শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

রেফারি নাসেরের স্মৃতিতে ম্যারাডোনার শ্রেষ্ঠত্ব

‘হ্যান্ড অব গড’ ও ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

ডিয়েগো ম্যারাডোনা দুর্দান্ত ড্রিবলিংয়ে ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন আর রেফারি আলি বিন নাসের ভাবছিলেন, এই বুঝি ফাউল হলো, বাজাবেন বাঁশি। তবে, তেমন কিছুই হয়নি সেদিন। আর হয়নি বলেই ফুটবলপ্রেমীরা সাক্ষী হতে পেরেছিল ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’র। সেই ম্যাচে রেফারির দায়িত্বে ছিলেন বলে গর্বিত বোধ করেন বিন নাসের।

১৯৮৬ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড লড়াইয়ে ম্যারাডোনার দুই গোল স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। একটি পরিচিত ‘হ্যান্ড অব গড’ গোল নামে, অন্যটি ‘গোল অব দা সেঞ্চুরি।’ ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলের চার মিনিট পর চোখ ধাঁধানো দ্বিতীয় গোলটি করেছিলেন ম্যারাডোনা। মিডফিল্ডার এক্তর এনরিকে নিজেদের অর্ধে পাস দিয়েছিলেন ম্যারাডোনাকে। পিটার বেয়ার্ডসলে, টেরি বুচার (দুইবার), পিটার রিড, টেরি ফেনউইককে পেরিয়ে যান তিনি। ছুটে এসেছিলেন গোলরক্ষক, তাকেও কাটিয়ে ফাঁকা জালে বল পাঠান ম্যারাডোনা, ২-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত ২-১ এ জিতে তারা ওঠে সেমি-ফাইনালে। ফিফা এ গোলটিকেই ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’র মুকুট পরিয়ে দেয়।
পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে গত বুধবার অসীমের পথে পাড়ি জমান ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের হিসেবে বিবেচিত ম্যারাডোনা। আর্জেন্টাইন গ্রেটের চলে যাওয়ায় ফুটবল বিশ্ব যেন হয়ে পড়েছে শোকাচ্ছন্ন। সাবেক-বর্তমান ফুটবলারদের কথায় তো বটেই, সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতিতেও আসছে ম্যারাডোনার বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার, বর্ণময় জীবন। আর স্বাভাবিকভাবে বারবার উঠে আসছে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে যাওয়া ম্যারাডোনার সেই ‘কুখ্যাত’ ও ‘বিখ্যাত’ দুই গোল। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিউনিসিয়ান রেফারি বিন নাসেরের কণ্ঠে নতুন করে ফুটে উঠল সেদিনের ম্যাচের চিত্র, ‘সে (ম্যারাডোনা) মিডফিল্ড থেকে বল নিয়ে দৌড় শুরু করেছিল আর আমি তার পেছন পেছন ছুটছিলাম। ম্যারাডোনার মতো কাউকে রেফারিং করার সময় তার ওপর থেকে চোখ সরানো যায় না। তারা (ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়রা) তিনবার তাকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু লক্ষ্য অর্জনেরক্ষুধা তাকে শুধু সামনেই এগিয়ে নিচ্ছিল। বক্সের বাইরে থেকে আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম, কীভাবে তিন ডিফেন্ডারকে সে কাটাল। প্রায় ৫০ মিটার দৌড়েছিল। ভেবেছিলাম, ডিফেন্ডাররা এবার তাকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করবে। সেরকমই ভাবছিলাম এবং পেনাল্টির বাঁশি বাজানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম।’
কিন্তু বিন নাসেরকে অবাক করে দিয়ে আরও এক ডিফেন্ডার এবং গোলরক্ষককে কাটিয়ে অবিশ্বাস্য গোলটি করেন ম্যারাডোনা, ‘ম্যারাডোনার ওই ঐতিহাসিক অর্জনের সঙ্গে আমিও জড়িয়ে থাকায় ব্যক্তি ও রেফারি হিসেবে আমি গর্বিত ও সম্মানিত বোধ করি। ইংলিশদের প্রথম তিন চ্যালেঞ্জে যদি আমি ফাউলের বাঁশি বাজাতাম তাহলে এমন জাদুকরী কিছুর সাক্ষী আমরা হতে পারতাম না। যে অ্যাডভান্টেজ আমি দিয়েছি, তা আমার সেরা অর্জনগুলোর একটি।’
বিতর্কিত প্রথম গোলটাও স্মরণ করলেন বিন নাসের। যেখানে গোলরক্ষক পিটার শিলটনকে লাফিয়ে হাতের ফ্লিকে পরাস্ত করেছিলেন ম্যারাডোনা, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে। ইংলিশ ডিফেন্ডার (স্টিভ হজ) বল পেয়েছিল এবং পেছনে বাড়িয়েছিল। ম্যারাডোনা ও শিলটন শ‚ন্যে ছিল এবং তাদের দুজনেরই পিঠ ছিল আমার দিকে। আমার সহকারী রেফারি বোগদান দোচেভের দিকে ছিল তাদের মুখ।’ প্রথমে রেফারির সামনে প্রতিবাদ করা ইংলিশ খেলোয়াড়রা পরে ছুটে যায় বুলগেরিয়ান লাইন্সম্যান দোচেভের কাছে, ‘প্রথমে আমি দ্বিধায় ছিলাম, আমি দোচেভের দিকে তাকাই, সে মাঠের মাঝামাঝি ছুটে যায়, গোল নিশ্চিত করে। সে হ্যান্ডবলের সংকেত দেয়নি। ম্যাচের আগে ফিফা আমাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিল- যদি কোনো সহকর্মী আমার চেয়ে ভালো জায়গায় থাকে তাহলে তার মতকে সম্মান জানাতে হবে।’
২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করা দোচেভ বলেছিলেন, সিদ্ধান্ত নিয়ে রেফারির সঙ্গে সহকারীদের আলোচনা করার অনুমতি ছিল না ফিফার। তবে, এরকম গুরুত্বপ‚র্ণ ম্যাচে সেদিন ইউরোপের কোনো রেফারি দায়িত্বে থাকলে ম্যারাডোনার প্রথম গোলটি বাতিল হয়ে যেত বলে মন্তব্য করেছিলেন দোচেভ। বিন নাসেরের মতে অবশ্য ওটা শতভাগ গোল ছিল, ‘ফিফার গাইডলাইন অনুযায়ী, আমার মতে ওটা শতভাগ গোল ছিল।’ নির্ধারিত সময়ের নয় মিনিট বাকি থাকতে একটি গোল শোধ করেছিলেন গ্যারি লিনেকার। বিন নাসের সেদিন খুব করে চেয়েছিলেন, ইংল্যান্ড সমতায় ফিরুক। যাতে আরও ৩০ মিনিট তিনি ম্যাচটা উপভোগ করতে পারেন!
২০১৫ সালে বিন নাসেরের সঙ্গে দেখা করতে তিউনিসিয়ায় তার বাড়িতে গিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। সে সময়েরও স্মৃতিচারণ করলেন ৭৬ বছর বয়সী বিন নাসের, ‘আমি তাকে বলেছিলাম, “আর্জেন্টিনা ওই বছর বিশ্বকাপ জেতেনি, জিতেছিল ম্যারাডোনা।” সে উত্তর দিয়েছিল, “সেখানে তুমি না থাকলে আমি শতাব্দী সেরা গোল করতে পারতাম না”।’ সেদিন বিন নাসেরকে স্বাক্ষর করা একটি জার্সি দিয়েছিলেন ম্যারাডোনা, যাতে লেখা ছিল, ‘আমার চিরদিনের বন্ধু আলিকে।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Amran hossain ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ৭:২২ এএম says : 0
হাতে গোল দেয় এটা আবার কেমন ফোটবল খেলা
Total Reply(0)
Amran hossain ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ৭:২২ এএম says : 0
হাতে গোল দেয় এটা আবার কেমন ফোটবল খেলা
Total Reply(0)
Amran hossain ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ৭:২৮ এএম says : 0
হাতে গোল দেয় এটা আবার কেমন ফোটবল খেলা
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন