডান, লেবাননসহ বিভিন্ন আরব দেশ থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যেতে থাকে।
১৯৮৩-৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি তিউনিসিয়ায় ছিলেন এবং সশস্ত্র সংগ্রামের পরিবর্তে ইসরাইলের সঙ্গে সমঝোতা ও শান্তি আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যান। ১৯৮৮ সালে তিনি ইসরাইল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেন এবং ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকট নিরসনে ‘দ্বি-রাষ্ট্র’ ভিত্তিক সমাধান নীতির প্রতি সম্মতি দেন। তার নেতৃত্বেই ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ঘোষণা দেয়া হয়। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয় আলজেরিয়া।
১৯৯৪ সালে তিনি গাজায় বসতি স্থাপন করেন। ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকট নিরসনের লক্ষ্যে তিনি ইসরাইলের সঙ্গে বেশ কিছু শান্তি আলোচনা ও সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তার নেতৃত্বে ১৯৯৩ সালে ইসরাইল ও পিএলও এর মধ্যে ঐতিহাসিক ‘অসলো চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। স্বাধীন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দিলেও এ চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইল ও পিএলও পরস্পরকে স্বীকৃতি দেয়। এই চুক্তি স্বাক্ষর করায় ১৯৯৪ সালে আইজ্যাক রবিনের সঙ্গে তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলে ১৯৯৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ইসরাইল ও পিএলও এর মধ্যে গাজা ও পশ্চিম তীর সম্পর্কিত অন্তর্র্বতীকালীন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ফলে গাজা ও পশ্চিম তীরে সীমিত আকারে ফিলিস্তিনের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। রামাল্লাকে রাজধানী করে গাজা ও পশ্চিম তীরের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে পিএনএ। যার প্রেসিডেন্ট হন ইয়াসির আরাফাত।
শুধু ফিলিস্তিনের নয়, সারাবিশ্বের নিপীড়িত জনগণের মুক্তির প্রতীক এ নেতা ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যু নিয়েও নানান প্রশ্ন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তার মৃত্যুর পেছনে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সম্পৃক্ততার খবর প্রকাশ পেয়েছে। সূত্র : আল জাজিরা
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন