নিম্ন আয়ের দেশগুলো করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ইউরোপ ও আমেরিকার ধনী দেশগুলো এরই মধ্যে এই ভ্যাকসিনের বৈশ্বিক সরবরাহের প্রায় সবটাই তাদের জনগণের স্বার্থে নিজেদের দখলে নিয়ে গেছে এবং এর ফলে নিম্ন আয়ের দেশগুলো ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
গতকাল শুক্রবার ইউনূস সেন্টারের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ড. ইউনূসের এ বক্তব্য তুলে ধরা হয়। এতে ড. ইউনূস বলেন, এর ফলে কোভ্যাক্সের মতো প্রশংসনীয় এই ভ্যাকসিন বর্তমান পদ্ধতিতেও ২০২১ সালের শেষে পৃথিবীর সর্বত্র পৌঁছানো যাবে না। উত্তর গোলার্ধকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোসের এই জরুরি সতর্কবার্তা বোঝানো যাচ্ছে না যে, সবাইকে নিরাপদ না করা পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়। প্রেস বিজ্ঞপিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে একটি বৈশ্বিক সর্বসাধারণের সামগ্রি হিসেবে ঘোষণা করতে গত জুন মাসে নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বব্যাপী এক প্রচারাভিযান শুরু করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ২৪ জন নোবেল লরিয়েট এবং ১২৫ জন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বরা একাজে তার সঙ্গে যোগ দেন। আসন্ন ইউরোপীয় রাষ্ট্রপ্রধানদের ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের সম্মেলন, দ্যা ট্রিপস সম্মেলন, ডাবিøউটিও সম্মেলন ও আফ্রিকান ইউনিয়ন সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রফেসর ড.ইউনূসের শুরু করা ও আভাজ সমর্থিত এই পিটিশনে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ মানুষ স্বাক্ষর করেছেন। যেখানে তারা তাদের সরকার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানদেরকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা প্রযুক্তিকে এর কারিগরি বিষয়গুলো শেয়ার করার মাধ্যমে ও এগুলোকে বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানা সংক্রান্ত বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত রেখে এই ভ্যাকসিনকে পৃথিবীর সর্বত্র সহজলভ্য করার আবেদন জানিয়েছেন। আভাজ বিশ্বব্যাপী প্রচারিত এই পিটিশনে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে স্বেচ্ছাসেবামূলকভাবে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানা ও প্রযুক্তি হস্তান্তর করার মাধ্যমে এই ভ্যাকসিনকে পৃথিবীর সর্বত্র, সবচেয়ে কম খরচে ও সবচেয়ে কম সময়ে সব মানুষের জন্য সহজলভ্য করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
ড. ইউনূস বলেন, সা¤প্রতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হলে সব দেশকে জরুরিভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সামগ্রীসমূহ সংগ্রহ করতে হবে। সর্বনিম্ন খরচে সরবরাহের জন্য কার্যকর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণদের যেমন- স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্ক মানুষদেরকে যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন দিতে হবে। এজন্য প্রায় ১০০টি দেশ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ও এর চিকিৎসা প্রযুক্তির প্যাটেন্ট ও বুদ্ধিবৃত্তিক মালিকানার ওপর একটি ব্যাপকভিত্তিক সাধারণ স্বত্বত্যাগ জারি করতে এ মাসে একটি প্রস্তাবে সমর্থন দিতে যাচ্ছে। এইচআইভি এইডস মহামারিতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা, যেখানে বিপুল মানুষ নিরর্থক প্রাণ দিয়েছে, এই প্রস্তাবের কো-স্পন্সর। কোভিড ভ্যাকসিনকে প্যাটেন্টমুক্ত করতে একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি এবং এই ভ্যাকসিন একটি বৈশ্বিক সর্বসাধারণের সামগ্রি- এই বার্তা পরিষ্কারভাবে পৌঁছে দিয়ে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে দেয়া যেতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রফেসর ইউনূসের এই উদ্যোগ যে বিষয়টির ওপর জোর দিচ্ছে তা হলো, মানুষের জীবন রক্ষার মতো একটি মৌলিক প্রশ্নে কোনো ‘উত্তর-দক্ষিণ’ বিভাজন কাম্য নয়, বিশেষত সেসব দেশের ক্ষেত্রে যেখানে পৃথিবীর জনসংখ্যার বড় অংশ বাস করে। এখন সময় এসেছে এ-২০ নেতাদের এটা প্রমাণ করা যে, কাউকে পেছনে ফেলে না রাখতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি না করতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বছরের জুন মাসে তার প্রথম আবেদনের পর প্রফেসর ইউনূস পিপলস ভ্যাকসিন অ্যালয়েন্স এ যোগ দেন এবং জাতিসংঘ, বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং সিদ্ধান্ত প্রণেতাদের কাছে পৌঁছাতে বিভিন্ন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান যেমন ও অ্যালায়েন্সভুক্ত ২০টি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন। কোভিড-১৯- ভ্যাকসিনকে একটি বৈশ্বিক সর্বসাধারণের সামগ্রি হিসেবে ঘোষণা করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি সিদ্ধান্তের খসড়া প্রণয়নে অ্যালায়েন্স একযোগে উদ্যোগ নিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন