শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

গরু দিতে নয়, চামড়া নিতে মরিয়া ভারতীয় ব্যবসায়ীরা

খুলনায় চামড়া বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে কোটি কোটি টাকা পুঁজি লগ্নি মাড়োয়ারিদের

প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবু হেনা মুক্তি : কোরবানি আসন্ন। খুলনাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আসা বন্ধ হলেও ভারতের ব্যবসায়ীরা চামড়া নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এই মুহূর্তে চরম সক্রিয়। কলোবাজারি চামড়া ব্যবসায়ীরা তাই নড়েচড়ে বসেছে। ব্যাংক ঋণের অপ্রতুলতা, লবণের মূল্য বৃদ্ধি, পুঁজি সংকট, ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রির টাকা সময়মতো না পাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে সুযোগ বুঝে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের চামড়া বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে কোটি কোটি টাকার পুঁজি লগ্নি করেছে। এ ক্ষেত্রে অনেক পুঁজিপতি হুন্ডির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা খুলনাঞ্চলে বিনিয়োগ করছে। এ কারণে এবারের কোরবানির চামড়া খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও টেনারি মালিকদের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভারতীয় ফড়িয়াদের চক্রান্ত এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যসহ নানা কারণে খুলনাঞ্চলের অর্ধশতাধিক চামড়া প্রতিষ্ঠান এখন মাত্র ৮টিতে নেমে এসেছে। সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে সীমান্তে নজরদারি ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে কালোবাজারিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে লবণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছে।
কোরবানী আসন্ন, কিন্তু মুখে হাসি নেই এ অঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীদের। তারা বাকিতে কেনাবেচা করেন। আর এ বাকি টাকা মহাজনদের কাছ থেকে আদায় করতে হিমশিম খেতে হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা ইনকিলাবকে জানান, বিগত রোজার ঈদের পর থেকে হঠাৎ করে চামড়ার দাম কমে গেছে। ঈদের জন্য এখনও চামড়ার প্রতিফুট মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। জনৈক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. সেলিম ইনকিলাবকে বলেন, গত ঈদে তিনি ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে প্রায় দেড় লাখ টাকার চামড়া সরবরাহ করেছিলেন। মহাজন তাকে মাত্র ৮১ হাজার টাকা দিয়েছেন। একইভাবে জুলফিকার আলী, আব্দুস সালাম, আমিরুল ইসলাম, ইমদাদ হোসেনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের চিত্র একই রকম। উপরন্তু মাহজনরা জোরপূর্বক এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে রেখেছেন যাতে তারা কোনো আইনগত সাহায্য নিতে না পারেন। খুলনার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রতি বছর কোরবানির ঈদের সময় পশুর চামড়া কেনার জন্য কোনো ঋণের সুবিধা পায় না। প্রতি বছরই পুঁজি সংকট দেখা দেয়। এবার এ সংকট তীব্র আকারে ধারণ করেছে। আর এ সুযোগে পুজি বিনিয়োগ করে ফেলেছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। কারণ ভারতের বাজারে প্রায় দ্বিগুণ দামে বাংলাদেশের চামড়া বিক্রি করা হয়। তাই ভারতীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি চোরাকারবারিরাও চামড়া ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ করেন দ্বিগুণ লাভের আশায়। খুলনাঞ্চলের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দাবি হচ্ছে চামড়ার চোরাচালান বন্ধ করতে হলে অবশ্যই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সরকারী লোন দেয়ার সুব্যবস্থা করতে হবে। সীমান্ত এলাকাগুলোর চামড়া ক্রয়ের জন্য ভারতীয় টাকায় সয়লাব হয়ে গেছে সমগ্র খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট। উদ্দেশ্য চামড়া ভারতে নেয়া। আর এ জন্য প্রান্তিক অবস্থা থেকে শুরু করে বড় ব্যবসায়ীরাও অগ্রিম টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে কোরবানির চামড়ার বাজার খুলনাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও টেনারি মালিকদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, ভারতের টেনারি শিল্প মালিকরা সিংহভাগ চামড়া অবৈধভাবে নিয়ে যাওয়ার সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে। খুলনাঞ্চলের চামড়া ব্যবসায়ীরা এবার ঝুঁকে পড়েছে কালোটাকার প্রতি। গত বছরের তুলনায় এবার দশ ভাগ চামড়ার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আশায় বুক বাঁধলেও অন্যদিকে লবণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দারুণভাবে হতাশ হয়ে পড়েছে।
সূত্রমতে, ভারতীয় ফড়িয়া ও দালালরা বৈধ-অবৈধ পথে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে আসতে শুরু করেছে। এ দেশীয় কালোবাজারি ও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা তাদেরকে শেল্টার দিচ্ছে। খুলনা বড়বাজার কেন্দ্রিক হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ভারতীয় ফড়িয়াদের সকল প্রকার সহযোগিতা করে থাকে। দেশে-বিদেশে চামড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অমিত সম্ভাবনা রয়েছে শিল্পটির। চামড়া শিল্পের সাথে জড়িত লাখ লাখ পরিবার। পরিকল্পিতভাবে চামড়া ক্রয়, বিপণন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানির প্রতি বিশেষ নজর দেয়ার অভিমত সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের। ঈদুল আজহা উপলক্ষেই প্রতি বছর চামড়ার সবচেয়ে বড় জোগান সৃষ্টি হয়। এই মহেন্দ্রক্ষণকে সামনে রেখেই প্রতি বছর কালোবাজারিরা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থের ফাঁদ পাতে। আর সেই ফাঁদেই পা দিয়ে থাকেন প্রান্তিক চামড়া ব্যবসায়ীরা। দেশীয় এই সম্পদকে দেশের কাজে লাগানোর জন্য সুশীল সমাজ দাবি জানিয়েছেন। প্রবীন রাজনীতিবিদ, দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, সরকারকে পাচাররোধে বিশেষ অধ্যাদেশ জারি ও বর্তমানে যে আইন রয়েছে তার সঠিক প্রয়োগ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। অন্যথায় চামড়া সম্পদ রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে খুলনা নাগরিক নেতা অ্যাডভোকেট জিএম কামরুজ্জামান ইনকিলাবকে জানান, সরকারকে এই কালোবাজারিদের রুখতে হবে। খুলনার সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন সীমান্তের চোরাঘাট দিয়ে প্রতি বছর চামড়া পাচার হয়ে থাকে । এ বছরও তারা থেমে নেই। এ জন্য প্রয়োজন জন সচেতনতা ও সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ। নইলে এ শিল্পটিও ভবিষ্যতে চরমভাবে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন