মৌসুমসূচক টুর্নামেন্ট ফেডারেশন কাপের শেষ আটে কষ্টের জয়ে সেমিফাইনালে জায়গা পেল ঢাকা আবাহনী লিমিটেড। গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালের শেষ ম্যাচে আবাহনী ১-০ গোলে অপেক্ষাকৃত দূর্বল উত্তর বারিধারা ক্লাবকে হারিয়ে সেমিতে নাম লেখায়। বিজয়ী দলের হয়ে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড ফ্রান্সিসকো রদ্রিগেজ ডি সৌসা ফিলহো।
কাল জিতলেও ম্যাচের যোগকরা সময়ের শেষ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে আবাহনীকে। বলা যায় পুরো ম্যাচে উত্তর বারিধারা ঘাম ঝরিয়ে ছেড়েছে আবাহনীর! জয়সূচক যে গোলটি পেয়েছে ঢাকার আকাশী-হলুদরা তা নিয়েও হয়েছে বাক বিতন্ডা। ফলে কিছুক্ষণ খেলা বন্ধও থেকেছে। ডাগ আউট থেকে বারিধারার এক কর্মকর্তা চিৎকার করে রেফারি আলমগীর সরকারকে কিছু বললে এই অপরাধে তাকে লালকার্ড দেখে মাঠ থেকে বের হতে হয়।
ম্যাচের শুরু থেকে বারিধারার খেলা দেখে মনেই হয়নি তারা দেশের ফুটবলের জায়ান্ট ঢাকা আবাহনীর বিপক্ষে লড়ছে। ম্যাচে আবাহনীর চেয়ে তারাই ছিল বেশি আক্রমণাত্মক। তবে নিজেদের গুছিয়ে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে আবাহনী নিশ্চিত গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেও নির্ধারিত ৯০ মিনিটে সফল হয়নি। বারিধারার গোলরক্ষক মামুন আলিফের দৃঢ়তায় অন্তত তিনটি গোল থেকে গোলবঞ্চিত হয় আবাহনী। ম্যাচের ১৭ মিনিটে বেলফোর্টকে ট্যাকল করেন উত্তর বারিধারার মিডফিল্ডার পাপন সিং। ব্রাজিলিয়ান ফ্রান্সিসকো ডি সৌসার ফ্রি কিক সরাসরি চলে যায় বারিধারার গোলরক্ষকের গ্রিপে। পাল্টা আক্রমণে যায় বারিধারা। ৩৭ মিনিটে বল পেয়ে ৬০ গজ দূর থেকে অধিনায়ক সুমন রেজার আচমকা শট লাফিয়ে উঠে কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা করেন আবাহনীর গোলরক্ষক শহিদুল আলম সোহেল। এরপর দু’টি কর্ণার আদায় করে নাবীব নেওয়াজ জীবনদের উপর চাপ সৃষ্টি করে বারিধারা। প্রথমার্ধের যোগকরা সময়ে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙ্গে আবাহনী অধিনায়ক নাবীব নেওয়াজ জীবন বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বারিধারার বক্সে। তার সামনে ছিলেন শুধুই গোলরক্ষক মামুন আলিফ। জীবনের শট প্রথমে রুখে দেন মামুন। ফিরতি শটও রুখে দেন তিনি। এরপর বেলফোর্ট এগিয়ে এসে শট নিলে বারিধারার এক ডিফেন্ডার ফিরিয়ে দিলে এ যাত্রায়ও গোলের দেখা পায়নি আবাহনী। গোলশূণ্য প্রথমার্ধ শেষ হলে বিরতির পর গোল পেতে মরিয়া হয়েই লড়ে আবাহনী। কিন্তু বিধিবাম। তাদের সব চেস্টা ব্যর্থ করে দেয় বারিধারার রক্ষণভাগ। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে নিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট করেন আবাহনীর মিডফিল্ডার জুয়েল রানা। এসময় ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ফ্রান্সিসকোর ফ্রি কিক বারিধারার ডিফেন্ডার ঠিকমতো ফেরাতে পারেননি। বল যায় আফগান ডিফেন্ডার মাসিহ সাইঘানির কাছে। তার শট বারিধারার এক ডিফেন্ডার ফেরালেও বল পান জুয়েল রানা। কিন্তু ফাঁকা পোস্ট পেয়ে তিনি বল বাইরে মারেন। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে যোগকরা ৫ মিনিটের খেলায় আসে ম্যাচের ফল। যোগকরা সময়ের শেষ মিনিটে (৯০+৪) নাসিরের থ্রো থেকে মাসিহ সাইঘানির পাস খুঁজে নেয় জীবনকে। বক্সের মধ্যে তার বাড়িয়ে দেয়া বল পেয়ে ফ্রান্সিসকো দারুণ শটে গোল করে জার্সি খুলে আনন্দে মাতেন (১-০)। গোলের আগে বারিধারার মিসরিয়া ফরোয়ার্ড মোস্তফা মাহমুদ আবদেল খালেক ব্যথা পেয়ে মাঠে শুয়ে ছিলেন। রেফারি তা আমলে নেননি। তাই গোলের প্রতিবাদে রেফারির সঙ্গে তর্কে জড়ান বারিধারার ফুটবলাররা। প্রতিবাদ করায় হলুদ কার্ড দেখেন গোলরক্ষক মামুন। বারিধারার অভিযোগ মোস্তফা ব্যথা পাওয়ায় তারা অপ্রস্তুত ছিল। কিন্তু রেফারি খেলা চালিয়ে যান। গোলের প্রতিবাদে বাক বিতন্ডায় পাঁচ মিনিটের যোগকরা সময়ের খেলা শেষ হয় ১০ মিনিটে।
আগামীকাল প্রথম সেমিফাইনালে সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম আবাহনীর। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বিকাল ৪টায় শুরু হবে ম্যাচটি। পরের দিন একই সময়ে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ঢাকা আবাহনীর প্রতিপক্ষ বসুন্ধরা কিংস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন