বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

খাল দখল ও ময়লা-আবর্জনা মুক্ত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৩ এএম

রাজধানীর অনেক খালের এখন কোনো অস্তিত্ব নেই। খাল দখল করে বাড়িঘর, দোকানপাট ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। বুঝার উপায় নেই সেখানে একদা স্রোতস্বিনী খাল ছিল। খালের সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তির অবধি নেই। একেক জরিপে একেক তথ্য। কোনো জরিপে ৫২টি, কোনো জরিপে ৪৬টি, কোনো জরিপে ৪২টি। খালের মালিক-কর্তৃপক্ষও এক বা অভিন্ন নয়। কিছু খালের কর্র্তৃত্ব এই কিছুদিন আগে পর্র্যন্ত ছিল ঢাকা ওয়াসার হাতে। সংখ্যা ৩২টি। এর মধ্যে ২৬টি খাল দু’ সিটি কর্পোরেশনের কাছে সম্প্রতি হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যদিকে কিছু খাল আছে জেলা প্রশাসনের কর্তৃত্বে। খাল দখল হয়েছে ইচ্ছামত। প্রভাবশালী- ক্ষমতাশালীরা যে যেখানে পেরেছে খাল দখল করেছে। তারা দখল করা খাল ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে। সরকারও কিছু খাল দখল করেছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা খাল দখল করে সেখানে নানারকম স্থাপনা গড়ে তুলেছে। দখলকৃত খাল উদ্ধারের প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম ক’দিন আগে বলেছেন: অনেকগুলো খাল অবৈধ দখলদাররা দখল করেছে এবং সরকারও দখল করেছে। সরকার আইন করে দখল করেছে। এগুলো উদ্ধার করা সম্ভব নয়। যেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব, আমরা সেগুলো উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। এলজিআরডিমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ। তার কথা থেকেই তার সদিচ্ছার বিষয় অনুধাবন করা যায়। অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে খাল উদ্ধার করা সহজ কাজ নয়। তবে কঠোর অবস্থান নিলে অবশ্যই সম্ভব। আমরা আশা করতে চাই, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এই কঠোরতা অবলম্বনে এতটুকু কার্পণ্য করবেন না। শুধু খাল উদ্ধারই নয়, তার সীমানা নির্ধারণ, ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার খনন ও স্রোতময় করার পাশাপাশি পুনর্দখল ও ময়লার ভাগাড় হওয়া থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে উদ্ধার কার্যক্রম অর্থবহ ও ফলপ্রসূ হবে না।

যেসব খাল বিলুপ্তির হাত থেকে এখনো কোনো রকমে টিকে আছে, সেগুলোর অবস্থা বলার মতো নয়। অনেক খালেই পানির নাম-নিশানা নেই। বুক জুড়ে ময়লা-আবর্জনা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় অনেক খালকে সংকুচিত করে নালায় পরিণত করা হয়েছে। যেখানে খালের প্রস্থ ছিল ১০০ ফুট, সেখানে তা ১০ থেকে ২০ ফুটে স্থিত করা হয়েছে। এই ১০-২০ ফুট খালও ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে এ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, উত্তরা, গুলশান, বনানী, ধানমন্ডির খাল বাদে বেশির ভাগ খালের চিত্র অভিন্ন। সেখানে গৃহস্থালির বর্জ্য, অপ্রয়োজনীয় আসবাব, বালিশ-কাঁথা, পলিথিন, ভাঙারীর দোকানের বর্জ্য ইত্যাদি স্থায়ী অবস্থান নিয়েছে। খাল উদ্ধার ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে এই ময়লা-আবর্জনা একটা বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুঃখের বিষয়, এই খালগুলোর আশপাশে যারা বসবাস করে তাদের বিন্দুমাত্র সচেতনতা নেই। তারা অবলীলায় ময়লা-আবর্জনা সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানে না ফেলে খালে ফেলছে। খাল বন্ধ হয়ে যাওয়া যে রাজধানীর জলাবদ্ধতার মূল কারণ এবং তার শিকার তাদেরই সর্বাগ্রে হতে হয়, সে বোধও যেন তাদের নেই। এখানেই শেষ নয়, শহরের অধিকাংশ পয়ঃবর্জ্য খাল ও লেকে ফেলা হয়। স্বল্প পানির হাজামজা খাল ও ব্যতিক্রম বাদে লেকগুলোর পাশ দিয়ে দুর্গন্ধের জন্য হাটাচলা পর্যন্ত করা যায় না। পরিবেশ দূষণ ও রোগব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধির জন্য এই পয়ঃবর্জ্যরে ভূমিকা প্রধান। এলজিআরডিমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে পয়ঃবর্জ্য খাল ও লেকে না ফেলার আহবান জানিয়েছেন। কীভাবে পয়ঃবর্জ্যরে লাইন বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা করা এবং এ ব্যাপারে একটি টাইমলাইন নির্ধারণের ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ঢাকা ওয়াসার হাত থেকে খালের দায়িত্ব দুই সিটি কর্পোরেশনের হাতে ন্যস্ত করা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বটে। নগরবাসী এ সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়ন আশা করছে। কিন্তু খাল উদ্ধার ও কার্যকর করে তুলতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে নানা বাধা, প্রতিবদ্ধকতা, অসুবিধা ও সমস্যা। এ বাধা-প্রতিবন্ধকতা দূর এবং সমস্যা-সংকেটর সুরাহার কোনো বিকল্প নেই।

কাজ অনেক। খালের সন্ধান করতে হবে। কোথায় কোন খাল কী অবস্থায় আছে, খুঁজে বের করতে হবে প্রতিটি খালের সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। পরিকল্পনা করতে হবে। কাজে হাত দিতে হবে। কিছু কমন সমস্যা আছে, সে সমস্যার সমাধানে আলাদা ব্যবস্থা নিতে হবে। খাল দখল ও বর্জ্যমুক্ত করতে হবে। প্রস্ত-পরিধি বাড়াতে হবে। পয়ঃবর্জ্য নিকাশ রহিত করতে হবে। দখল ও বর্জ্য মুক্ত খালের গভীরতা বাড়াতে হবে। খালের পুনর্দখল রুখতে হবে। উপযুক্ত ব্যবস্থায় তা সংরক্ষণ করতে হবে। এজন্য বিপুল অংকের অর্থের প্রয়োজন। প্রয়োজন দক্ষ-অভিজ্ঞ জনবলের। শুধু খালের কর্তৃত্ব দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করলেই কাজগুলো হয়ে যাবে না। এজন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতে হবে। আর জনবল সংগ্রহ করতে হবে দুই সিটি কর্পোরেশনকেই। পানি ও পয়ঃনিকাশ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা সিটি কর্পোরেশনদ্বয়ের নেই। এক্ষেত্রে শুরুর পর্যায়ে ঢাকা ওয়াসা তাদের সহায়তা দিতে পারে। যতকিছুই করা হোক, তার স্থায়ী সাফল্য নির্ভর করবে জনসচেতনতার ওপর, গণকর্মকান্ডের ওপর। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আমাদের জনসচেতনতার লেভেল অত্যন্ত কম। গণকর্মকান্ডও প্রশ্নাতীত নয়। একারণেই অনেক খাল উধাও হয়ে গেছে। অনেক খাল মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। তাই জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। উদ্ধারকৃত খাল ক্যামেরার চোখের আওতায় আনতে হবে। অপকর্ম কেউ করলে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মাইকিং, পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। এজন্য পর্যাপ্ত বাজেটের ব্যবস্থা করতে হবে। উপযুক্ত প্রচার-প্রচারণায় সুফল করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রেও সেটা আশা করা যায়, যদি সর্বমুখী প্রচারণা চালানো যায়।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন