সাতক্ষীরা পৌরসভা এলাকায় ময়লা-আর্বজনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় পরিবেশ দূষণ বেড়েছে। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে পৌরসভার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। ময়লার দুর্গন্ধে স্কুল ও কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পথচারীরা চরম বিপাকে পড়ছে। বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীরা চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকার প্রায় দেড় লাখ মানুষের জন্য ১১০টি ডাস্টবিন রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আছে মাত্র ৬০ থেকে ৭০টি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে আছে জনবল আছে মাত্র ২১ জন। শহরের ইটাগাছা হাটের মোড় ও পাওয়ার হাউজ সংলগ্ন এলাকায় একটি করে ট্রান্সফার স্টেশন আছে। প্রতিদিন ১৬ টন বর্জ্য শহরের উপকণ্ঠে একমাত্র ডাম্পিং স্টেশন নিয়ে যাওয়া হয়। তারপরও যানবাহন স্বল্পতার কারণে সঠিক সময়ে বর্জ্য অপসারণ করতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের মেইন গেট থেকে ১শ’ গজ দূরে, সরকারি মহিলা কলেজের উত্তর পাশে শহীদ আব্দুর রাজ্জাকের কবর সংলগ্ন ও ডে নাইট কলেজের পশ্চিমপাশে সাতক্ষীরা পৌরসভার একটি করে ডাস্টবিন ছিল, কিন্তু বর্তমানে তার অস্তিত্ব নেই। ইটাগাছা হাটের মোড় এলাকায় সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের উপর আবর্জনার স্তুপ, সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে আবাসিক এলাকায়ও একই দশা। শুধু এসব এলাকায় নয়, পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে চলছে বর্জ্য অপসারণের কাজ। ডাস্টবিনের চারপাশ ঘেরার নিয়ম থাকলেও অধিংকাশ জায়গায় কোনও ঘেরা দেওয়া নেই। মানুষের চলাচলের রাস্তায় খোলা ডাস্টবিনে ময়লা আবর্জনার ছড়াছড়িতে দুর্গন্ধে মানুষ অতিষ্ঠ। প্রতি রাতে পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা, বর্জ্য এসব ডাস্টবিনেই ফেলা হচ্ছে। ফলে দুর্গন্ধের কারণে ওই এলাকায় চলাচল রীতিমতো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সকালে স্কুল কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী দুর্গন্ধের কারণে ওই এলাকা দিয়ে চলাচল করতে পারছে না।
সরকারি মহিলা কলেজ এলাকার একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজের পিছনের ডাস্টবিনের অব্যবস্থাপনার কারণে চলাচল কষ্টাসাধ্য হয়ে পড়েছে। শহরের সরকারি কলেজ এলাকার আব্দুল করিম জানান, সাতক্ষীরা পৌরসভার দায়িত্ব প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই ডাস্টবিনের এসব ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে ফেলার। কিন্তু পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা তা করছেন না। ফলে দুর্গন্ধে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ ওই এলাকা দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিন স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, ‘জনসচেতনতার অভাব, কর্তৃপক্ষের অবহেলা, চরম অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতার কারণে শহরের বিভিন্ন সড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। এতে করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ফলে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ পৌর এলাকায় বসবাসরত প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক ইদ্রিস আলী বলেন, ‘সাধারণ মানুষের কিছুটা গাফিলতি আছে। সে কারণে তারা ডাস্টবিন ব্যবহার না করে রাস্তায় বর্জ্য ফেলছে, এতে করে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এতে করে পৌর এলাকার ডাস্টবিনের সংখ্যা কমে গেছে। তবে কেউ জায়গা দিলে আমরা ডাস্টবিন তৈরি করে দেবো।’
সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান সহকারী প্রশান্ত ব্যানার্জী বলেন, ‘আমাদের যে পরিমাণ যানবাহন থাকার কথা সে পরিমাণ যানবাহন নেই। যা আছে তা লক্কড় ঝক্কড়। সে কারণে বর্জ্য অপসারণ করতে করতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। এছাড়া আইলা ও সিডরের পরে উপকূলীয় এলাকার মানুষ কাজের সন্ধানে পৌর এলাকার বসবাস শুরু করায় চাপ বেড়েছে।’
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আ. ন. ম গাউসার রেজা বলেন, ‘ময়লা আবর্জনা বাতাস দূষণ করে ও পানি নিষ্কাশনে সমস্যা সৃষ্টি করে। জীবাণু ছড়ায়, বায়ু ও মাটি দূষণ করে। এর মাধ্যমে রোগ জীবাণু ছড়ায়।’
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. তওহীদুর রহমান বলেন, ‘ডাস্টবিনের ময়লা আর্বজনার দুর্গন্ধে ছোঁয়াচে রোগ, ফুসফুস রোগাক্রান্ত হতে পারে। যাদের নাকে এই দুর্গন্ধ যাবে, তারাই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে। ডাস্টবিন অব্যবস্থাপনার কারণে পৌর এলাকার অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন