মাতৃগর্ভ একটি কাঙ্খিত প্রক্রিয়া। এ অবস্থায় মা তার মাতৃত্বের স্বাদ পান। এ স্বাদের পাশাপাশি নারীর দেহে বিভিন্ন ফিজিওলজিক্যাল পরিবর্তন সাধিত হয়। এ সময় পিটুইটরি, থাইরয়েড ও অ্যাডরিনাল গ্রন্থির কর্মকান্ড বৃদ্ধি পায়। ফলে বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন ও স্টেরয়েড হরমোন তৈরি হয়ে থাকে। ফলে নানা রোগ ও উপসর্গ দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় নারীর দেহ ও শরীরে যে অভাবনীয় পরিবর্তন হয় তা স্বাভাবিক। গর্ভবতী মায়ের স্তনের বোঁটা ও তার আশপাশের ত্বক, যৌনাঙ্গের বাইরের দিকের ত্বক কালচে রঙের হয়। কিছু ক্ষেত্রে বগল ও উরুতেও একই ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হচ্ছে মুখে মেছতা, যা প্রায় ৫০ ভাগ মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় দেখা দেয়। প্রসব করার পর কিছু দিনের মধ্যে এ পরিবর্তিত রঙ আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে থাকে। শুধু মেছতা নয়, মুখে সামান্য পরিমাণে নতুন করে অবাঞ্ছিত লোম গজায়, যা সাধারণত প্রসবের পর কমে যায়। অনেক ক্ষেত্রে জটিল অপারেশন বা অপারেশনের মাধ্যমে প্রসব করালে এবং মানসিক চাপ থাকলে রোগীর এক মাস বা তার অধিক ছয় মাসের মধ্যে বেশি পরিমাণে চুল পড়ে যেতে পারে, যা আবার ফিরে আসে। গর্ভবস্থায় ত্বক ফাটাও একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। গর্ভাবস্থায় ত্বকের ওপর চাপ পড়ার কারণে ত্বক প্রসারিত হয়। এছাড়া ভ্রূণ বড় হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে পেট বড় হতে থাকে। তখন ত্বকে বিশেষ ফাটল দেখা দেয়। এ অবস্থাকে বলা হয় স্ট্রাইয়া ডিসটেসসি, ৯০ ভাগ গর্ভবতীর ক্ষেত্রে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে। পেট ছাড়াও কোমর ও নিতম্বে এবং কদাচিৎ স্তনেও এ পরিবর্তন হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় কখনও কখনও পেমফিগোয়েড জেসটেশনস হয়, যার ফলে গর্ভবতীর পেটে লালচে দানা বা উদ্ভেদ হতে দেখা যায়। বেশিরভাগ গর্ভবতীর শেষ তিন মাসের দিকে এ লক্ষণটি দেখা দেয়। এ দানা বা উদ্ভেদ এক হয়ে মিশে গিয়ে পুরো স্থানেই একটি লালচে ভাব সৃষ্টি করে। এতে থাকে অস্বাভাবিক রকমের চুলকানি। এ অবস্থায় রাতে গর্ভবতী ঘুমাতে পারে না। কখনও কখনও এ চুলকানির কারণে কষ ঝরতে থাকে। এগুলো ছড়াতে ছড়াতে নিতম্বে ও উরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এ অবস্থা বাহুতে ছড়িয়ে পড়ে; কিন্তু কখনও মুখমন্ডলে দেখা যায় না।
গর্ভাবস্থায় লিভারের সমস্যা বা সিস্টেমের কারণে শরীরে চুলকানি শুরু হয় আবার জন্ডিস দেখা দেয়। প্রথম দিকে যে চুলকানি দেখা দেয়, তা রাত্রিকালীন, আবার সারা শরীরেও বিস্তার ঘটতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে বমি ও শারীরিক দুর্বলতাও বিদ্যমান থাকে। সাধারণত সন্তান প্রসবের কিছুদিন পর এ সমস্যা থাকে না। মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় মায়েদের যেসব রোগ দেখা দেয় তা বিরল নয়। এসব থেকে পরিত্রাণ বা সঠিক সেবা পেতে হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ও সেবা জরুরি। কেননা একজন সুস্থ্য মা পারেন একজন সুস্থ শিশু জন্ম দিতে।
ডা. এসএম বখতিয়ার কামাল
সহকারী অধ্যাপক (চর্ম -যৌন -অ্যালার্জি)
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
কামাল স্কিন সেন্টার।
মোবাইল: ০১৭১১৪৪০৫৫৮।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন