সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

করোনার এই শীতে ভালো থাকার উপায়

| প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

ঋতু পরিবর্তনের পালাক্রমে শীতের আগমনী বার্তায় সর্বত্রই সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, বাতব্যথা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাসহ নানান ধরনের অসুখ-বিসুখ পরিলক্ষিত হয়। এবার এই করোনা অতিমারির সময়েও এর ব্যতিক্রম নয়। আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে অনেকেই কিন্তু সহজে নিজেকে উক্ত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। ঋতু পরিবর্তনকালীন পরিবর্তিত আবহাওয়ার সাথে দ্রুত খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য দেহাভ্যন্তরে বিভিন্ন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া চলতে থাকে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। শীতকালে বাতাসে তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতাও কমে যায়, যা আমাদের শ্বাসনালির স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে করোনা ও অন্যান্য ভাইরাসের আক্রমণকে সহজ করে দিচ্ছে। তাই শীতকাল বিভিন্ন রোগ জীবাণু বিশেষতঃ ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত অনুকূল। শীতের এ সময়টাকে নানা ধরনের অসুখ-বিসুখ মানুষকে বেকায়দায় ফেলে দেয়, যেমন- ঠান্ডা, সর্দি, কাশি খুসখুসে কাশি, হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া, শরীর ব্যথা, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, গলাব্যথা, জ্বরসহ শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা। তাই শীতের তীব্রতা মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যাহত করে।

শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় বৃদ্ধ ও শিশুরা। পশু-পাখি, জীবজন্তুর কষ্ট অপরিসীম। শীতের শুষ্ক হওয়ার দাপটে ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে পড়ে। ত্বক দেখতে লাগে অমসৃণ ও খসখসে। তাই এই শীতের মৌসুমে ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

শীতকালে ভালো খাবার উপায় ও ত্বকের পরিচর্যা:
* সবার প্রথমে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখাটা খুব দরকার, তাই প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে আর বারবার পানির ঝাপটা চোখে মুখে দিতে হবে। ঠান্ডার কারণে শীতে পানি কম পরিমাণে খাওয়া হয়। এটা কিন্তু একদমই ঠিক নয়। প্রতিদিন ৩-৫ লিটার পানি খাওয়া উচিত। তাতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকে।

* প্রতিদিন স্বাভাবিক ঠান্ডা পানিতে গোসল করুন, এতে ত্বকের তৈলাক্ততা বজায় থাকবে। বেশী উষ্ণ-গরম পানি আপনার শরীরের তৈলাক্ত ভাব নষ্ট করে দেয়।

* প্রতিদিন গোসলের আগে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।
* গোসলের পরে ভালো করে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগান।
* রোদে বেড়ানোর ৩০ মিনিট আগে যেকোনো সানস্ক্রিম ব্যবহার করুন।
* ত্বক ভালো রাখতে পুষ্টিযুক্ত খাবার খান। যেমন- সবুজ শাকসবজি, মাছ, দুধ, ডিম ইত্যাদি
* বেশি করে টাটকা ফল খান। যেমন- আপেল, কমলালেবু, আনারস, পাকা পেঁপে ইত্যাদি
* ত্বকে টমেটোর রস লাগালে খুব ভালো ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে।
* আনারস, আপেল, পেঁপের রস মধুর সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বকের জেলা দেয়।
* ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখতে অলিভ অয়েলের সাথে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে লাগান।

* কয়েক ফোঁটা মধুর রস অলিভ অয়েল এর সাথে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট ফাঁটা কমবে তা ছাড়াও আপনি ঠোঁটে জেল, পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন।

* রাতে শোবার আগে হাতে-পায়ে ভালো করে ময়েশ্চারাইজার ক্রিম লাগিয়ে নিন।

গরম পোশাক : * শীতে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেশি থাকে। শীতে ভাইরাস সংক্রান্ত রোগ (যেমন-সর্দি, কাশি) থেকে দূরে থাকতে গরম পোশাক পরুন। গরম পোশাক পরার সাথে সাথে খেয়াল রাখবেন সেটি যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়, কারণ অপরিচ্ছন্ন জামা-কাপড়ে করোনা ও অন্যান্য ভাইরাসের সংক্রমন বেশি হয়। বিশেষ করে শিশুদের সব সময় পরিষ্কার গরম পোশাক পরিয়ে রাখার অভ্যাস করুন যাতে ঠান্ডা না লাগে। শীতে ভালো থাকার উপায় ও গরম পোশাকের অবদান অপরিহার্য।

পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন: * যখন আমরা শীতে ভালো থাকার উপায় বিষয়টি আলোচনা করি, তখন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার কথা এড়িয়ে যেতে পারি না। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে আমাদের শরীর ড্রি-হাইড্রেট হয় না। প্রতিদিন অন্তত ৮-৯ গ্লাস পানি পান করুন। দাঁড়িয়ে পানি পান করা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

* যারা শীতকালে অতিসংবেদনশীলতার কারণে সর্দি, কাশি, ঠান্ডাসহ বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হন, তারা শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন উষ্ণ গরম পানি বা গরম পানীয় হিসেবে জোশিনা চা দিয়ে দিনটা শুরু করুন। তাতে শরীরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে, ঠান্ডা কম লাগবে এবং সেই সাথে শীতকালীন বিভিন্ন সমস্যা থেকেও আপনি মুক্তি পাবেন।

* শীতের সকালে-বিকালে নাক বন্ধ মনে হলে নাক দিয়ে গরম পানির ভাপ নিলে ভালো বোধ হয়। উপকার বেশি পেতে হলে গরম পানিতে কিছু ফিটকিরি দিয়ে ভাপ নিলে বন্ধ হওয়া নাক পরিষ্কার হয়ে যাবে।

* কিছু কিছু মানুষের শীতের তীব্রতায় হাতের আঙ্গুল নীল হয়ে যায়। তারা অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করবেন যেন কোনোভাবেই ঠান্ডা না লাগে। তারা হাতে পায়ে মোজা ব্যাবহার করুন।

* যাদের অ্যালার্জি আছে তাদেরকে অবশ্যই ধুলোবালি, ফুলের রেণু ও ডাস্ট এড়িয়ে চলতে হবে, মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, ঠান্ডা এড়িয়ে চলা, অ্যালার্জি তৈরি করে এমন বস্তু থেকে দূরে থাকা বুদ্ধিমানের কাজ। তাই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দুরত্ব বজায় চলা ও মাস্ক ব্যবহার জরুরি।

ডা: মাও: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা : ০১৭১৬২৭০১২০

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন