বীজ বিপণন সহ তেল উ’পাদনের কারিগরি সুবিধার অভাবে দেশে বিপুল সম্ভাবনাময় সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেল বীজের আবাদ ও উৎপাদনে কাঙ্ক্ষিত সম্প্রসারন ঘটছেনা। এমনকি পরিবেশগত কিছু সমস্যার কারনেও সূর্যমূখীর আবাদে কৃষকের আগ্রহ ধরে রাখা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহল। অপরদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চল সহ বিভিন্ন এঠাকায় উৎপাদিত সয়াবিনের পুরোটাই পোল্ট্রী ফিড কারখানার ফরিয়ারা মাঠ থেকে সল্পমূল্যে কিনে নেয়ায় এ তেলবীজও দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পুরনে কোন অবদান রাখছেনা। অথচ এ দুটি তেল বীজেরই যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে দেশে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, সয়াবিন ও সূর্যমূখী তেল জনস্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে সয়াবিনে ৪০-৪৫% আমিষ এবং ১৯-২২% পর্যন্ত তেল থাকে। যেকোন ডাল বা শুটি জাতীয় শস্যের তুলনায় সয়াবিনে আমিষের পরিমাণ বেশী। অথচ দাম কম। অপরদিকে সূর্যমুখী একটি অত্যন্ত উৎকৃষ্ট তেল ফসল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ তেল বীজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি তেল ফসল হিসেবে বিবেচিত। সূর্যমুখীর বীজে ৪০-৪৫% পর্যন্ত লিনোলিক এসিড রয়েছে, অথচ এ তেলে কোন ক্ষতিকারক ইরোসিক এসিড নেই। হেক্টর প্রতি ফলনও ১.৭ থেকে ১.৯ টন পর্যন্ত।
দেশে চলতি রিব মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৭. ৭৬ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে সাড়ে ১১ লাখ টনেরও বেশী বিভিন্ন ধরনের তেল বীজ উৎপাদন লক্ষ্য থাকলেও তা চাহিদার অর্ধেকেরও কম। ফলে প্রতি বছর বিপুল পরিমান ভোজ্যতেল ও তেলবীজ বিদেশ থেকে আমদানী করতে গিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। এসব বিবেচনায় সয়াবিন-এর আবাদ স¤প্রসারনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এখনো দেশে যে পরিমান ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে, তার প্রায় ৮০ ভাগেরও বেশী সয়াবিন তেলের। যার প্রায় পুরোটাই আমদানী নির্ভর। কারণ দেশে আবাদকৃত প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে যে প্রায় দেড় লাখ টনের মত সয়াবিন তেলবীজ উৎপাদন হচ্ছে, তার পুরোটাই যাচ্ছে পোল্ট্রি ফিডের কারখানায়। কৃষি মন্ত্রণালয় চলতি মৌসুমে দেশে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে ১.৫২ লাখ টনের।
‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ ইতোমধ্যে উন্নত প্রযুক্তির ও উচ্চ ফলনশীল প্রায় ৪০টি জাতের বিভিন্ন তেল বীজ উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে সয়াবিনের ৬টি এবং সূর্যমুখীর দুটি জাত রয়েছে। বারি ইতোমধ্যে ‘সোহাগ-পিবি-১’, ‘বাংলাদেশ সয়াবিন-৪ বা জি-২’, ‘বারি সয়াবিন-৫’ ও ‘বারি সয়াবিন-৬’ নামের একাধিক উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছে। এসব উন্নতজাতের সয়াবিনের ফলন হেক্টর প্রতি ১.৮০ টন থেকে সোয়া দুই টন পর্যন্ত। দোআঁশ, বেলে দোআঁশ ও এটেল দোআঁশ মাটি সয়াবিন চাষের উপযোগী।
কোন ভোজ্য তেল কল প্রতিষ্ঠান দেশে উৎপাদিত সয়াবিন তেলবীজ কৃষক বা পাইকারী পর্যায়ে না কেনায় দেশে উৎপাদিত প্রায় দেড় লাখ টন সয়াবিন বীজের পুরোটাই চলে যাচ্ছে পোল্ট্রি ফিডের কারখানায়। বিভিন্ন পোল্ট্রি ফিড কারখানার নিয়োজিত ফরিয়ারারা বরিশাল সহ উপক‚লীয় এলাকার মাঠ পর্যায়ে সয়াবীন বীজ কিনে নিচ্ছে অনেকটা পানির দরে।
অপরদিকে ১৯৭৫ সাল থেকে দেশের উপক‚লীয় এলাকার বরিশাল, পটুয়াখালী ছাড়াও রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর, দিনাজপুর, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় সূর্যমূখীর পরীক্ষামূলক আবাদ হলেও দীর্ঘ চার দশকেও তার কোন স¤প্রসারন ঘটেনি। বাস্তবে এখনো দেশে সূর্যমুখী তেল-এর তেমন কোন বাণিজ্যিক উৎপাদন নেই । ফলে অত্যন্ত সম্ভবনাময় এ তেল বীজের আবাদ ও উৎপাদনও বাড়ছে না। সূর্যমুখীর বীজ-এর বিপনন সুবিধা না থাকায় কৃষকের আগ্রহের অভাবে ডিএই’র মাঠ পর্যায়ে এ তেলবীজ আবাদ ও উৎপাদনে তেমন কোন স¤প্রসারন কার্যক্রমও নেই। বছর কয়েক আগে কয়েকটি এনজিও সূর্যমূখী আবাদে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে কৃষকদের মাঝে বীজ সরবরাহ করলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফলন সংকট সহ বিপনন ব্যবস্থার অভাবে পরবর্তিতে আর কোন স¤প্রসারন ঘটেনি। গত কয়েকটি বছর অতিবর্ষনে দক্ষিণাঞ্চলে আবাদকৃত সূর্যমূখীর উৎপাদন বিপর্যয়ের কবলে পড়ে। এছাড়া প্রতি বছরই আবাদকৃত জমির সূর্যমুখী ফুলের বাগানে টিয়া পাখির আক্রমনে এ তেলবীজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে কৃষক টিয়ার আক্রমন বাঁচিয়ে বীজ ঘরে তুলতে পারছে না। এ বিষয়টিও সূর্যমুখী আবাদে কৃষকের আগ্রহ হৃাস পাচ্ছে।
চলতি মৌসুমে সারাদেশে মাত্র সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে সূর্যমূখীর আবাদের মাধ্যমে সাড়ে ১১ হাজার টনের কিছু বেশী বীজ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে। বারি এ পর্যন্ত ‘কেরানী-ডিএস-১’ ও ‘বারি সূর্যমুখী-২’ নামের দুটি উন্নত জাতের সূর্যমুখী ফুলের জাত উদ্ভাবন করলেও কৃষক পর্যায়ে তার তেমন কোন স¤প্রসারন ঘটেনি। কারণ উৎপাদিত সূর্যমূখি তেল বীজবিপননের তেমন কোন সুযোগ এখনো তৈরী হয়ুনি দেশে। অথচ সূর্যমুখি তেল চিকিৎসা বিজ্ঞানে একটি অত্যন্ত উপকারী ভোজ্য তেল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন