সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

যেন বাংলাদেশ-পাকিস্তান করাচি টেস্টের প্রতিচ্ছ্ববি!

মেয়ার্সে ওলট-পালট রেকর্ড বই

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

চতুর্থ ইনিংসে ৩৯৫ রানের বিশাল লক্ষ্য। টেস্ট ইতিহাসে এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার নজির মাত্র চারটি। হাতে ৭ উইকেট নিয়ে শেষদিনেই প্রয়োজন ২৮৫ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এসব কঠিন হিসাবনিকাশে দমে যায়নি। কারণ, তারা খুঁজে পেয়েছে কাইল মেয়ার্স নামের নায়ককে। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমে অপরাজিত ডাবল সেঞ্চুরিতে তিনি গড়লেন স্মরণীয় সব কীর্তি। এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বীরত্বে বাংলাদেশকে হারাল অনেক চেনা মুখবিহীন ক্যারিবিয়ান টেস্ট দল।

গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী পঞ্চম দিনের শেষ সেশনে রোমাঞ্চকর জয় তুলে নিয়েছে সফরকারীরা। প্রায় চারশো ছোঁয়া লক্ষ্য পেরিয়ে তারা জিতেছে ৩ উইকেটে। অথচ আগের দিন এক পর্যায়ে ৫৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে পড়েছিল দলটি।
দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে উইন্ডিজ এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে। ফলে সিরিজ হারানোর শঙ্কা আর নেই তাদের। নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতেছে দলটি। এই সংস্করণে সবচেয়ে বেশি রান তাড়ার রেকর্ডও তাদের দখলে। ২০০৩ সালে সেইন্ট জনসে ৭ উইকেটে ৪১৮ রান তুলে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল তারা।

যার কল্যাণে উইন্ডিজকে প্রায় অসম্ভব এক কাজকে সম্ভবে পরিণত করেছে, তিনি মেয়ার্স। ২৮ বছর বয়সে সাদা পোশাকে অভিষিক্ত হয়ে তিনি খেলেন ২১০ রানের নান্দনিক এক ইনিংস। ৩১০ বল মোকাবিলা করে মারেন ২০ চার ও ৭ ছক্কা। প্রথম ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছিল ৬৫ বলে ৪০ রান। অথচ জেসন হোল্ডার, শিমরন হেটমায়ার, রোস্টন চেজের মতো নিয়মিত তারকারা বাংলাদেশ সফর থেকে সরে না দাঁড়ালে তার হয়তো মাঠে নামাই হতো না। অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ২২২ রানে অপরাজিত ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক রুডলফ।

ইতিহাসের মাত্র ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিষেক টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির কীর্তি গড়েন মেয়ার্স। তার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কেবল একজনই পেয়েছিলেন এই স্বাদ। ১৯৭২ সালে কিংস্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২১৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেছিলেন লরেন্স রো। ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসেও তিন অঙ্কে পৌঁছেছিলেন তিনি। অপরাজিত ছিলেন ১০০ রানে।

তবে একটি জায়গায় অনন্য মেয়ার্স। তিনি ডাবল সেঞ্চুরি করেন ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে। অভিষেকে এই কীর্তি নেই ক্রিকেট ইতিহাসের আর কোনো খেলোয়াড়ের। আগের দিনের ৩৭ রান নিয়ে নেমে ব্যাটিংয়ে পরিপক্বতার পরিচয় দেন মেয়ার্স। অবধারিতভাবে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে তিনি দলকে উপহার দেন স্মরণীয় এক টেস্ট জয়, যেখানে আগের চারটি দিনে চালকের আসনে ছিল বাংলাদেশ।

মোয়ার্সের পাশাপাশি কৃতিত্বের দাবি রাখেন আরেক অভিষিক্ত খেলোয়াড় এনক্রুমা বোনার। চতুর্থ উইকেটে দুজনে ৪৪২ বলে যোগ করেন ২১৬ রান। এই রেকর্ড জুটিই তাদেরকে দেয় জয়ের ভিত। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ জুটি ছিল ১৩৪ রানের। ২০০৩ সালে পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ ও ইয়াসির হামিদ বাংলাদেশের বিপক্ষেই করাচিতে রেকর্ড গড়েছিলেন। ১৮ বছর পর ওই কীর্তি ভেঙে নিজেদের করে নেন বোনার ও মেয়ার্স।

টেস্ট ইতিহাসেই এটি দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বোচ্চ। ১৯৬৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করাচিতে পাকিস্তানের খালিদ ইবাদুল্লাহ ও আব্দুল কাদির গড়েছিলেন ২৪৯ রানের উদ্বোধনী জুটি। এখনও পর্যন্ত দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটারের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি জুটি সেটিই। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৬৫ রানের জুটি এতদিন ছিল জিম্বাবুয়ের ডেভ হটন ও অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের, ১৬৫। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দুই অভিষিক্ত ক্রিকেটারের আগের সর্বোচ্চ জুটি ছিল ১৯৩০ সালে জর্জ হ্যাডলি ও ফ্রাঙ্ক ডি কেয়ার্সের ১২৪।

২০০৪ সালে কেপটাউন টেস্টে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে স্মিথের সেই সেঞ্চুরির আগে প্রথম এ নজির গড়েছিলেন বাইচান-১৯৭৫ সালে লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে। তবে আট ব্যাটসম্যানের এ তালিকায় ইয়াসির হামিদের সেঞ্চুরিটি নিশ্চয়ই মনে থাকবে বাংলাদেশ দলের বর্তমান নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশারের।

২০০৩ সালে পাকিস্তান সফরে করাচিতে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের দুই ইনিংসে ৭১ ও ১০৮ রানের দারুণ দুটি ইনিংস খেলেছিলেন হাবিবুল। কিন্তু অভিষিক্ত ইয়াসির হামিদের চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরির (১০৫) সুবাদে সে টেস্টে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। সে ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক ঘটেছিল রাজিন সালেহর। আর পাকিস্তান দলের হয়ে অভিষেক ঘটেছিল পাঁচজনের-ইয়াসির হামিদ, মোহাম্মদ হাফিজ, শাব্বির আহমেদ ও উমর গুলের। এর মধ্যে ইয়াসির ও হাফিজ ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৪ রানের জুটি গড়েন। মেয়ার্স ও বোনার চতুর্থ ইনিংসে অভিষিক্ত হিসেবে সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ার পথে ইয়াসির-হাফিজের গড়া রেকর্ডটি ভাঙলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন