প্রথম সেশনে আগ্রাসী শুরু পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দ্বিতীয় সেশনে তাদের লাগাম টেনে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। স্পিনারদের প্রাধান্য দিয়ে করা একাদশে সেই কাজে নেতৃত্ব দেন একমাত্র বিশেষজ্ঞ পেসার আবু জায়েদ রাহি আর অনিয়মিত পেসার সৌম্য সরকার। তবে শেষ সেশনে আবার দৃঢ়তা দেখায় সফরকারীরা। এর মূল কৃতিত্ব এনক্রুমা বনারের। ক্যারিবিয়ানরা ৫ উইকেট হারালেও তার কল্যাণে প্রথম দিনে লড়াই হয়েছে সমান-সমান।
গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে ৫ উইকেটে ২২৩ রান করে দিন শেষ করেছে উইন্ডিজ। ১৭৩ বলে ৭৪ করে অপরাজিত আছেন বনার। উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান জশুয়া ডি সিলভা খেলছেন ২২ রান নিয়ে। পতন হওয়া উইকেটের তিনটিই পেয়েছেন বাংলাদেশের পেসাররা। ৪৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফল বোলার পেসার রাহি। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ৬৪ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। সৌম্যর পকেটে গেছে বাকি উইকেটটি।
প্রথম সেশনে ২৯ ওভার খেলে ১ উইকেট হারিয়ে ৮৪ রান করেছিল উইন্ডিজ। দ্বিতীয় সেশনেও হলো ২৯ ওভার। তাতে ৬২ রান তুললে ক্যারিবিয়ানরা হারায় আরও ৩ উইকেট। শেষ সেশনে ৩২ ওভার খেলে আরও ৭৭ রান যোগ করে তারা। এই সেশনে উইকেট পড়েছে কেবল একটি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খুব বেশি রান না করায় খেলার একক নিয়ন্ত্রণ কারো হাতেই নেই।
গতকাল টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে প্রথম দিনেই বড় সংগ্রহের আশা জাগিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুই ওপেনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ও জন ক্যাম্পবেলের ব্যাটে প্রথম ঘণ্টায় তারা তুলেছিল ৫৫ রান। এরপর ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। ফিরে পায় লাইন লেংথ। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বেঁধে রাখে ব্যাটসম্যানদের।
আবু জায়েদের বলে রিভিউ নিয়ে এলবিডবু থেকে বেঁচে যাওয়া ক্যাম্পবেলকে ফিরিয়ে দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন তাইজুল। বাঁহাতি স্পিনারের বলে এলবিডবু-ই হন ক্যাম্পবেল। ভাঙে ৬৬ রানের শুরুর জুটি। এবারও রিভিউ নিয়েছিলেন ক্যাম্পবেল। বল ব্যাট পার হওয়ার সময় আল্ট্রাএজে মৃদু স্পাইক দেখা গেছে। তবে সেটিকে ব্যাটের স্পর্শের জন্য নয় বলে ধরে নেন তৃতীয় আম্পায়ার। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায় বল লাগত স্টাম্পে। আউটের সিদ্ধান্তের পর ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় ফিল সিমন্সকে। চতুর্থ রেফারির কাছে এসে উত্তেজিত ভঙ্গিতে কথা বলেন ক্যারিবিয়ান কোচ।
আবু জায়েদ ও সৌম্য সরকারের হাত ধরে দ্বিতীয় সেশনে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে বাজে এক শটে বোল্ড হয়ে যান শেন মোজলি। বেশ বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। শুরু থেকে আস্থার সঙ্গে খেলছিলেন ব্র্যাথওয়েট। স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর চমৎকার এক ক্যাচে ফেরেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। সৌম্যর অফ স্টাম্পের বাইরের বল ঠিকমতো কাট করতে পারেননি তিনি। কিপার ডাইভ দেন ক্যাচের জন্য, তিনি নাগাল পাননি। কিন্তু শান্ত বল মুঠোয় জমান।
চট্টগ্রাম টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মেয়ার্স এবার টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। জায়েদের অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে আরও বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে স্লিপে সৌম্যর হাতে ধরা পড়েন তিনি। জার্মেইন ব্ল্যাকউডের সঙ্গে দ্রুত জমে যায় বনারের জুটি। থমকে যাওয়া রানের গতিতে একটু দমও দেন এই দুই ব্যাটসম্যান। ১০২ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করে তাদের জুটির রান। একটু আগেভাগেই শট খেলে তাইজুলকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে থামেন ব্ল্যাকউড। ভাঙে ৬২ রানের জুটি। প্রথম দিনে এটাই বাংলাদেশের শেষ সাফল্য।
আগের টেস্টে দুই ইনিংসেই জুতসই ব্যাট করেছিলেন জশুয়া ডি সিলভা। এবারও ক্রিজে এসে স্থিতধী দেখা যায় তাকে। বনারের সঙ্গে জমিয়ে ফেলেন তিনি। দিনের বাকিটা সময় আর কোনো বিপদ আসতে দেননি তারা। নতুন বল নিয়েও এই দুজনকে টলানো যায়নি। ৪৫ রানের জুটিতে অবিচ্ছিন্ন আছেন তারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
উইন্ডিজ প্রথম ইনিংস : ৯০ ওভারে ২২৩/৫ (ব্র্যাথওয়েট ৪৭, ক্যাম্পবেল ৩৬, মোসলি ৭, বনার ৭৪*, মেয়ার্স ৫, বø্যাকউড ২৮, জশুয়া ২২*; জায়েদ ২/৪৬, মিরাজ ০/৩৯, নাঈম ০/৪২, তাইজুল ২/৬৪, ১/২৩, সৌম্য ১/৩০)।প্রথম দিন শেষে
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন