হালকা বাতাস থেকে সুপেয় পানি উৎপাদনের প্রযুক্তি সরবরাহে আমিরাতের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে ইসরাইল। খবর জেরুজালেম পোস্টের।
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পর মধ্যপ্রচ্যের মুসলিম দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের চুক্তি করে চলেছে ইহুদিবাদী দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
আরব আমিরাতের কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আল-ডাহরার সঙ্গে ইসরাইলের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ওয়াটারজেনের সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তির আওতায় ওয়াটারজেন বায়ু থেকে পানি উৎপাদন করে আমিরাতের কৃষি খাত থেকে শুরু করে হাসপাতালেও তা সরবরাহ করবে।
ওয়াটারজেনের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী ড. মাইকেল মিরিলাশভিলি বলেন, পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে এবং বিদ্যুতের ব্যবহার ছাড়াই এ পদ্ধতিতে প্রতিদিন ৫ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন করা সম্ভব। গ্রাম বা শহর থেকে দূরের কোনো বসতিতে এ প্রযুক্তিতে পানি উৎপাদন করা সবচেয়ে বেশি কার্যকর।
গত বছর ব্রাজিল, ভিয়েতনাম ও ভারতে এ প্রযুক্তি সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বনে দাবানলের সময় সেখানেও এ প্রযুক্তিতে বায়ু থেকে পানি উৎপাদন করে সেখানকার বাসিন্দাদের জরুরি পানির চাহিদা মেটানো হয়।
হালকা বায়ু থেকে পানি উৎপাদনের যন্ত্র বা প্রযুক্তিটি তৈরি করেছেন ইসরায়েলের ওয়াটার-জেন নামক প্রতিষ্ঠানের একদল গবেষক। তাঁদের তৈরি প্রযুক্তিতে প্রতি লিটার পানি উৎপাদনে মাত্র দুই টাকা (বাংলাদেশি মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী) খরচ পড়বে বলে জানানো হয়েছে। পানি উৎপাদনের ওই প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে ওয়াটার-জেনের গবেষকেরা বলেন, হালকা বাতাস থেকে পানি তৈরির যন্ত্রে ‘জিনিয়াস’ নামক একটি বিশেষ তাপ সঞ্চালনযন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এটির মধ্যে পরিষ্কার বাতাস প্রবাহিত করা হয় এবং সেই বাতাসকে উত্তপ্ত করে পানি আলাদা করা হয়। পরে ওই পানি সংগ্রহ করা হয় যন্ত্রটিতে সংযুক্ত একটি পাত্রে।
ওয়াটার-জেনের সহকারী নির্বাহী কর্মকর্তা আরি কোহাভি বলেন, বাতাস থেকে পানি সংগ্রহ করার পর সেটি পরিস্রাবণ (ফিলট্রেশন) যন্ত্রের মধ্যে প্রবাহিত করা হয়। এতে ওই পানি সব ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ও আণুবীক্ষণিক জীবাণু থেকে মুক্ত হয়। বাজারে পানি সংগ্রহের যেকোনো যন্ত্রের চেয়ে তাঁদের তৈরি যন্ত্রটি বেশি সাশ্রয়ী। হালকা বাতাস থেকে পানি তৈরির প্রযুক্তিটি কঠিন কিছু নয়। কারণ, বর্তমানে বাতাস শীতলীকরণ যন্ত্রেও (এয়ারকন্ডিশনার) বাতাস থেকে পানি পৃথক্করণের ব্যবস্থা রাখা হয়।
কোহাভি আরও বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য এই পানি উৎপাদন যন্ত্র সরবরাহ করা যেতে পারে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিশুদ্ধ পানির সংকট বর্তমানে একটি গুরুতর সমস্যা। ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলে আশঙ্কা করা হয়।
ওয়াটার-জেনের গবেষকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের তৈরি বহনযোগ্য যন্ত্রটি প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৮০০ লিটার পর্যন্ত পানি উৎপাদন করতে পারবে। তবে উৎপাদনের পার্থক্য কোনো স্থানের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করবে। আর প্রতি দেড় টাকা দামের বিদ্যুৎ খরচ করে এক লিটার সমপরিমাণ পানি উৎপাদন করা যাবে। সূত্র : পিটিআই, জেরুজালেম পোস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন