কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। স্থানীয় ইবনে মাসউদ নামের একটি মাদরাসা থেকে দুই ছাত্র রাতে বেরিয়ে এসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙেছে। তাদের একজনের নাম আবু বকর। অন্যজন নাহিদ। এছাড়া আলামিন ও ইউসুফ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনো রকম অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেব না। যদি কেউ মনে করেন, তারাই অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছেন, এটা তাদের ভুল ধারণা। গতকাল রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ সব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের দল আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক তিনি তার বক্তব্যে স্পষ্ট করেছেন। আমি ও আমরা যারা শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত আছি, আমরা এটুকু বলতে পারি- কোনো ধরনের অরাজকতা বাংলাদেশে করতে দেব না। অরাজকতা বলেন, ভাঙচুর বলেন, কোনো রকম অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেব না। যদি কেউ মনে করেন, তারাই অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছেন, এটা তাদের ধারণার ভুল। তারা মিথ্যা ও বিভ্রান্তি করার জন্য...আমি গতকাল ফেসবুকে দেখেছি একটা ছোট ছেলে বলছে যে, মুক্তিযুদ্ধে কত শহীদ হয়েছে, তার চেয়ে বেশি রক্ত হেফাজতের তারা দিয়েছে। এই যে মিথ্যাচার, এই যে বিভ্রান্তি অল্প বয়সের ছেলের মাথার মধ্যে দিচ্ছে এটা তারা জেনেশুনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, হেফাজতের ওই ঘটনার (লংমার্চ করে ঢাকা অবরোধ) পর আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলাম, কয়জন শহীদ হয়েছেন, কোন মাদরাসার, কোন বাড়ির তা যেন আমাদের এসে জানায়, আমরা কিন্তু সেই লিস্ট এখনও পাইনি। এটাই হলো বাস্তবতা।
উসকানিদাতা হিসেবে একজনের নাম আসছে বলেছেন, তিনি কে- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমি তো বলেছি তদন্তের পর আপনাদের বিস্তারিত জানাব।
সরকার এখন ধোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিষয়টি রিভিউ করবে কিনা- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার রিভিউ করবে কিনা এটা সরকারের বিষয়। আমাদের বিষয় হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেব। বঙ্গবন্ধু হলেন জাতির পিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তার স্মৃতি ধরে রাখা হবে না, এটা তো বাংলাদেশের কোনো মানুষই মেনে নিতে পারবে না। আপনি যদি ফিরে তাকান মুসলিম সভ্যতার যুগে- আলবেরুনি বলেন, ইবনে বতুতা বলেন, তাদের ভাস্কর্য তো বিভিন্ন জায়গায় শোভা পাচ্ছে। সেগুলো তো কেউ ভাঙছে না। আমরা সেখানে কথা বলছি। ভাস্কর্য মানে পূজা নয়। তাকে ধরে রাখা, তার যে অবদান দেশের প্রতি জাতির প্রতি, সেটাকে হৃদয়ে গেঁথে রাখা। আমরা তো অনেক ইসলামিক দেশে ভাস্কর্য দেখেছি। মুদ্রার মধ্যে সৌদির বাদশাহের ছবি রয়েছে, কায়েদে আজমের ছবি রয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্র প্রধানের ছবি রয়েছে। ওটা আমরা পকেটে নিয়ে ঘুরছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেখানে একটা ভাস্কর্য প্রজন্মের পর প্রন্ম সাক্ষী হয়ে থাকবে, সেখানে আমরা ধ্বংস করতে যাচ্ছি। এটা হলো মনমানসিকতার ব্যাপার। আমরা তো এটার পূজা করছি না। স্মৃতিটাকে ধরে রাখতে চাচ্ছি।
দেশে আরও বিভিন্ন স্থানে ভাস্কর্য রয়েছে, সেগুলোর নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেয়া হবে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এগুলো যারা ভাঙবে তারা তো নিশ্চয়ই না জেনে মুর্খতার পরিচয় দেবে। নিরাপত্তা আমরা অবশ্যই দেখব।
সরকার কি হেফাজতের বিষয়ে নমনীয়- এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা কারও প্রতি নমনীয় নই। যেটাই আমাদের সামনে আসছে সেটাই আমরা দেখছি। আমরা জনগণকে নিয়েই চলি, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই কাজ করি। কাজেই জনগণ যেটা চায় সেটাই প্রতিফলিত হবে, সরকার সেটাই করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন