সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত পরশু থেকে একটি বিষয় নিয়ে ঝড় বইছে। মেসির সঙ্গে বার্সার বেতনের চুক্তি ফাঁস। তাতে অনেকেরই চোখ কপালে উঠলেও আর্জেন্টাইন তারকার ভক্ত থেকে শুরু করে ফুটবলাঙ্গণের প্রায় সিংহভাগের মন্তব্যই ছিল ‘যথার্থ। রাতে বার্সা মাঠে থাকতেও মেসির ফাঁস হওয়া চুক্তিপত্র নিয়ে কথা চলেছে। আর অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের জালে মেসির চোখজুড়ানো গোলের পর যেন ঢোলে রীতিমতো বাড়ি পড়েছে! ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার ও বিশ্লেষক গ্যারি লিনেকারতো আরেক কাঠি সরেস। টুইটে লিখেছেন, ‘সম্ভবত মেসির বেতন বাড়ানোর সময় হয়েছে।’
চার বছরে ৫৭০০ কোটি টাকার এই চুক্তিপত্রে ‘প্রতিটি পয়সার যোগ্য মেসি’- এমনটাই মতামত বেশির ভাগের। কেন যোগ্য এবং লিনেকারের দাবিও কেন অযৌক্তিক নয়, তার সর্বশেষ প্রমাণ হতে পারে গতপরশু রাতের গোলটাই। বিলবাওকে ২-১ গোলে হারিয়েছে। ২০ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে বার্সাকে প্রথম গোল এনে দেন মেসি। অপর গোলটি আঁতোয়ান গ্রিজমানের।
৩০ গজ দ‚রে ফ্রি কিক পেয়েছিলেন মেসি। বিলবাও গোলরক্ষক উনাই সিমোন সামনে যথারীতি মানবদেয়াল তৈরি করেছিলেন। অতিরিক্ত সাবধানতা হিসেবে নিজের বাঁ পাশে ডিফেন্ডার ইয়েরেকেও দাঁড় করান বিলবাও গোলরক্ষক। অর্থাৎ এক অর্থে বিলবাওয়ে গোলপোস্টে ছিলেন দুজন। সিমোনের ডান দিকে জায়গা বেশি ফাঁকা থাকায় মেসি যে সেদিক দিয়ে শট নিতে পারেন, সেটাই ছিল সবার স্বাভাবিক ভাবনা।
কিন্তু বার্সা তারকার শটটি দেখলে মনে হবে জ্যামিতির মাপজোখ করে নেওয়া! যে দিক দিয়ে বল পাঠানোর কথা কেউ সম্ভবত ভাববে না, মেসি সেদিক দিয়েই নিখুঁত এক শটে বল পাঠান জালে। ইয়েরে তার বাঁ প্রান্তে লাফিয়ে উঠে হেডে বলটা লক্ষ্যভ্রষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন। নাগাল পাননি। বলটা ঢুকেছে তার মাথা, ক্রসবার ও পোস্টের মাঝে অল্প একটু ফাঁকা জায়গা দিয়ে। এমন গোল প্রতিদিন দেখা যায় না। মেসি তেমন এক গোল করে মাঠেই সবকিছুর জবাব দিলেন। লিনেকার তাই রসিকতার সুযোগটা ছাড়েননি।
খেলাধুলার দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় অঙ্কের এই (মেসির) চুক্তি ফাঁস করে দেওয়ায় স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এল মুন্দো’র বিরুদ্ধে মামলা করবে বার্সা। ঠিক এদিন-ই বার্সার হয়ে দারুণ এক মাইলফলক গড়লেন মেসি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সার হয়ে এটি ছিল তার ৬৫০তম গোল। সরাসরি ফ্রি কিক থেকে করেছেন ৪৯ গোল, যার ৩৮টি লা লিগায়।
একই রাতে মেসির বন্ধু ও সাবেক ক্লাব সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়েও ফ্রি কিক থেকে গোল করেন। উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের জোড়া গোলেই কাদিজের মাঠে ৪-২ গোলে জেতে তারা। বন্ধুর গোলের পর মেসির বোধ হয় আর দেরি সহ্য হয়নি। জবাব দেওয়া ও বন্ধুকে দেখিয়ে দেওয়ার তাড়নাটা বোধ হয় জেগে উঠেছিল। আর তাই যে খেলোয়াড় এর আগে ফ্রি কিকে ৬২ বার চেষ্টায় একটি গোল পান, সে-ই খেলোয়াড়ই শেষ চারবারের চেষ্টায় পেলেন দ্বিতীয় গোল। বার্সার হয়ে মেসির ৬০০তম গোলও ছিল ফ্রি কিক থেকে, লিভারপুলের জালে।
ইউরোপে শীর্ষ পাঁচ লিগে শেষ পাঁচ মৌসুম বিবেচনা করলে ফ্রি কিক থেকে গোলে কেউ মেসির ধারেকাছেও নেই। ফ্রি কিক থেকে এ সময় ২১ গোল করেছেন আর্জেন্টাইন এ তারকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা আলেক্সান্দার কোলারভের গোলসংখ্যা ৮। এমন খেলোয়াড়ের চুক্তিপত্রে ঈর্ষণীয় পারিশ্রমিক নিয়ে কথা ওঠার পেছনে ক্লাব আর্থিক দেনাও অন্যতম কারণ। প্রায় ১২০ কোটি ইউরো দেনা রয়েছে বার্সার। এর মধ্যে চার বছরে মেসির ৫৫ কোটি ৫০ লাখ ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৭০০ কোটি) পারিশ্রমিকের অঙ্ক দেখে অনেকের চোখ কপালে উঠেছে। তবে এই একটি গোলই যেন সকল সমালোচনার জবাব!
২৬ দিনের মধ্যে তৃতীয়বার দেখা হলো এই দুই দলের। এ মাসের শুরুতে লিগে বিলবাওয়ের মাঠে ৩-২ গোলে জিতেছিল বার্সেলোনা। আর দুই সপ্তাহ আগে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে তাদেরকে একই ব্যবধানে হারায় বিলবাও। বার্সার শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার পাশাপাশি আর্জেন্টাইন তারকা মেসি সেদিন ১৭ বছরের ক্লাব ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো লাল কার্ড দেখেছিলেন। সেকারণে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞাও পান তিনি। সব মিলিয়ে প্রতিশোধটাও নেয়া হলো মেসির।
চলতি বছর এটিই ছিল নিজেদের মাঠে বার্সেলোনার প্রথম ম্যাচ। আগের টানা আটটি ম্যাচ তারা খেলেছিল ন্যু ক্যাম্পের বাইরে। ২০ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে দলটি আছে লিগের দুইয়ে। সমান ম্যাচে পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে তিনে নেমে গেছে আসরের শিরোপাধারী রিয়াল। শীর্ষে থাকা অ্যাটলেটিকোর পয়েন্ট ১৯ ম্যাচে ৫০।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন