স্পোর্টস রিপোর্টার : এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে ‘সি’ গ্রæপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শক্ত প্রতিপক্ষের সামনে পড়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ সকাল ১১টায় চাইনিজ তাইপে ও কিরগিজস্তানের ম্যাচ দিয়ে টুর্নামেন্টের পর্দা উঠলেও সন্ধ্যা ৬টায় লাল-সবুজের মেয়েরা মোকাবিলা করবে শক্তিশালী ইরানের। মাঝে একই ভেন্যুতে বেলা ৩টায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে সিঙ্গাপুরের মেয়েরা। বাংলাদেশ-ইরান ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি ওয়ার্ল্ড।
টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে এতে অংশ নেয়া ছয়টির মধ্যে পাঁচ বিদেশী দলই এখন ঢাকায়। আসর সুষ্ঠভাবে আয়োজনে প্রস্তুত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে)। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে ঢাকায় আরও একটি মহিলা আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট সফলভাবে শেষ করতে বদ্ধপরিকর তারা। নারী ফুটবলের এ আসরকে ঘিরে প্রত্যাশার কমতি নেই কারো মনেই। সব আয়োজন সম্পন্ন। অপেক্ষা এখন মাঠের লড়াইয়ের। ছয় দলের এই গ্রæপ থেকে শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়ন দলটিই পাবে চ‚ড়ান্ত পর্বের টিকিট। তাই মাঠে নামার আগে গতকাল বাফুফে ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সব দলই সেরা হওয়ার সুপ্ত বাসনার কথা জানায় সংবাদ মাধ্যমকে। দলগুলোর কোচ ও অধিনায়করা মাঠে নিজেদের সেরটা ঢেলে দেয়ার প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেন।
একটু পেছনে ফিরলে বলা যাবে ইরানের বিপক্ষে বাংলাদেশের মেয়েরাই সফল। গত বছর নেপালে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওন্যাল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ ২-০ গোলে ইরান কে হারিয়েই ফাইনালে পৌঁছেছিল। ওই সাফল্য নাকি আজকের ম্যাচেও লাল-সবুজদের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠবে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ গোলাম রাব্বানি ছোটন বলেন, ‘আমার দল আগের চেয়ে এবার টেকনিক্যালি ও ট্যাকটিক্যালি বেশ উন্নতি করেছে। দলের মেয়েদের মধ্যে রয়েছে লড়াই করার মানসিকতা। যদিও প্রথম ম্যাচই আমাদের কঠিন চ্যালেঞ্জ ইরান। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমরা গত তিন মাস কঠোর অনুশীলন করেছি। ইরানের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত আমরা দলের মেয়েরা। আমি আশাবাদি বাংলাদেশ মাঠেই দেখাবে উন্নতির প্রতিচ্ছবি। আমাদের লক্ষ্য গ্রæপ চ্যাম্পিয়নশিপ। তাই প্রতিটি ম্যাচই আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।’ বাংলাদেশ অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকার কোন বাড়তি চাপ নিতে রাজি নন। তাই তাকে বলতে শোনা গেলো, ‘আমরা আমাদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে চাই। চাপ নিয়ে ভুল করা যাবে না। সেরাটা দিয়ে ইরানকে ঘায়েল করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য আমরা জয় দিয়েই টুর্নামেন্ট শুরু করা।’
এশিয়ার ফুটবলে অন্যতম শক্তি ইরান। ফুটবলে পিছিয়ে নেই তাদের মেয়েরাও। তাই তো সংবাদ সম্মেলনে ইরানের কোচ শাদি মাহিনি সরাসরিই বলে ফেললেন. ‘আমরা এর আগে গতবছর ঢাকায় এসে শিরোপা জয় করেছি। এবারও আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন। যদিও কাজটি সহজ হবে না। কারণ বাংলাদেশ নিজ মাঠে কঠিন প্রতিপক্ষ। গ্রæপে রয়েছে শক্তিশালী চাইনিজ তাইপেও। তবে আমরা সেরা নৈপুণ্য দিয়েই গ্রæপের শীর্ষস্থান অর্জন করতে চাই।’
বাকি চার দলের লক্ষ্যও গ্রæপ সেরা হওয়া। চাইনিজ তাইপের প্রধান কোচ কাও সাই হু বলেন, ‘গ্রæপের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে আগামি বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য চ‚ড়ান্ত পর্বে যাওয়ার জন্যই আমরা ঢাকায় এসেছি। টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে আমরা ছয় মাসের প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা ঢাকায় আসার আগে জাপানি মহিলা দলের সঙ্গে খেলেছি বেশ কটি প্রস্তুতি ম্যাচ। সে ম্যাচগুলোতে আমাদের পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল। আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই লড়বো।’ অন্যদের চেয়ে সিঙ্গাপুরের দলটি কিছুটা নবীন। তাই তাদের কোচ চেন সাই য়িং কে বলতে শোনা গেছে, ‘আমরা মূলত ভবিষ্যতের দল গঠনের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে এসেছি। আশা করি অন্য দলগুলোর সঙ্গে খেলে আমার দলের মেয়েরা অনেক কিছু শিখবে। তাই বলে কোন দলকে আমরা ছেড়ে কথা বলবো না।’ সংয়ুক্ত আরব আমিরাতের প্রধান কোচ আজাম ঘোটাকের দুঃখ তার দল পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্টকে সামনে রেখে আমরা মাত্র দুই সপ্তাহের প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। গত বছর জর্ডানে জিতেছিলাম অনূর্ধ্ব-১৪ রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে। ওই দলের বেশ কিছু খেলোয়াড় রয়েছে ঢাকায় আসা দলে। আমিরাতে এখন ফুটবল মৌসুম নেই। তাছাড়া মেয়েদের স্কুলে পরীক্ষা ছিল। তব্ েআমার দল টেকনিকালি ভাল। হয়তো শারীরিকভাবে অন্যান্য দলের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে তবে আমরা লড়াই করতে প্রন্তুত।’ কিরগিজস্তানের কোচ সেতলানা পোকাচালোভার কথা, ‘আমাদের লক্ষ্য নির্ধারন করে রেখেছি। এবং তা অর্জনে আমরা লড়াই করতে প্রস্তুত। গ্রæপটি সহজ নয় তবে কিরগিজস্তান তাদের সামর্থ্যরে ১০০ ভাগ দিয়েই শিরোপা জিততে প্রস্তুত।’
আগামী বছর থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের চ‚ড়ান্ত পর্বের খেলা। গতবারের চার সেমিফাইনালিস্ট চীন, জাপান, কোরিয়া ও থাইল্যান্ড সরাসরি খেলবে চ‚ড়ান্ত পর্বে। আর বাছাই পর্বে খেলা ২৪টি দল খেলছে চার গ্রæপে ভাগ হয়ে। এই চারটি গ্রæপের শীর্ষ দল সুযোগ পাবে চুড়ান্ত পর্বে খেলার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন