মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে মিজানুর রহমান আজহারির মন্তব্য

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১:৩২ পিএম | আপডেট : ৩:২৬ পিএম, ২৮ নভেম্বর, ২০২০

নিজ ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সম্প্রতি রাজধানীর ধোলাইখালে শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কের বিষয়ে আজহারি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে মন্তব্য জানিয়েছেন। একইসাথে শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের স্মরণীয় রাখতে ভাস্কর্যে নয় হৃদয়ে ধারণ করতে ও ভাস্কর্য বা মূর্তি না নির্মাণের পেছনে যুক্তি তুলে ধরেছেন তিনি। পাঠকদের জন্য তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো,


‘হৃদয়ে অমর হোক, ভাস্কর্যে নয় ॥
ভাস্কর্য শিল্প— এটি অমুসলিমদের কৃষ্টি সমৃদ্ধ একটি শিল্প বা কলাকৌশল। কোনো ব্যক্তি যতো সম্মান আর মর্যাদার অধিকারী হোক না কেন, তার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য মূর্তি বা ভাস্কর্য তৈরি ইসলামে বৈধ নয়।
.
ইব্রাহীম (আ:)-এর পদচিহ্নকে স্মৃতিময় করে রাখতে, মাকামে ইব্রাহীমে সালাত আদায়ের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেখানে আজও ওনার ফুটপ্রিন্ট সংরক্ষিত আছে। কিন্তু কারো পুরো দেহাবয়ব সংরক্ষণ— এটি সম্পূর্ণ অনৈসলামিক সংস্কৃতি। ইসলামে মানুষের বা প্রাণীর মূর্তি কিংবা ভাস্কর্য তৈরীকে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলামী ধর্মবিশ্বাসের সাথে পৌত্তলিক এই ধারণাটি, পুরোপুরি ১৮০ ডিগ্রী বিপরীত এঙ্গেলে অবস্থান করে।
.
কিছু কিছু ব্যাপার আছে যেগুলোতে ইসলাম খুবই স্ট্রিক্ট। ফলে সেসব ক্ষেত্রে সামান্য ছাড় দেয়ারও কোন সুযোগ নেই। শিরক তন্মধ্যে অন্যতম। পবিত্র কুরআনুল কারিমে শিরককে “জুলমুন আযিম” তথা মহাঅন্যায় বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাই, বাহ্যত শিরক নয় কিন্তু ভবিষ্যতে এটা কোনভাবে শিরকের দিকে ধাবিত করতে পারে অথবা শিরকি কার্যকলাপের সাথে এর সাদৃশ্য আছে— এমন জিনিসকেও ইসলামে হারাম করা হয়েছে। ভাস্কর্যের ব্যাপারটিও ঠিক এমন।
.
পৃথিবীতে নূহ (আ:) এর জামানায় সর্ব প্রথম শিরকের উৎপত্তি হয় ঠিক এভাবেই। সে জনপদে অত্যন্ত আল্লাহভীরু পাঁচজন ব্যক্তি ছিলেন। তাদের মৃত্যুর পর, শয়তানের প্ররোচনায় প্রথমত তাদেরকে স্মরণ করার উদ্দেশ্যে সেই জনপদের লোকেরা পাঁচটি ভাস্কর্য তৈরী করে এবং পরবর্তীতে তারা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে তাদের উপাসনা শুরু করে দেয়। আর এভাবেই পৃথিবীতে শিরকের সূচনা হয়।
.
প্রাচীন গ্রীক ও রোমানরা ভাস্কর্যের মাধ্যমে বিখ্যাত ব্যক্তিদেরকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইতো, যাতে পরবর্তী প্রজন্ম তাদেরকে ভক্তিভরে স্মরণ করে। এভাবে, গোটা দুনিয়াব্যাপী অনেক ভাস্কর্য তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু এই ভাস্কর্য কি তাদের সবাইকে জনমনে ইতিবাচক ইমেজ এনে দিতে পেরেছে? আসলে, মানুষ স্মরণীয় হয়ে থাকে তার কর্ম দিয়ে। কর্মগুণে মানুষ মরে গিয়েও বেঁচে থাকে মানুষের অন্তরে। যেমন ধরুন, হিটলারের ভাস্কর্য আছে, ফিরআউনের মমি আছে। কিন্তু তাদের জন্য আছে সবার ঘৃনা। অন্যদিকে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এবং চার খলিফার ভাস্কর্য নেই এমনকি কোন ছবিও নেই। কিন্তু হাজার বছর পরেও বিশ্ববাসী তাদেরকে মনে রেখেছে, মনেপ্রাণে তাদের আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করেছে।
.
সরকার চাইলে, প্রয়োজনে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ভাইদের উপসনালয়গুলোতে কিংবা তাদের স্থায়ী আবাসিক এলাকাগুলোতে তাদের চাহিদা অনুযায়ী, সরকারি অর্থায়নে তাদের ধর্মীয় ভাস্কর্য কিংবা মূর্তি নির্মাণ করে দিতে পারে। এতে কারো কোন সমস্যা থাকার কথা নয়। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশে, দেশের অধিকাংশ ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং গ্রহণযোগ্য আলেম ওলামাদের মতামতকে উপেক্ষা করে, পাবলিক প্লেসে এভাবে ভাস্কর্য স্থাপন কোন ভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না।
.
তাছাড়া, প্রিয় মানুষের প্রতিকৃতি রোদে পুড়বে, বৃষ্টিতে ভিজবে অথবা মাথার উপর কাক বসে মল ত্যাগ করবে— এর কোনটাই কারোরই ভালো লাগার কথা নয়।
.
মুক্তমনা ও প্রগতিশীল দাবীদার যারা এতদিন কুরবানি না দিয়ে সেই টাকা গরিবদের মাঝে দান করে দেয়ার কথা বলতেন। তাদের কেউ কি ভাস্কর্য না বানিয়ে সেই টাকা গরিব দু:খীদের মাঝে বিতরণ করে দেয়ার কথা বলেছেন? করোনা কালে ব্যপকভাবে মানুষ খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে ভুগছে। এমন ক্রান্তিকালে ভাস্কর্য তৈরী নিয়ে পুরো দেশে এরকম অস্থিতিশীলতা তৈরী করা মোটেও কাম্য নয়।
.
নগরের সৌন্দর্য্য বর্ধনের এবং দেশের মহান ও বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের স্মৃতি সংরক্ষণের কার্যকর অনেক পদ্ধতি রয়েছে। আমরা চাইলেই ন্যাশনাল হিরোদের নামে আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়, উন্নত মানের লাইব্রেরি, গবেষণাগার, সড়ক, সেতু, রিসার্চ সেন্টার, ইনস্টিটিউট, চ্যারিটি ফাউন্ডেশন ইত্যাদি নির্মাণ করতে পারি। অথবা তাদের কর্মের উপর নির্মিত তথ্যবহুল ডকুমেন্টারি, আন্তর্জাতিক মানের ওয়েবসাইট, রিসার্চ গ্র্যান্ট কিংবা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় সেমিনার সিম্পোজিয়াম ইত্যাদির উদ্যোগ নিতে পারি। এতে করে দেশের উন্নয়ন হবে, দশের উপকার হবে এবং স্মরণীয়রাও আরো স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’

‘মুক্তমনা ও প্রগতিশীল দাবিদার যারা এতদিন কুরবানি না দিয়ে সেই টাকা গরিবদের মাঝে দান করে দেয়ার কথা বলতেন। তাদের কেউ কী ভাস্কর্য না বানিয়ে সেই টাকা গরিব দুঃখীদের মাঝে বিতরণ করে দেয়ার কথা বলেছেন?’। এমন প্রশ্ন তুলেছেন মিজানুর রহমান আজহারি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (17)
Mohsin Rifat ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১:৪৩ পিএম says : 1
আল্লাহ সরকার প্রধানকে সু-বুদ্ধি ও বোঝার তৌফিক দান করুন।
Total Reply(0)
MD Akkas ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৯ পিএম says : 1
আল্লাহ্ আমাদের মাফ করে দিন। আর আমাদের দেশের মহান নেতাদের মুরর্তি না বানিয়ে দেশ জনগণের কল‍্যাণে কাজ করার শুবুদ্ধি দাও।
Total Reply(0)
Md Rejaul Karim ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ২:৪৯ পিএম says : 1
মিজানুর রহমান আযহারীর সাহেবের মন্তব্যের প্রত্যেকটি শব্দের সাথে পুরোপুরি একমত পোষণ করচ্ছি।।। দোয়াকরি আল্লাহ যেন উনাকে সুস্হতা ও হেফাজতে রাখেন।। আশাকরি উনার মন্তব্যটি রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল সকল কর্মকর্তাদের কাজে লাগতে পারে।।।
Total Reply(0)
মোঃ শাহজাহান ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ৭:৩০ পিএম says : 1
একমত পোষণ করছি
Total Reply(0)
nasim reza ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৫৪ পিএম says : 1
একমত
Total Reply(0)
Nannu chowhan ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ৬:৩২ এএম says : 1
Onar montobbo jukti o islam bidhi shomponno tai jukiti mene neowa amader noitik dhormio o imani daitto,Mohan Allah rabbul alamin amader hedayet korun,ameen
Total Reply(0)
H monirul islam ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ৯:২৭ এএম says : 2
R8 bolcen
Total Reply(0)
H monirul islam ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ৯:২৭ এএম says : 1
R8 bolcen
Total Reply(0)
নুরূল আবছার ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ৭:১৮ পিএম says : 1
অত্যন্ত সুন্দর পরামর্শ।মাশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
mannan abdul ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ১০:০২ পিএম says : 1
খুবই সুন্দর পরামর্শ।মাশাআল্লাহ। আল্লাহতালা আপনার নেকহায়াত দান করুন ।আমিন
Total Reply(0)
মো. নূরুল আলম ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ৪:৪৬ পিএম says : 1
যিনি নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করেন এবং আল্লাহকে রব,হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সত্য নবী বলে স্বীকার করেন এবং পরকালকে বিশ্বাস করেন তিনি এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে কখনোই যেতে পারেন না।
Total Reply(0)
জাফর আলম ১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:২৮ পিএম says : 1
আসসালামুয়ালাইকুম।আমি জনাব আজহারী সাহেবের সাথে আরও কিছু কথা যোগ করতে চাচ্ছি। ইসলামের নিষেধকে স্মরণ রেখে সরকার যদি চান শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের প্রতিকৃতি বা ভাস্কর্য নির্মাণ ব্যতিরেকেও তাঁকে স্মরণ করা হবে এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করা যাবে। আমার পরামর্শ হচ্ছে যে: ওনার যে সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ছিল, সেই স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের ভাস্কর্য, কোন স্থানের ভাস্কর্য, কোন দালানের ভাস্কর্য। বর্তমান সরকার কর্তৃক যে সমস্ত স্থানের উন্নয়ন হয়েছে সে সমস্ত স্থানের, কোন রাস্তার, কোন বস্তুর ভাস্কর্য তৈরি করে বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা যেতে পারে। যেহেতু উনার স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলাদেশ গড়ার।
Total Reply(0)
মোঃ হারুন অর রশিদ ১ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:২২ পিএম says : 1
একমত পোষন করছি।
Total Reply(0)
মোঃ রেজাউল জয়পুরহাট ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ৫:০৫ এএম says : 1
মিজানুর রহমান কথায় এক মত এমন ভালো মানুষ পৃথিবীতে কয় জন হয় ।
Total Reply(0)
Abu Nayem ২ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:১৭ পিএম says : 0
দ্বীনের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে আজকে মানুষ ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করছে। আমাদের উচিত দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে বেশি বেশি অধ্যায়ন করা তাহলে যে কোন বিষয়ের সঠিক সমাধান পাব ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
Mustafizur Rahman Ansari ৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ৮:০৬ এএম says : 0
একমত পোষন করছি.
Total Reply(0)
Md. Kibria Hossain ৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:৫৭ এএম says : 0
আসসালামুয়ালাইকুম। মিজানুর রহমান আযহারীর সাহেবের মন্তব্যের প্রত্যেকটি শব্দের সাথে পুরোপুরি একমত পোষণ করচ্ছি।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন