রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর নিপীড়ন আরো বাড়ছে

দ্য ইকোনমিস্ট | প্রকাশের সময় : ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

২০০৬ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেন, তখন তার দেশের মানুষ সেই আনন্দ রাস্তায় রাস্তায় উদযাপন করেন। তিনি ১৯৮০-এর দশকে দরিদ্রদের জন্য ক্ষুদ্র তবে উচ্চ-সুদের ‘মাইক্রো লোন’ চালু করেছিলেন। তার সেই মডেল সারা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে সাহায্য করেছিল। দেশে-বিদেশে তিনি হয়ে ওঠেন বহুল পরিচিত একটি নাম।

কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে সেই চিত্রটি পাল্টে গেছে। এখন তিনি উদযাপনের উপলক্ষ হওয়ার পরিবর্তে শিকারে পরিণত হচ্ছেন। এ মাসে তাকে নিজের ব্যবসার বিষয়ে জবাবদিহি করতে উপস্থিত হতে হবে দুর্নীতি দমন কমিশনে। পাশাপাশি তার সহযোগীদের মতো তিনিও দেশত্যাগে বিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। এক দশক ধরে তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন, সেই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ ঘটনা হলো দুর্নীতি দমন কমিশনে ইউনূসকে উপস্থিত হতে সমন জারি। সরকার দাবি করে, তাদের লক্ষ্য হলো দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা। কিন্তু ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত এটাই সাক্ষ্য দেয় যে, বাংলাদেশে একনায়কতন্ত্রের উত্থান ঘটছে, যা দেশের নাগরিক সমাজের জন্য স্থান ক্রমশ সঙ্কুচিত করছে।

ড. ইউনূসের পরিণতি এটাই ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশে সামাজিক উদ্যোগ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৭০ এর দশক থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমিক সরকারগুলো উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের মতো সংগঠনের কাজগুলোকে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে এসে তারা উদ্বিগ্ন হতে শুরু করে যে, এ ধরনের গ্রুপ নিজেদের মতো খুব বেশি শক্তি সঞ্চয় করছে।

নরওয়ের একটি ডকুমেন্টারিতে অভিযোগ করা হয় যে, ড. ইউনূস ১৯৯০ এর দশকে নরওয়ের একটি এইড এজেন্সির ডোনেশন অন্যখাতে স্থানান্তর করেছেন। কিন্তু নরওয়ে সরকার তদন্তে এ অভিযোগের কোনো সত্যতা পায়নি। ওই ডকুমেন্টারি প্রকাশের কমপক্ষে এক দশক আগে ড. ইউনূসের ব্যবসার বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী হয়তো এ জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে থাকবেন যে, ইউনূস কার্যকর এক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারেন। কারণ, তিনি ২০০৭ সালে সামরিক শাসনের সময়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য রাজনীতিতে এসেছিলেন। এটা সেই সামরিক শাসনের সময়, যারা শেখ হাসিনাকে জেলে পাঠিয়েছিল। ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ- তিনি ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন। গরিবের রক্তচোষা বলে নিন্দিত করেছিলেন এবং গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ ব্যবসা, এমনকি তার ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ে তদন্ত চালু করেন।

শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরেন, ইউনূসকে নিয়ে তার সন্দেহ গভীর হয়। ইউনূসের বাধ্যতামূলক অবসরের বয়স ৬০ পেরিয়ে গেছে- এ অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ২০১১ সালে সরিয়ে দেয় সরকার। ওই সময় মুহাম্মদ ইউনূসের বয়স ছিল ৭০ বছর। তিন বছর পর এ ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের পুরোটাই দখল করে সরকার। বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগ উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক ১২০ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে। ফলে ২০১২ সালে পদ্মা নদীতে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা সাময়িক সময়ের জন্য বিচ্যুত হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরিয়ে দেয়ার কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে তদবির করেছেন, যাতে তারা পদ্মা সেতুতে অর্থ দেয়া থেকে বিশ্বব্যাংককে নিরুৎসাহিত করে।

চীনের সহায়তায় নির্মিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় এ বছরের আরো আগে এ অভিযোগকে দ্বিগুণ করেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশিদেরকে তিনি বলেন যে, ইউনূসকে পদ্মা নদীতে চুবানো উচিত। সরকার বলেছে, বিশ্বব্যাংক কেন এ প্রকল্প থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল, তার তদন্ত করবে তারা। এর সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন ইউনূস। জুলাই মাসে সরকার আলাদা একটি তদন্ত শুরু করে এ অভিযোগে যে, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন ইউনূস। গ্রামীণ টেলিকম এবং ইউনূস এ অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছেন। তখন থেকে এ তদন্ত আরো বিস্তৃত হয়েছে। গ্রামীণ নাম ব্যবহার করে এমন অন্য কোম্পানি এবং সংগঠনের বিরুদ্ধে এ তদন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এমনকি বিদেশে আছে এমন কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও তদন্ত হচ্ছে।

আগামী বছর বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার বিষয়ে শেখ হাসিনা উদ্বিগ্ন। এ কারণেই তিনি সাম্প্রতিক তদন্ত করাচ্ছেন বলে এর সময়কাল বলে দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, আগস্ট থেকে হাজার হাজার সমালোচক ও বিরোধী দলীয় সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগে মামলা করেছে সরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল মনে করেন, ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক খ্যাতি প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এ শাসকগোষ্ঠীর কোনো বিকল্প খোঁজে তাহলে এ প্রক্রিয়ায় ড. ইউনূস হতে পারেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ- যদি তিনি তা চান। যদিও ড. ইউনূস ২০০৭ সালে রাজনীতিতে তার নিষ্ক্রিয় পদার্পণের পর এমন কোনো প্রবণতা দেখাননি। তারপরেও শেখ হাসিনা মনে হচ্ছে ঝুঁকি নিতে নারাজ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Yusuf samin ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ৭:০০ এএম says : 1
ডঃ ইউনুস একজন মুসলিম ও পন্ডিত হওয়া সত্ত্বেও সুদখোর ও বাংলাদেশের সুদখোরদের কাছে হিরো ।
Total Reply(1)
Harunur Rashid ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ৯:৫৭ এএম says : 0
Jahanara Begum ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ৬:৫৯ এএম says : 0
সারা বিশ্বে তিনি প্রশংশিত। শুধু বাংলাদেশ ছাড়া
Total Reply(0)
Habib ১৫ অক্টোবর, ২০২২, ৬:৫৯ এএম says : 0
আরো বাড়বে কারণ এই অবৈধ সরকারের জন্য ড. ইউনুস একটি আতংকের নাম
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন