শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

করোনার কারণে মাঠের বাইরে দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা মোহাম্মদ সালাহ। চোটে পড়ে গোটা মৌসুমের জন্য ছিটকে গেছেন সেরা ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইক। আরেক নিয়মিত সেন্টারব্যাক ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডও হাসপাতালে। যেখানে তার সঙ্গী দলের অধিনায়ক, গত কয়েক মৌসুমে দলের গোলগুলোতে সর্বোচ্চ সহায়তা করা ও নতুন আসা দলের অন্যতম গুরুত্বপ‚র্ণ খেলোয়াড় জর্ডান হেন্ডারসন ও জো গোমেজ। এত সব সমস্যার মধ্যে থেকেও মাঠে সেই চিরচেনা লিভারপুল। নিজেদের মাঠ অ্যানফিল্ডে সেই আগের মতোই দুর্দমনীয়, অবধ্য। লিগে গতপরশু রাতে লেস্টার সিটিকে ৩-০ গোলে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে শিরোপাধারীরা। একটি করে গোল করেন দিয়োগো জোতা ও রবের্তো ফিরমিনো।
আর এই জয়ে একটা অনন্যসাধারণ রেকর্ড গড়া হয়ে গেল দলটার। লিগে এই নিয়ে টানা ৬৪ ম্যাচ অপরাজিত রইল তারা। নিজেদের লিগ ইতিহাসে টানা এত ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড আগে ক্লাবটার কখনো ছিল না। এই ৬৪ ম্যাচের মধ্যে তারা জিতেছে ৫৩ ম্যাচে, বাকি এগারোটা ড্র। ১৯৮১ সালের জানুয়ারিতে দলটির আগের রেকর্ড ৬৩ ম্যাচের অপরাজেয় যাত্রা থেমেছিল লেস্টারের বিপক্ষে হেরে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে সেই ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ২-১ গোলে হারার পর লিগে নিজেদের মাটিতে আর হারের মুখ দেখেনি ক্লাবটি। ওদিকে সাদিও মানের কথাই ধরুন। ২০১৬ সালে সাউদাম্পটন থেকে লিভারপুলে আসার পর সেনেগালের এই উইঙ্গার এখনো অ্যানফিল্ডে কোনো লিগ ম্যাচ হারেননি!
শুরু থেকেই ভয়ডর ছাড়া খেলতে শুরু করেছিল লিভারপুল। চোট-করোনার কারণে রক্ষণই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি, তাই হয়তো ‘যত গোল খাব তার চেয়ে বেশি গোল দেব’ এমন মানসিকতা খেলোয়াড়দের মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন ক্লপ! এই অতি-আক্রমণাত্মক মানসিকতার সুফল পেতে বেশিক্ষণ লাগেনি। নিয়মিত রাইটব্যাক ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আরনল্ডের জায়গায় এই ম্যাচে খেলেছিলেন বর্ষীয়ান জেমস মিলনার। ২১ মিনিটে তার নেওয়া এক কর্নার ক্লিয়ার করতে গিয়ে উল্টো হেড করে নিজের জালে ঢুকিয়ে দেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক সেন্টারব্যাক জনি এভান্স। শত্রুশিবিরের সাবেক এই ‘যোদ্ধার’ এহেন উদারতা বেশ ভালোই লাগার কথা লিভারপুল সমর্থকদের!
লিভারপুলের পরের গোলটা ছিল দলগত নৈপুণ্যের দারুণ প্রদর্শনী। নিজেদের মধ্যে টানা তিরিশবার বল আদান-প্রদান করার পর লেফটব্যাক অ্যান্ডি রবার্টসনের মাপা এক ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন পর্তুগিজ উইঙ্গার দিওগো জোতা। মৌসুমের শুরুতে উলভারহ্যাম্পটন থেকে দলে আসা এই তারকা যেন গোল করা থামাতেই পারছেন না! ঘরের মাটিতে নিজের প্রথম চার ম্যাচে চার গোল করা প্রথম লিভারপুল খেলোয়াড় হয়ে গেলেন এই জোতা। সব মিলিয়ে লিভারপুলের হয়ে ১২ ম্যাচ খেলে আট গোল করা হয়ে গেল এই তারকার। অথচ তিনি যখন দলে এলেন, বলা হচ্ছিল, লিভারপুলের বিখ্যাত আক্রমণ-ত্রয়ীর কারণে বেঞ্চই হবে তার ঠিকানা। এখন জোতার আগুনে ফর্ম দেখে ক্লপ মধুর সমস্যায় পড়ছেন প্রতিনিয়ত, এটা নিশ্চিত!
এত ভালো খেলার পরেও, একটা অতৃপ্তি থেকেই যাচ্ছিল। গত এক বছর ধরেই আক্রমণ সঙ্গী সাদিও মানে কিংবা সালাহর মতো তেমন গোল পাচ্ছিলেন না ব্রাজিলের স্ট্রাইকার রবার্তো ফিরমিনো। এই ম্যাচেও দুবার বল লাগিয়েছেন পোস্টে। শেষমেশ ফিরমিনোকেও রুখতে পারেনি লেস্টারের রক্ষণভাগ। মিলনারের আরেকটি কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে ফর্মে ফেরার আভাস দিয়েছেন এই স্ট্রাইকার।
আগের ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটির মাঠে ১-১ ড্র করেছিল লিভারপুল। একাধিক মূল খেলোয়াড় মাঠের বাইরে থাকার পরেও প্রতিপক্ষকে এভাবে নাস্তানাবুদ করে পাওয়া এই জয় ক্লপকে শান্তি দেবে, নিশ্চিত!
একই রাতে পুরো ম্যাচে আক্রমণে আধিপত্য করল লিডস ইউনাইটেড। কিন্তু গোলরক্ষক বার্নড লেনোর বাধা পেরুতে পারল না দলটি। বাঁধ সাধল পোস্ট আর ক্রসবারও। প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে স্বস্তির ড্র নিয়ে ফিরল দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরোটা একজন কম নিয়ে খেলা আর্সেনাল। লিডসের মাঠে লিগের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে।
লিগে এই নিয়ে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে পয়েন্ট হারাল আর্সেনাল। আগের ম্যাচে নিজেদের মাঠে অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে ৩-০ গোলে হেরেছিল মিকেল আর্তেতার দল। আর নিজেদের আগের দুই ম্যাচেই হেরেছিল লিডস। এবারও হতাশ হতে হলো ১৬ বছর পর প্রিমিয়ার লিগে ফেরা লিডসকে। মার্সেলো বিয়েলসার দল পুরো ম্যাচে গোলের উদ্দেশে শট নিয়েছে ২৫টি, এর ৪টি ছিল লক্ষ্যে। আর্সেনালের ৯ শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল ২টি।
৯ ম্যাচে ছয় জয় ও দুই ড্রয়ে লিভারপুলের পয়েন্ট ২০। সমান পয়েন্ট নিয়ে গোল পার্থক্যে এগিয়ে শীর্ষে টটেনহ্যাম হটস্পার। ১৮ পয়েন্ট নিয়ে চেলসি তিনে ও লেস্টার চারে আছে। নয় ম্যাচে চার জয় ও এক ড্রয়ে ১৩ পয়েন্ট নিয়ে ১১তম স্থানে আছে আর্সেনাল। সমান ম্যাচে তিন জয় ও দুই ড্রয়ে ১১ পয়েন্ট নিয়ে ১৪তম স্থানে লিডস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন