সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নরসিংদী জেলায় তরল বর্জ্য নির্গতকারী কলকারখানাসমূহকে প্রায় শতভাগ ইটিপি’র আওতায় আনা হয়েছে মর্মে নরসিংদীর পরিবেশ অধিদফতরের সিনিয়র কেমিস্ট আব্দুস সালাম সরকারের দাবি নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নরসিংদীর হাড়িধোয়া, পুরনো ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা পাড়ের সচেতন মানুষ কেমিস্ট আব্দুস সালামের এই দাবীকে শতভাগ মিথ্যা বলে প্রত্যাখান করেছে। তারা বলেছে, নরসিংদীর ২৫ কিলোমিটার হাড়িধোয়া নদী, ১৮ কিলোমিটার পুরনো ব্রহ্মপুত্র এবং বানিয়ার খালের শতভাগ পানি ও মাটি এখনো কলকারখানার বিষাক্ত তরল বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে রয়েছে। এসব নদীতে কোন মাছ নেই, নেই জলজ প্রাণী এবং জলজ উদ্ভিদ। বিগত ২ দশকাধিককাল ধরে কয়েকটি শিল্প কারখানা থেকে অব্যাহতভাবে পতিত বর্জ্যে এসব নদীসমূহ শতভাগ দূষিত হয়ে রয়েছে।
এসব নদ-নদীসমূহের অববাহিকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন গৃহপালিত জীব-জানোয়ারের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য কমে গেছে। ধানপাটসহ বিভিন্ন ফসলাদির উৎপাদন শতকরা ২৫ ভাগে নেমে এসেছে। এসব অববাহিকায় শতবর্ষী মানুষ খুজে পাওয়া যায় না। যে নদীগুলো মানুষের জীবন জীবিকার উৎস ছিল সেসব নদীসমূহ এখন মানুষের জীবন ধ্বংসের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। হাজার হাজার মানুষের দাবী সত্তে¡ও পরিবেশ অধিদফতর নরসিংদী জেলা কার্যালয় পরিবেশ উন্নয়নে ন্যূনতম কোন সফলতা অর্জন করেছে বলে দেখা যায় না। পরিবেশ অধিদফতর নরসিংদীর সিনিয়র কেমিস্ট আব্দুস সালাম সরকার একটি পত্রিকায় তথ্য সরবরাহ করে বলেছেন, যে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালকের কঠোর দিক নির্দেশনায় তিনি এলাকার তরল বর্জ্য নির্গতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মালিক ও শিল্প উদ্যোক্তাদের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তিনি প্রায় শতভাগ শিল্প কারখানাকে ইটিপির আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। নরসিংদীর পরিবেশ সচেতন মানুষ আব্দুস সালামের এই দাবীকে গোয়েবল্সীয় অপপ্রচার বলে দাবী করেছেন। তারা আব্দুস সালাম সরকারকে প্রশ্ন করেছেন যদি কলকারখানাসমূহ শতভাগ ইটিপির আওতায় এসে থাকে তা হলে নদীগুলোর উন্নয়ন ঘটছে না কেন। নদীর পানি রং পরিবর্তন হচ্ছে না। নদীতে মাছ, জলজ প্রাণী ও জলজ উদ্ভিদ বৃদ্ধি পাচ্ছে না কেন। তরল বর্জ্য তথা পানি ও মাটির পচা দুর্গন্ধ দূরীভূত হচ্ছে না কেন। তারা বলছে নদী দূষণ, পানি দূষণ, বায়ু দূষণ, মাটি দূষণ ও শব্দ দূষণে নরসিংদীর পরিবেশে মারাত্মক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এসব দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতর নরসিংদীর কোন তৎপরতাই জনগনের চোখে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। পরিবেশ আইন ভঙ্গ করে নরসিংদীর পরিবেশ অধিদফতর ইটভাটাগুলোকে পরিবেশ ছাড়পত্র দিয়েছে। নরসিংদীর অধিকাংশ ইটভাটাই পরিবেশ আইনের নির্ধারিত জায়গার পরিবর্তে গ্রামের ভিতর এবং গ্রামের কাছাকাছি স্থানে স্থাপন করা হয়েছে। অধিকাংশ ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এসব ইটভাটা নরসিংদীর গ্রামগুলোতে দিনের পর দিন ধ্বংস করে দিচ্ছে।
ইটভাটার মালিক ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন, পরিবেশ অধিদফতরকে ম্যানেজ করেই তারা ইটভাটা স্থাপন এবং কাঠ পোড়াচ্ছে। কোন ইটভাটার বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। পরিবেশ অধিদফতরের অফিস থাকলেও নরসিংদীতে পরিবেশ আইনের কোন প্রয়োগ হচ্ছে না। সাংবাদিকরা এসব ব্যাপারে কথা বললে সিনিয়র কেমিস্ট আব্দুস সালাম সরকার দম্ভপূর্ন আচরণ করছেন। প্রতিবছর পরিবেশ দিবস এলে একটি র্যালীর নামে প্রহসন আর গেঞ্জি, টুপি ও বিরিয়ানী বিতরণ ছাড়া গোটা বছরের মধ্যে তাদের আর কোন কার্যক্রম জনগণ লক্ষ্য করতে পারছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন