শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

নরসিংদীর বাজারে চালের মূল্য বেড়েছে

প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : দীর্ঘদিন স্থিতাবস্থায় থাকার পর বাজারে চালের মূল্য বাড়তে শুরু করেছে। শাক, সবজি, ডিম, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধির পর মুনাফাখোররা এবার চালের বাজারে থাবা বাড়িয়েছে। গত এক পক্ষকালে সকল প্রকার চালের মূল্য বেড়ে গেছে।
জাতভেদে চালের মূল্য কেজিপ্রতি গড়ে বেড়েছে ৪ টাকা করে। বাজারে খুচরা চাটাইয়ের মালিকরা জানিয়েছে ব্রি-২৮ ভ্যারাইটি চালের মূল্য গত এক পক্ষকাল পূর্বে ছিল প্রতি কেজি ৩২ থেকে ৩৩ টাকা। বর্তমানে এই ২৮ ভ্যারাইটির চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৬ টাকায়। ২৯ ভ্যারাইটি চাল ৩২ টাকা থেকে বেড়ে ৩৬ টাকা, কাজললতা ৩৬ থেকে ৪০, নাজিরশাইল ৪৮ থেকে ৫২, মিনিকেট ৪৩ থেকে ৪৫ এবং মোটা চাল গুটি স্বর্ণা ৩০ থেকে বেড়ে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দীর্ঘ বছরাধিককাল চালের মূল্য স্থিতিশীল থাকার পর হঠাৎ এই মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে চাটাইয়ের মালিকরা বলেছেন, চালকলের মালিকরা উত্তর বঙ্গে বন্যার অজুহাত দেখিয়ে মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা পাইকারি আড়ত থেকে বাড়তি মূল্যে কিনে বাড়তি মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। পাইকারি আড়তদারদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, চালকল থেকে মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পাইকারি বিক্রেতারা আমাদেরকে যে দাম বেঁধে দেয় তার চেয়ে কেজিপ্রতি ২৫ পয়সা বা ৫০ পয়সা লাভে আমরা বিক্রি করি। তবে তারা বলেন, বাজারে চালের আমদানিতে কোনো ঘাটতি নেই। প্রতিদিনই চাল আমদানি হচ্ছে। প্রতিটি আড়তেই চালের ব্যাপক মজুদ রয়েছে। এতৎসত্তে¡ও চালকলের মালিকরা কেন হঠাৎ চালের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন তার কারণ তারা জানাতে পারেননি।
চাষীরা জানিয়েছেন, গত ইরি-বোরো মৌসুমে দেশের সকল জেলায়ই ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। অনেক জেলায় বাম্পার ফলন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা। দেশের খাদ্য গোদামগুলোতেও প্রচুর পরিমাণ চাল মজুদ রয়েছে। এ অবস্থায় চালের মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা নিছক মুনাফাখোরী ছাড়া আর কিছুই নয়। নরসিংদীর কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, নরসিংদী মূলত একটি ঘাটতি এলাকা হলেও নরসিংদীর মনোহরদী, বেলাব, রায়পুরায় উৎপাদিত চাল রাজধানী ঢাকার ৪০ ভাগ চালের চাহিদা পূরণ করে আসছে যুগযুগ ধরে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায়ও নরসিংদীর মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরার চাল রফতানী হয়ে থাকে। পূর্বে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আবিষ্কৃৃত উচ্চ ফলনশীল জাতের মোটা চাল উৎপাদনের সময় দেশে চালের ঘাটতি উৎপাদন হতো। ২৮ ও ২৯ ভ্যারাইটি আবিষ্কারের পর দেশে চালের উৎপাদন বেড়ে সেই ঘাটতি পূরণ হয়ে যায়। যার ফলে দেশে সার্বিকভাবে এখন আর চাল উৎপাদনে ঘাটতি নেই। বেসরকারি হিসেবমতে দেশে বর্তমানে ২ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন চালের চাহিদা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উৎপাদনও প্রায় সমপর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। কোন কোন সময় কোন কোন উৎপাদন মওসুমে ঘাটতি দেখা দিলে সেই ঘাটতি ভারত থেকে চাল আমদানির মাধ্যমে পুরন করা হয়। কিন্তু বছরাধিক কাল ধরে দেশে উৎপাদিত চাল দিয়েই দেশের মানুষের চাহিদা মিটে যাচ্ছে। উপরন্তু অধিক ফলনের কারণে চাষীরা ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না বলেও দাবী করছে। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে চালের মূল্য বৃদ্ধি পাবার কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই। প্রবীণ চাল বিক্রেতারা জানিয়েছেন, আমাদের দেশে কার্তিক মাসকে মরা কার্তিক বলা হয়ে থাকে। এ মাসে আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুরসহ অনেক জেলায় মঙ্গা দেখা দিতো। এর প্রভাব দেশের বিভিন্ন জেলার ঘাটতি অঞ্চলগুলোতেও এসে পড়তো। সরকারগুলোর মঙ্গা মোকাবেলা কর্মসূচির পর থেকে এখন উত্তরাঞ্চলের এসব জেলাগুলোতে এখন আর আগের মত মঙ্গার কথা শোনা যায় না। আর এর প্রভাবও কোথাও পরিলক্ষিত হয় না। এছাড়া এখনো কার্তিক মাস আসেনি।
এরপরও চালের মূল্য বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা প্রমাণ করে মোনাফাখোর চাল সিন্ডিকেট ষড়যন্ত্র করে জনগনের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য চালের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে চালের বাজার আরো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন