বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ইসির বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ২১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশের বিশিষ্ট ৪২ জন নাগরিক বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা মহামান্য প্রেসিডেন্টের কাছে লিখিতভাবে এ দাবি করেছেন। তাদের অভিযোগ: কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সরাসরি আর্থিক অনিয়মে জড়িত। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে নির্বাচন সংক্রান্ত গুরুতর অসদাচারণের বহু অভিযোগ। আর্থিক অনিয়মের উল্লেখ করতে গিয়ে বলা হয়েছে, বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তৃতা দেয়ার নামে কমিশনাররা ২ কোটি টাকা গ্রহণ করেছেন। কমিশনে নিয়োগের নামে ৪ কোটি ৮ লাখ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য নির্বাচন কমিশনাররা ৩টি গাড়ি ব্যবহার করেছেন। ইভিএম কেনায়ও আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে বহু গুরুতর অসদাচারণ ও অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে। বিশিষ্ট ৪২ নাগরিক এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে মহামান্য প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানিয়েছেন। সংবিধানের ৯৬(৩) অনুচ্ছেদে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান রয়েছে। তারা এই অনুচ্ছেদের আলোকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। অনেকেই বিশিষ্ট নাগারিকদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ অবশ্য বিলম্বের জন্য সমালোচনা করেছেন। তাদের উদ্দেশে বলা যায়, না হওয়ার চেয়ে বিলম্বে হওয়াও ভালো। এই বিশিষ্ট ৪২ নাগরিক জাতীয় বিবেকের কণ্ঠস্বরের ভূমিকা নিয়েছেন। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই।

কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই বিতর্কিত। এর গঠনের প্রক্রিয়া ও কৌশল নিয়ে তখনই প্রশ্ন ওঠে। অভিযোগ করা হয়। সরকার তার অনুগত একটি কমিশন গঠনের জন্য যা করার সেটাই করে। নির্বাচন কমিশন দৃশ্যত যে আকার লাভ করে তাতে যার যা বোঝার ঠিকই বুঝতে পারে। এ নির্বাচন কমিশন যে স্বাধীন ও পক্ষপাতহীন ভূমিকা পালন করতে পারবে না, সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। সেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে এ যাবৎ যত উপনির্বাচন, সিটি নির্বাচন ও স্থানীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার কোনোটিই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়নি। এই নির্বাচন কমিশন শুধু নির্বাচন ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দেয়নি, গণতন্ত্রকেও প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর প্রতিপন্ন করেছে। প্রতিটা নির্বাচনের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের সুষ্ঠুতা, অবাধতা, নিরপেক্ষতা ও গণঅংশগ্রহণের উচ্চ প্রসংশা করেছেন। দিনের ভোট রাতে হওয়া, ভোটারদের উপস্থিতি কম হওয়া, ভোট জালিয়াতি ও যথেচ্ছ সিলমারা, ব্যালট পেপার ও বাক্স ছিনতাই করাসহ সরকার বিরোধী প্রার্থীদের দমন, পীড়ন, গ্রেফতার এবং তাদের এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া ইত্যাদির পরও নির্বাচনের প্রশংসা করতে তার শিষ্টতায় বাঁধেনি। তার কথা-বার্তা, আচরণ ও বডি ল্যাংগুয়েজে এক ধরনের ড্যামকেয়ার ভাব লক্ষ করা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়েও তিনি মন্তব্য করেছেন, যা ধৃষ্টতার নামান্তর বলে অনেকেই মনে করেছেন। অন্য নির্বাচন কমিশনারদের প্রায় সবাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অনুসরণ করেছেন। এভাবে তারা একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অথর্ব ও অপ্রয়োজনীয় করে দিয়েছেন।

দেশের রাজনীতি, গণতন্ত্র, নির্বাচনব্যবস্থা, ভোটাধিকার এবং নির্বাচন কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এখন যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, তার জন্য হুদা কমিশন দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। সরকারের আজ্ঞাবহ, দুর্বল, অদক্ষ ও ব্যর্থ এই নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই করা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাতে কর্ণপাত করছে না। একবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছিলেন। বিশিষ্ট নাগরিকদের এ উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে টিআইবি’র তরফে নির্বাচন কমিশনকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়, এ পরামর্শ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার বিবেচনায় নেবেন বলে মনে হয় না। সে ক্ষেত্রে কমিশনের বিরুদ্ধে সাংবিধানিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এরকম অন্ধ, বধির, কালা, একগুঁয়ে, অপরিণামদর্শী, শরমহীন নির্বাচন কমিশন অতীতে দেখা যায়নি। তার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসদাচারণের যে অভিযোগ উঠেছে, সেরকম অভিযোগ কোনো নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেই ওঠেনি। এ কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না, এই নির্বাচন কমিশন যতদিন বহাল আছে ততদিন গণতন্ত্র, ভোটাধিকার নিশ্চিত হওয়ার আশা নেই। দুরাচার ও দুর্নীতির কবল থেকে মুক্তির সম্ভাবনাও নেই। এমতাবস্থায়, উত্থাপিত অভিযোগগুলোর দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। পুরো কমিশনকেই তদন্তের আওতায় আনতে হবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেহেতু এই কমিশন শুরু থেকে বিতর্কিত এবং এতদিনে অভিযোগের পাহাড় জমেছে; সুতরাং সাংবিধানিক পদক্ষেপের মাধ্যমে তার অপসারণ এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিশিষ্ট নাগরিকরা রাষ্ট্রের অভিভাবক মহামান্য প্রেসিডেন্টের কাছে যে আবেদন জানিয়েছেন, তিনি তা আমলে নেবেন বলেই আমরা আশা করি।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন