মো. আতিকুল্লাহ (গফরগাঁও) থেকে : সময় ঘনিয়ে আসছে। ঈদুল আজহাকে (কোরবানি ঈদ) সামনে রেখে গফরগাঁও পৌরসভাসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে গ্রামাঞ্চলের খামারিরা এখন পুরোদমে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে গরু মোটাতাজা করার জন্য। কৃষকের পাশাপাশি শিক্ষিত বেকার যুবকও এসব কাজে বেশি করে মনোনিবেশ করছে। অধিক মুনাফা লাভের আশায় গরু পালনের এ পথ বেছে নিয়েছে খামারিরা। অনেকেই আবার যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে গরু মোটাতাজাকরণের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এতে করে বেকারদের কিছুটা আর্থিক সুবিধা হয়েছে। যতই সময় ঘনিয়ে আসছে ততই গরু মোটাতাজা করে ভাল দাম পাওয়ার জন্য গরুর পরিচর্যা নিয়ে গ্রামবাংলার কৃষককুল ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। গরুর খড়, তাজা ঘাস, খৈল ও ভুসি ছাড়াও খাওয়ানো হচ্ছে হরেক রকমের পুষ্টিকর খাবার। পশু ডাক্তারকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা করানো হচ্ছে গরুর চিকিৎসা। আবার দ্রত গরু মোটাতাজা করার জন্য খাওয়ানো হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকারক দেশী-বিদেশী ওষুধ। তবে বর্তমানে গরুর খাবারের দাম অনেক বৃদ্ধির ফলে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। খড়, খৈল ও ভুসির দাম প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এত খরচ করে গরু পালনে লাভ হয় না বললেই চলে। এদিকে গ্রামাঞ্চলের কিছু কিছু অশিক্ষিত হাতুড়ে ডাক্তার গরু দ্রæত মোটাতাজাকরণের লোভ দেখিয়ে ক্ষতিকারক দ্রব্য দিয়ে গরুমোটা তাজা করছে। ফলে কিছুদিন পরে গরু শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। গফরগাঁও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. জুলহাস আহমদ খান জানান, ক্ষতি হবে এমন ধরনের ওষুধ গরুকে খাওয়ানো ঠিক হবে না। দেশীয় ঘাস বা হরেক রকমের ভাল খাবার খাওয়ানো হলে গরু স্বাভাবিকভাবে মোটা হতে পারে। ক্ষতিকারক ওষুধ বন্ধের জন্য সরকারিভাবে ওষুধ প্রশাসনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। গবাদি পশু খামার মালিকগণ সচেতন হলে গ্রাম্য হাতুড়ে অসৎ চিকিৎসকের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। তিনি আরও জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগে জরুরিভাবে জনবল বৃদ্ধি করা হলে আবহমান গ্রামবাংলার ইউনিয়ন পরিষদের সকল এলাকায় সেবা দিতে পারবে। ইতোমধ্যেই গফরগাঁও সালটিয়া, কান্দিপাড়াসহ বিভিন্ন হাটবাজারে কিছু কিছু কোরবানির গরু উঠতে দেখা গেছে। তবে কিছু কিছু গরু কোরবানির জন্য বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে দাম অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে গরুর মালিকরা মনে করছেন। বিশেষ করে ভারতীয় গরু দেশে না আসার কারণে দেশীয় গরুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গফরগাঁও ইউনিয়নের পাঁচপাইর বাজারে গরু ব্যবসায়ী মো. নবী হোসেন জানান, গরুর পরির্চযা করতে আমার হাজার হাজার অর্থ ব্যয় হয়েছে। আশা করি এবারের দাম অনেক বাড়তে পারে। দেশী গরুর জন্য ইতোমধ্যে গফরগাঁও উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত আবহমান গ্রামবাংলার বাজারগুলোতে ভুসির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গরুর জন্য প্রচুর পরিমাণের ভুসির প্রয়োজন হয়ে থাকে।
অন্যদিকে গরু খাওয়ানোর জন্য নি¤œমানের লবণের বস্তার দামও অনুরূপভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়তই। গফরগাঁও বাজারের মনোহারী দোকানের মালিক জীবন মোদক জানান, লবণ ও ভুসির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। কোরবানির ঈদে দেশী গরুর ভালো দামের আশায় মহিলারাও পিছিয়ে নেই। ১১টি মাস গরুর প্রতি নজিরবিহীন যতœ নিয়ে থাকে ভাল দামের আশার। মোছাঃ তাহমিনা নামে এক গরুর মালিক জানান, ভাইয়ে প্রায় একটি বছর নিজের সন্তানের মতো যতœ নেই। ভালো দামে যেন বিক্রি করতে পারি। তবে গরুর প্রতি মায়ামমতা জমে যায়। বিক্রি করার সময় বড় কষ্ট পাই। দৈনিক প্রতি গরুর জন্য কমপক্ষে ১০০ টাকার ওপর খরচ হয়ে থাকে। গরু থাকার গোয়ালঘরে ফ্যান ও কয়েল দিতে হয়, যাতে গরুর কোনো ধরনের কষ্ট না হয়। গ্রামবাংলার হাটবাজারে দেশী গরুর চাহিদা বেশি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন