শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যবসা বাণিজ্য

যশোরে পাটে ব্যস্ত শার্শার ১৩ হাজার নারী

প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেনাপোল অফিস : যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোল ও শার্শার বিভিন্ন জনপদের জলাশয়ে জাগ দেয়া পাট ধোয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রায় ১৩ হাজার নারী শ্রমিক।
চলতি মৌসুমে শার্শার পাট কাটা, জাগ দেয়া ও পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানো শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় সময়মত পাট কেটে তা বিভিন্ন জলাশয়ে জাগ দিতে পেরেছেন কৃষকরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুওে দেখা গেছে, চাষিরা স্থানভেদে পাট কেটে নদী-নালা, খাল-বিল ও ডোবায় জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং হাটে-বাজারে বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অধিকাংশ স্থানে দেখা গেছে, নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে পাট ছাড়ানোর কাজ চলছে। অনেক স্থানে খরচ বাঁচাতে ‘রিবোন রেটিং’ পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ানোর জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
শার্শা উপজেলার সামটা গ্রামে পাট ছাড়ানোর কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিক রেঞ্জুয়ারা খাতুন, আকলিমা খাতুন, বারিছোন বিবি, জরিনা বেগম, আলেয়া বেগমসহ অনেকে জানান, এ মৌসুমে তারা সংসারের কাজের পাশাপাশি টাকার বিনিময়ে পাট ছাড়ানোর কাজ করছেন। আবার পাটকাঠি নেয়ার শর্তেও অনেকে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করেন। এতে করে সংসারের ব্যয় নির্বাহে কিছুটা হলেও সহযোগিতা করতে পারছেন তারা।
বেনাপোলের বারোপোতা গ্রামের দিনমজুর নারী শ্রমিক জরিনা বেগম জানান, এক আঁটি পাট ছাড়ালে মজুরি পাওয়া যায় ২৫ টাকা। একজন কর্মক্ষম নারী শ্রমিক এক দিনে ২০ থেকে ৩০ আঁটি পর্যন্ত পাটের আঁশ ছাড়াতে পারেন। অন্য সময় ক্ষেতমজুর হিসেবে যে টাকা পাওয়া যায় এখন পাট ধুয়ে তার চেয়ে তিন গুণ টাকা বেশি পাওয়া যায়। সংসারে একটু সুখ আনতেই পাট ধোয়ার কাজ করেন বলে জানান টেংরা গ্রামের তছলিমা খাতুন, খুকুমণি, মরিয়ম ও খাদিজা বেগম।
রাস্তার দুই ধারে ও বাড়ির উঠোনে বাঁশের আড়ায় চলছে পাট শুকানোর কাজ। একই সঙ্গে স্থানান্তরের অপেক্ষায় রাখা হয়েছে পাটকাঠির বোঝা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাট বাজারে বিক্রির জন্য আনতে শুরু করেছেন কৃষকরা। উপজেলার গ্রামাঞ্চলের অনেক হাট-বাজারে শুরু হয়েছে আগাম পাট বিক্রি। প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা দরে। পাটকাঠির প্রতিটি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৬০ টাকা করে।
শার্শার স্বরুপদাহ গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘চার বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছিলাম। প্রথমদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় পাটের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু পাট বোনার কিছু দিনের মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় পাটের ফলন মোটামুটি ভালো হয়েছে।’
চার বিঘা জমি থেকে ৫০ মণ পাট পাওয়ার আশা করছেন এই কৃষক।
বেনাপোলের ছোটআঁচড়া গ্রামের কৃষক সাজেদুর রহমান সাড়ে তিন বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘পাটের ফলন ভালো হয়েছে। জমি থেকে পাট কেটে রিবোন রেটিং পদ্ধতিতে পাট ছাড়ানো ও পচানোর জন্য কৃষি বিভাগ আমাকে সার্বিক সহযোগিতা করছে। তবে এই পদ্ধতিটি সনাতন পদ্ধতির চেয়ে ব্যয়বহুল। বাজারে ভালো দামে পাট বিক্রি করতে পারব কিনা সেটাই চিন্তা করছি।’
কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, পাট চাষের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম থাকায় অনেক স্থানে চাষ কিছুটা দেরিতে শুরু হলেও ফলন ভালো হয়েছে। ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকরাও খুশি। বর্তমানে কৃষকরা পাট কাটা, জাগ দেয়া ও আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
শার্শা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ হীরক কুমার সরকার জানিয়েছেন, শার্শা উপজেলায় দুই হাজার নারী নিজের জমিতে চাষাবাদ করেন। অন্যের জমিতে ক্ষেতমজুর হিসেবে কাজ করেন আরো চার হাজার নারী। তবে এই মৌসুমে পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানোর কাজ করেন সীমান্ত জনপদের প্রায় ১৩ হাজার নারী।
তিনি আরো বলেন, ‘শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে এ বছর চার হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে। পাট চাষে কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে কৃষি বিভাগ। সব মিলিয়ে উপজেলায় গতবারের তুলনায় এবার ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করছি পাটের ভালো দাম পাবেন কৃষকরা।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন