রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খেলাধুলা

১ কোটি ৪০ লাখ রুপিতে সানরাইজার্স হায়দারাবাদে মুস্তাফিজ

প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে এক বছর পূর্তি হয়নি মুস্তাফিজুরের এখনো। অথচ মাত্র ১০ মাসেই একটার পর একটা অর্জনে অনন্য হয়ে উঠেছেন এই বাঁ হাতি পেস বোলার। এ বছরে ৯ ওয়ানডে ম্যাচে ২৬ উইকেট, ২ টেস্টে ৪ উইকেট এবং ৫ টি-২০তে ৭ উইকেট। এমন বোলিং ধারাবাহিকতায় আইসিসি’র বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে জায়গা পেয়েছেন। বিপিএল ‘থ্রি’তে ক্যাটাগরি ওয়ান এ ২২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছেন, ৫০ হাজার ডলারে পাকিস্তান সুপার লীগ ( পিএসএল) এ তাকে কিনেছে লাহোর কালান্দার্স। পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতার পুরস্কার পেলেন এবার বিশ্বের সবচেয়ে ধনাঢ্য আসর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে দল পেয়ে। গতকাল ব্যাঙ্গালুরুতে অনুষ্ঠিত আইপিএলের নিলামে বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীদের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার অবসান হলো হায়দারাবাদ সানরাইজার্সে ২০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের বিক্রির মাধ্যমে। ৫০ লাখ রুপী বেস প্রাইস থেকে নিলামে ওঠা এই ক্রিকেটার বিক্রি হয়েছেন ১ কোটি ৪০ লাখ রুপীতে। আইপিএলের নিলামে ওঠা অন্য তিন বাংলাদেশী ক্রিকেটার তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও সৌম্য সরকারকে কেনেনি কেউ। নিলামে ওঠা বাংলাদেশের চার ক্রিকেটারের মধ্যে বিক্রি হয়েছেন শুধু মুস্তাফিজুর রহমান।
অস্ত্র তার কাটার, সঙ্গে দিতে পারেন শ্লোয়ার, ইয়র্কার। গত বছর টুয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক অভিষেকেই পাকিস্তানের বিপক্ষে জানিয়ে দিয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সী বাঁ হাতি পেস বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকে আরো ভয়ংকর রূপ ছড়িয়েছেন। একটার পর একটা বিস্ময়কর ডেলিভারিতে অভিষেকে ধোনির দলের ৫ ব্যাটসম্যান তার শিকার, দ্বিতীয় ম্যাচে আরো ভয়ঙ্কর থাবা সাতক্ষীরার এই রয়েল বেঙ্গল টাইগারেরÑ শিকার সংখ্যা সেই ম্যাচে ৬ উইকেট। অভিষেকের পরপর ২ ম্যাচে ১১ উইকেটে জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান ভিটরীর রেকর্ড স্পর্শ করে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১৩ উইকেটে বিশ্বরেকর্ড। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের এই নায়ক আইপিএল’র ২০১৬ সালের সংস্করণে খেলার দাবিটা জোরালো করেছিলেন তাতেই। সিরিজ হেরে মহেন্দ্র সিং ধোনি, সুরেশ রায়না এগিয়ে এসে অভিনন্দিত করেছেন মুস্তাফিজুরকে। আইপিএলএ ফ্রাঞ্চাইজিদের কদর থাকবে, ওয়ানডে সিরিজ শেষে এ আশার বাণীই শুনিয়েছিলেন ভারত অধিনায়ক ধোনি। ধোনির ওই ধারণাটাই সত্যি হলো।
এক বছরে মাত্র ৯টি ওয়ানডে ম্যাচে ২৬ উইকেটে বিস্ময়ের জন্ম দেয়া মুস্তাফিজুরকে ২০১৫ সালে আইসিসি’র বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে বিবেচনা করায় আইপিএলএ এই বাঁ হাতি পেস বোলারের কদরটাও গেছে বেড়ে। ৫০ লাখ রুপী ভিত্তিমূল্য থেকে আইপিএলের নিলামে রয়াল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর সঙ্গে নিলাম যুদ্ধে জয়ী হয়ে হায়দারাবাদ সানরাইজার্স তাকে কিনেছে ১ কোটি ৪০ লাখ রুপীতে। আইপিএলের আসন্ন সংস্করণে কোলকাতা নাইট রাইডার্স হিরো সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে সানরাইজার্স হায়দারাবাদে দেখা যাবে মুস্তাফিজুরকে। আবদুর রাজ্জাক, আশরাফুল, মাশরাফি, সাকিব, তামীমের পর আইপিএলে ৬ষ্ঠ বাংলাদেশী হিসেবে বিক্রি হলেন মুস্তাফিজুর।
আইপিএলে মুস্তাফিজুর তার দল সানরাইজার্স হায়দারাদে অধিনায়ক হিসেবে পাচ্ছেন ভারত ওপেনিং ব্যাটসম্যান শেখর ধাওয়ানকে। ভুবনেশ্বর কুমার, যুবরাজ সিং, আশিষ নেহরা ছাড়াও এই দলে আলোচিত ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড ওয়ার্নার, মসিস হেনরিক, ইংল্যান্ডের ইউয়ান মরগান, নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামস ও ট্রেন্ট বোল্ট।
আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দারাবাদে বিক্রি হওয়ার খবর শুনে ভীষণ খুশি মুস্তাফিজুর রহমানÑ‘খুব ভালো লাগছে। আশা ছিল আইপিএলে খেলার সুযোগ পাব। সবাই বলাবলি করছিল আমাকে এবার নিতে পারে। সাকিব ভাই খুব ভালো খেলছেন ওখানে, এটাও আমাকে বেছে নেয়ার কারণ।’ গত মওসুমে ঢাকার প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে ৫ লাখ টাকায় আবাহনীতে খেলেছে যে ছেলেটি, বিপিএল থ্রি’তে ২২ লাখ টাকায় ঢাকা ডায়নামাইটসে খেলে আস্থার প্রতিদান দিয়ে এবার আইপিএলে পাবে সে ১ কোটি ৪০ লাখ রুপী। তবে আইপিএলের গতকালকের নিলামে আনকোরা ক্রিকেটারদের অনেকেই মুস্তাফিজুরের চেয়ে বেশি অর্থে হয়েছেন বিক্রি। ফর্ম না থেকেও যুবরাজ সিং বিক্রি হয়েছেন ৭ কোটি রুপীতে, আশিষ নেহরার মতো পড়ন্ত তারকার দর সেখানে উঠেছে সাড়ে ৫ কোটি রুপী। সেখানে মুস্তাফিজুর বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ রুপীতে। তারপরও আক্ষেপ নেই মুস্তাফিজুরেরÑ‘ টাকার অঙ্ক নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। কতো টাকায় বিক্রি হব, তা নিয়ে ভাবিনি। আমি শুধু চেয়েছিলাম আইপিএলে খেলার সুযোগ। কারণ, আইপিএলের মতো বড় আসরে খেলার সুযোগ পেলেই সেটি হবে অনেক বড় অভিজ্ঞতা। সুযোগটা পেয়েছি, তাতেই আমি খুবই খুশি।’
পাকিস্তান সুপার লীগ (পিএসএল) এ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারে লাহোর কালান্দার্সে বিক্রি হয়েও ওই আসরে খেলার অনাপত্তিপত্র (এনওসি) বিসিবি দেয়নি মুস্তাফিজুরকে। মুস্তাফিজুরকে টানা ক্রিকেট থেকে বিরত রাখতে এ সিদ্ধান্তই বিসিবি’র। যেভাবে সোলডার ইনজুরি ভোগাচ্ছে মাঝে মাঝে এই বাঁ হাতি পেস বোলারকে। তাতে মুস্তাফিজুরকে আইপিএলে খেলতে যদি বিসিবি’র পক্ষ থেকে আসে এমন বাধা? তাছাড়া আইপিএল খেললে ঢাকার প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগও মিস করতে হবে মুস্তাফিজুরকে। এসব প্রশ্ন থেকে নিজেকে ফিট রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ ২০ বছর বয়সী এই পেস বোলারেরÑ‘সুস্থ থাকলে খেলবো সেখানে, এ বিশ্বাস আছে। সব সময় যেখানেই খেলি সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। এখানেও তাই করবো। এখানে আলাদা কোনো পরিকল্পনা নেই আমার।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন