দেশের মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আরো জোড়ালো ভূমিকা রাখার নির্দেশনা প্রদান করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ আয়োজিত ‘শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানোর কৌশল নির্ধারণ’ সংক্রান্ত একটি সভায় দেশে মাতৃমৃত্যুর হার নিয়ে গত ১০ বছরের পরিসংখ্যান দেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। জাহিদ মালেক জানান, দেশে বর্তমানে প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃমৃত্যু ১৬৫ জন, যা ২০০৯ সালে ছিল ২৫৯ জন। গত ১০ বছরে মাতৃমৃত্যু হার কমেছে প্রতি লাখ জীবিত জন্মে প্রায় ৯৪ জন। যদিও গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে, কিন্তু মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ৭০ জনের নিচে নিয়ে আসতে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।
সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিবসহ বিভিন্ন অধিদফতরের মহাপরিচালকের প্রতি বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। মাতৃমৃত্যুর হার কেন দ্রুত কমিয়ে আনা যাচ্ছে না সে ব্যাপারে সভায় সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশের আনাচে-কানাচে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে গেছে। এখন মায়েদের হোম ডেলিভারিতে নিরুৎসাহিত করতে মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মীদের উদ্যোগী হতে হবে। যত্রতত্র ও অস্বাস্থ্যকর ক্লিনিকে মায়েদের ডেলিভারি বন্ধ করতে হবে। দেশের সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যেসব ক্লিনিক স্বাস্থ্য সম্মত নয় সেগুলি প্রয়োজনে সিলগালা করে দিতে হবে। লোকবল আরো প্রয়োজন হলে নিয়োগ দিন। মিডওয়াইফ কর্মীদের কাজে লাগাতে হবে, তাঁদেরকে নিরাপদ ডেলিভারি করতে উৎসাহিত করতে হবে। যেখানে যে উদ্যোগ প্রয়োজন সেখানে সেভাবেই কাজ করতে হবে, তবুও মাতৃমৃত্যু হার ধীরে ধীরে ৫০-এর নিচে নামিয়ে আনতে হবে।
এ বিষয়ে মন্ত্রী সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের ইমিডেয়েট প্লান, মিডটার্ম ও লং-টার্ম প্লান নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন।
সভায় স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর জানান, শহরাঞ্চলে পরিবার পরিকল্পনা সার্ভিস দেয়ার ব্যাপারটি অন্য মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকায় কাজ করা কঠিন। এ বিষয়ে সচিব মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সচিবকে আশ্বস্ত করেন।
সভায় নিপোর্ট-এর মহাপরিচালক মাতৃমৃত্যু হারের কারণগুলি তুলে ধরেন। অন্যদিকে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজের ক্ষেত্রে জনবলের অভাবকে দায়ী করে দ্রুত লোকবল নিয়োগের উপর গুরুত্ব দেন।
সভায় মাতৃমৃত্যু হার কমিয়ে আনতে মায়েদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে যানবাহন সমস্যা, লোকবল সমস্যা, দালালদের ক্লিনিকে নেয়ার প্রচেষ্টা, মায়েদের ডায়াবেটিসসহ নানা রোগব্যাধি সমস্যাসহ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন বক্তারা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু, এনডিসি, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদফতরের মহাপরিচালক সিদ্দিকা আক্তার, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) এর মহাপরিচালক সুশান্ত কুমার সাহাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তারা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন