শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ব্যবসাবান্ধব নীতিতে রাজস্ব আদায় শক্তিশালী হবে- অর্থমন্ত্রী

জুলাই থেকে ২ লাখ টাকার ওপরে সব কর ই-পেমেন্টে, ‘সার্টিফিকেট অব মেরিট’ পেলেন ১৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তিন প্রতিষ্ঠান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৭:২৩ পিএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, এনবিআরকে ব্যবসায়ীদের চাহিদা পূরণ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের চাহিদা পূরণ করলে ব্যবসারীরাও এনবিআরের চাহিদা পূরণ করবে। কারণ ব্যবসায়ীদের আপত্তি এনবিআরকে নিয়ে। যত ব্যবসাবান্ধব নীতি গ্রহণ করা সম্ভব হবে রাজস্ব আদায় ততই শক্তিশালী হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্বায়নের এ যুগে কাস্টমসের ভ‚মিকা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন পরিবর্তন, পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে আধুনিক কাস্টমস রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি বর্তমানে বৈধ বাণিজ্যে সহায়তা করা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিধান, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি, পরিবেশ সুরক্ষা, জনস্বাস্থ্য সংরক্ষণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা বিধানসহ ব্যাপক ভ‚মিকা পালন করতে হচ্ছে। কাস্টমস ব্যবসায়ীদের চাহিদা পূরণ করলে একদিকে রাজস্ব বাড়বে, অন্যদিকে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে সুনাম অর্জন করবে। ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনে কাস্টমসকে আরো আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারলে রাজস্ব আহরণ আরো বৃদ্ধি পাবে।

মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবসের সেমিনার ও সার্টিফিকেট অব মেরিট প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে (ভার্চুয়ালি) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এসব কথা বলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই এর সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম। সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এনবিআর চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই সভাপতি সার্টিফিকেট অব মেরিট সনদপত্র তুলে দেন।

গত দশ বছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সারা বিশ্বের মধ্যেই সর্বোচ্চ পর্যায়ের উল্লেখ করে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০৩৫ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় ক্রমেই বাড়াতে হবে। এনবিআর অতীতের মতো আগামীতেও চ্যালেঞ্জে জয়ী হবে বলে আমি মনে করি। আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে শিগগির আরও ১৩টি স্ক্যানার কেনা হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে ১৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তিন প্রতিষ্ঠানকে ‘সার্টিফিকেট অব মেরিট’ প্রদান করা হয়। ১৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে সাতজন কাস্টমস কর্মকর্তা-কর্মচারী রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এবার সার্টিফিকেট অব মেরিট প্রদানের ক্ষেত্রে করোনাকালীন দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ সাপ্লাই চেইন নিরবচ্ছিন্ন রাখতে অবদান রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও এর অধীনস্থ দফতরসমূহের ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন-কমিশনার ও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ নেয়াজুর রহমান, এনবিআরের প্রথম সচিব এ কে এম নুরুল হুদা আজাদ, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট এ কে এম জাহিদ হোসেন, ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটের উপ কমিশনার এবিলিন সাংমা, সিলেট ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সামসাদ হোসেন, ঢাকা কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম, আইসিডি কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ইয়াকুত জাহিদ ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান।

করোনাকালীন দায়িত্ব পালনের সময় মৃত্যুবরণকারী সম্মাননা পাওয়া সাত কর্মকর্তা হলেন- রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস আলী মন্ডল, ঢাকা কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম, রংপুর ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. রহমত আলী, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন মজুমদার, ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেটের রাজস্ব কর্মকর্তা আনোয়ার জাবেদ, ঢাকা কাস্টম হাউসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন সিকদার ও মোংলা কাস্টম হাউসের সুকানী মো. কায়কোবাদ।

সার্টিফিকেট অব মেরিটপ্রাপ্ত তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো-চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, ঢাকা কাস্টম হাউস এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, দুই লাখ টাকার বেশি কর ইলেকট্রনিক পেমেন্ট বা ই-পেমেন্টের মাধ্যমে ১ জুলাই থেকে আদায় করা হবে। রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এনবিআরকে অটোমেশনের আওতায় এনে রোডম্যাপ তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সফটওয়্যার তৈরি হয়ে গেছে। আগামী ১ এপ্রিল থেকে আইসিডি কাস্টমস হাউজ, কমলাপুরে এই নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমদানি-রফতানি দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা ১৩টি স্ক্যানার ক্রয় কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। স্ক্যানারগুলো আসলে পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম আরও দ্রুত হবে।

মহামারীর সময়েও কাস্টমসসহ রাজস্ব আদায়ে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, সাপ্লাইচেইন ঠিক রেখে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কাস্টমস ও ভ্যাট আদায় কার্যক্রম এক মিনিটের জন্যও বন্ধ হয়নি।

সভায় বিশেষ অতিথি এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটলে আমাদের আরও অনেক বেশি রাজস্ব আদায়ের প্রয়োজন হবে। তখন অবশ্যই কর জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য তিনি করের হার না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন