কক্সবাজারে লবণ উৎপাদনের ধুম পড়েছে। আগামী ১৫ মে পর্যন্ত চলতি মৌসুমে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। লবণের দাম বাড়বে এমন প্রত্যাশা নিয়ে চাষিরা পুরোদমে লবণ উৎপাদনে কঠোর পরিশ্রম করলেও এখনো দাম না বাড়ায় হতাশ চাষিরা। হতাশা নিয়েই লবণ উৎপাদনে পুরোদমে কাজ করছেন চাষিরা। প্রত্যাশামতো লবণের দাম এখনো বাড়েনি। যেভাবে লবণ উৎপাদন হচ্ছে চলতি মৌসুমে চাহিদারও বেশি লবণ উৎপাদন হবে মনে করছেন চাষিরা।
বাংলাদেশ লবণ চাষি কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোস্তফা কামাল বলেন, বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধ, চাল-ধানের মতো লবণের প্রতি কেজি ক্রয়মূল্য নির্ধারণ, প্রান্তিক চাষিদের কাছ থেকে লবণ ক্রয়সহ সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য আমরা একাধিকবার বিভিন্ন ফোরামে দাবি উত্থাপন করেছি। সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক লবণের দাম বাড়াতে জাতীয় সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনে দাবি উত্থাপন করেছেন। তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগকে অবহিত করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক কুতুবদিয়া সফরকালে ফোনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন লবণের বিষয়ে।
এরপর লবণের ন্যায্যমূল্য নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে লবণের যে দাম এতে শুধু চাষি নয় সংশ্লিষ্ট সবাই হতাশ। কক্সবাজার বিসিকের দেয়া তথ্যমতে, চাহিদা মেটানোর লবণ বাংলাদেশেই উৎপাদন হয়। এ কারণে লবণ আমদানি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করে যথাযথ মূল্য নির্ধারণ চায় প্রতিষ্ঠানটি। চলতি মৌসুমে সাড়ে ১৯ লাখ মেট্রিক টন লবণের চাহিদা রয়েছে। যেভাবে মৌসুম শুরু হয়েছে এতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোন সমস্যা হবে না। এছাড়া খাবার লবণ হিসেবে ব্যবহৃত সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানিতে কর হার ৮৯ শতাংশ। অন্যদিকে, শিল্পে ব্যবহৃত লবণ আমদানিতে কর হার ৩৭ শতাংশ। এ সুযোগে বাজারে চাহিদা এবং আমদানিতে করের সুবিধায় থাকায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সোডিয়াম সালফেট, বিট লবণ, কসটিক সোডার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত লবণ আমদানির ঘোষণা দিয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করে। রিশোধিত হয়ে আসা এসব লবণ ওয়্যারহাউসে না রেখে, শিল্প-কারখানায় ব্যবহার না করে ভোজ্য লবণ হিসেবে বাজারজাত করছে। ফলে দেশে উৎপাদিত লবণ বিক্রি হলেও প্রয়োজনীয় দাম পাচ্ছেন না চাষিরা।
বিসিক সূত্রে আরো জানা যায়, গত নভেম্বরের শুরু থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে ৬৪ হাজার ১৫১ একর জমিতে লবণের উৎপাদন শুরু হয়। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আড়াই মাসে এসব জমিতে লবণ উৎপাদিত হয়েছে অন্তত আড়াই লাখ মেট্রিক টন।
কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইলের চাষি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাঠে উৎপাদিত লবণ প্রতি কেজি তিন থেকে চার টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত লবণ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩২ টাকায়। এখন মাঠে উৎপাদন খরচ যাচ্ছে প্রতি কেজি সাড়ে ৪ টাকারও বেশি। প্রতি বছর এভাবে লোকসান দিতে দিতে চাষিদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
মহেশখালীর কালারমারছড়া নোনাছড়ি গ্রামের লবণ চাষি আনচারুল করিম রুমি জানান, পরিবহন খরচ বাদ দিয়ে চাষিরা প্রতিকেজি লবণের দাম পাচ্ছে সাড়ে ৩ টাকা। এটি অত্যন্ত মানবেতর বিষয়। এত তদবির, আন্দোলন করেও দাম না বাড়া খুবই দুঃখজনক। অবস্থার কোন পরিবর্তন না হলে আগামী মৌসুম থেকে লবণ চাষি পাওয়া যাবে না।
কক্সবাজার বিসিকের উপ-মহাব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, গত মৌসুমেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে। তারপরও নানা কৌশলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অপ্রয়োজনীয় সোডিয়াম ক্লোরাইড আমদানি করে থাকে। বর্তমানে যে পরিমাণ লবণ উদ্ধৃত রয়েছে এবং উৎপাদিত হচ্ছে এতে লবণ ঘাটতির কোন সম্ভাবনা নেই। আশাকরি লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন