রংপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার : রংপুরের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত¡ ভারী শিল্প শ্যামপুর চিনিকল বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল রংপুরে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন চিনিকল শ্রমিক ও আখচাষীগণ। নগরীর কাচারী বাজার এলাকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিতত মানববন্ধন ও সমাবেশে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ছাড়াও শত শত আখচাষী অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তাগই বলেন, বাংলাদেশ চিনি এবং খাদ্যশিল্প কর্পোরেশন চলতি মৌসুমে লোকসানের অজুহাতে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শ্যামপুরসহ ৬টি চিনিকল বন্ধ করে দেয়। আখমাড়াইয়ের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন থাকা সত্তে¡ও সরকারি সিদ্ধান্তে এখানকার আখ ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জয়পুরহাট চিনিকলে নিয়ে যাবে। জয়পুরহাট চিনিকলে প্রতিদিন যে পরিমাণ আখ ক্রয়ের কথা ঐ পরিমাণ আখ ক্রয় করছে না। ইতোমধ্যে আখের পরিণত বয়স ১৪ মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এভাবে জয়পুরহাট চিনিকলে এখানকার উৎপাদিত আখ নিতে অন্তত ৬ মাস সময় লাগবে। ফলে আখ মরে শুকনো খড়িতে পরিণত হবে।
বক্তাগণ আরও বলেন, পরিবহন খরচ, আখ মাড়াইয়ে বেশি সময় নেয়ায় আখের রস শুকিয়ে যাওয়া, রাস্তায় নানা ধরনের ঝুঁকির কারণে আখচাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দেশে চিনির চাহিদা বছরে প্রায় ২০ লাখ মে. টন। সেখানে ১৫টি চিনিকলে গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার মে. টন। অথচ সরকার এই বিপুল পরিমাণ চাহিদার কথা বিবেচনায় না নিয়ে পাটকলের ন্যায় দেশী-বিদেশী লুটেরাদের স্বার্থে চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নেতৃবৃন্দ চিনিকলের লোকসানের জন্য লুটপাট-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতার ও শাস্তির জোর দাবি জানান।
সেই সাথে লাভজনক দামে কৃষকের কাছ থেকে আখ ক্রয় এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন-ভাতা, পেনশন পরিশোধ করে চিনিকলগুলোকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে বহুমুখী শিল্প গড়ে তোলার দাবি জানান। দাবি মানা না হলে আগামি ২৪ জানুয়ারি আখচাষী ও চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রংপুর নগর থেকে বদরগঞ্জ পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
শ্যামপুর চিনিকল রক্ষা কমিটির সমন্বয়ক কমরেড আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে এবং আনোয়ার হোসেন বাবলুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন, অশোক সরকার, কুমারেশ রায়, শাহীন রহমান, গৌতম রায়, ডা. অধ্যাপক সৈয়দ মামুনুর রহমান, প্রিন্সিপাল নজরুল ইসলাম হক্কানী, আমিনউদ্দিন বিএসসি, আখচাষী আলতাফ হোসেন, পুষ্প রঞ্জন বর্মণ, জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে বহুমুখী ও আধুনিকায়ন করে শ্যামপুর চিনিকল চালু রাখার দাবিতে রংপুর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৪ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করা হয় এবং একটি বিক্ষোভ মিছিল মহানগরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে শাপলা চত্ত্বরে গিয়ে শেষ হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন