শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

২৮ জানুয়ারি কুয়েতে পাপুলের মামলার রায়

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৬ এএম

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি শহিদ ইসলাম পাপুল অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে সাত মাসের বেশি সময় কুয়েতের কারাগারে। সেখানে তার বিচার চলছে। দেশেও তার স্ত্রী-কন্যা-শ্যালিকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সকল ব্যাংক হিসাব জব্দ রয়েছে। পাপুলকান্ডে দেশে-বিদেশে মিডিয়ার খবরে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও এ বিষয়ে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ এখনও কিছু জানে না বাংলাদেশ।
কুয়েত আদালতে পাপুলের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় ২৮ জানুয়ারি ঘোষণা করা হবে বলে সে দেশের মিডিয়ায় খবর বের হয়েছে। আদালতে তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও হুÐির অভিযোগ উঠেছে। কুয়েতে তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর এ নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে হৈচৈও হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ সংসদকে কিছু জানানো হয়নি। এই যুক্তি দেখিয়ে পাপুলের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ এখনও নেয়নি জাতীয় সংসদ।
জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কোনো সদস্য আটক হলে, দন্ড হলে, জামিন হলে বা অন্য কোনোভাবে মুক্তি পেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্পিকারকে জানাবেন। স্পিকার বিষয়টি সংসদে জানাবেন। সংসদ অধিবেশনে না থাকলে চিঠি দিয়ে সংসদ সদস্যদের জানাবেন। এটা কার্যপ্রণালি বিধিতে স্পষ্ট বলা আছে। কিন্তু কোনো কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছুই জানায়নি। জানালে নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, অফিসিয়ালি কিছু জানি না। আমরা পত্রিকা মারফত জানি। এর বেশি কিছু জানি না।
জনশক্তি রফতানিকারক পাপুলকে মানবপাচার, হুন্ডিসহ বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করে সে দেশের পুলিশ।
মানব ও অর্থপাচার এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগে ওই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর কুয়েতের অপরাধ আদালতের কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল-ওসমানের আদালতে পাপুলের বিচার শুরু হয়। এরপর তদন্ত ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২৮ জানুয়ারি রায়ের জন্য তারিখ ঠিক করেন বিচারক।
শহিদ ইসলাম পাপুল গত বছরের জুনে কুয়েতে গ্রেফতার হওয়ার এক মাস পর জুলাই মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে কুয়েত সরকার এবং ঢাকায় কুয়েত দূতাবাসে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তখন পর্যন্ত কোনো তথ্য বাংলাদেশকে দেয়া হয়নি।
২০২০ সালের অক্টোবর মাসে কুয়েত সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। ওই সফর শেষে ঢাকায় ফিরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সফরকালে কুয়েতি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পাপুলের বিষয়ে তার কোনো আলোচনা হয়নি। বাংলাদেশ তরফেও কোনো কথা তোলা হয়নি। এর কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী ওই সময় বলেন, এটা একটা ক্রিমিনাল কেস। ব্যক্তিবিশেষের বিচার হচ্ছে। উনি ওখানে ক‚টনৈতিক ভিসায় যাননি। উনি বা উনার পরিবার কেউ মিনিস্ট্রি থেকে পাসপোর্টও সংগ্রহ করেননি। সে দেশের স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী হিসেবে উনাকে গ্রেফতার করেছে, উনাকে শাস্তি দিবে। এ নিয়ে তারা আমাদের সাথে কোনো আলাপও করেনি, আমরাও তুলিনি। পাপুলের ‘মদদদাতা’ হিসেবে ওই সময় কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম আবুল কালামের নাম এলে তার বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে বলেও তখন জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সংসদের কার্যপ্রণালি বিধিতে বলা আছে, ‘কোনো সদস্য ফৌজদারি অভিযোগে বা অপরাধে গ্রেফতার হলে কিংবা কোনো আদালতে দন্ডিত হলে বা কোনো নির্বাহী আদেশে আটক হলে, গ্রেফতারকারী বা দন্ডদানকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ যথাযথ ফরমে গ্রেফতার, দন্দাদেশ আটকের কারণসহ পুরো বিষয় স্পিকারকে জানাবে’। অতপর ‘গ্রেফতার হয়ে দন্ডপ্রাপ্তির পর আপিলের বিবেচনা সাপেক্ষে জামিনে মুক্ত হলে বা অন্যভাবে মুক্ত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একইভাবে স্পিকারকে অবহিত করবে’।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হলে মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হন না।
কুয়েতে পাপুলের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রমাণিত হলে সে দেশের আইনে তার পাঁচ থেকে ১৫ বছরের কারাদন্ড এবং জরিমানা হতে পারে।
ওই সময় সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছিলেন, কুয়েত আদালতে শাস্তি হলে পাপুলের সদস্য পদ থাকবে না। তবে পাপুলের সদস্য পদ নিয়ে কোনো বিতর্ক দেখা দিলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।
সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্প্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে ওই আসনটি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেষ মুহূর্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়ায় এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ পাপুলের পক্ষে কাজ করে। পাপুল নিজে এমপি হওয়ার পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় পাওয়া সংরক্ষিত একটি আসনে তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামকে এমপি করে আনেন।
বাংলাদেশে দুদকও পাপুল, তার স্ত্রী, শ্যালিকা ও মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও মেয়ে ওয়াফা ইসলাম সেই মামলায় জামিনে রয়েছেন।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন