বৃষ্টি এলো কাশবনে/ জাগলো সাড়া ঘাসবনে/ বকের সারি কোথায় রে/ লুকিয়ে গেল বাঁশবনে...কবি ফররুখ আহমদের এ কবিতার মতো কাশবন বা বাঁশবন কোনোটাই নেই। তবুও দেখা যাচ্ছে সারি সারি বক। ধবধবে সাদা পালকের বকগুলো লম্বা গলা বাড়িয়ে বসে আছে গাছের মগডালে।
রাজধানীর গুলশান লেক। কোলাহলমুখর পরিবেশের মধ্যেও ক্ষণিক নির্জনতা। আলোয় ঝলমল এলাকা, পানির মৃদু ঢেউয়ে বাহারি আলোর বিচ্ছুরণ। এর মধ্যে দেখা যায় সাদা বকের ওড়াওড়ি। লেকের পাড়ের গাছগুলোতে বসে আছে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক।
দূর থেকেই গাছের মাথায় দেখা যায় শ্বেত শুভ্র শত শত বক। গাড়ি বা রিকশা থামিয়ে অনেকে অবাক হয়ে দেখছেন এ অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য। কেউ কেউ গাছের কাছে যাচ্ছেন। মোবাইলে সেলফি তুলছেন। এতে তেমন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই গাছের মগডালে বসে থাকা এসব বক পাখির। অনেক দুষ্টু বালক হঠাৎ ঢিল ছুঁড়তেই সাদা বকের দল ক্যাঁ ক্যাঁ করে উড়তে থাকে। কিন্তু বেশিদূর যায় না। কিছুক্ষণ ওড়াওড়ি করে আবার বসে পাশের গাছে বা ওই গাছেরই মগডালে। সে এক অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য। ইট-পাথরের এই দূষিত নগরী যেন হঠাৎ বকের অভয়ারণ্য।
গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকার লেকটি কিছুদিন আগেও ছিল একটি ময়লার ভাগাড়। তবে উত্তর সিটি করপোরেশন এর দূষণ, দখল রোধে ও লেকের সৌন্দর্য রক্ষায় হাতিরঝিলের মতো এক প্রকল্প হাতে নেয়। ৩১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে লেক খননের কাজ শুরু হয় ২০১৫ সালে। চলতি বছর এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। হাতিরঝিল যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, অনেকটা সেভাবেই এ প্রকল্প করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এটি হবে রাজধানী ঢাকাবাসীর জন্য বিনোদনের আরেক কেন্দ্র।
সাদা বকের বিচরণ সাধারণত গ্রামগঞ্জের আনাচে-কানাচে দেখা যায়। গ্রামের বাঁশঝাড়, বড়বড় গাছপালা এদের আবাসস্থল। এ ছাড়া নদী-নালা, খাল-বিল, ডোবানালার ছোট ছোট মাছ বা পোকামাকড় খেয়ে ওরা জীবন ধারণ করে। বর্তমানে বিভিন্ন কারণে গ্রামেগঞ্জে আর আগের মতো বক আর চোখে পড়ে না। দেশীয় প্রজাতির প্রাচীনতম গাছ বিলুপ্ত, খাবার সংকট, জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ এসব কারণে বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখপাখালি নিরাপদ আবাসভূমি হারাচ্ছে। একই সাথে খাল-বিল, ডোবানালা বর্ষা শেষ হতে না হতেই শুকিয়ে যাওয়ায় তারা খাদ্য সঙ্কটে পড়ছে। যে সব গ্রামে এখনো পুরোনো বাঁশঝাড় ও বড় গাছগাছালি আছে সেখানে এখনো সাদা বকসহ নানা প্রজাতির পাখি নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলেছে। সকালে আর বিকালে পাখির কিচির-মিচির শব্দ গোটা গ্রামকে মাতিয়ে তোলে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, গ্রামে-গঞ্জে বর্তমানে বাঁশঝাড়, বড় গাছপালা কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া খাল-বিল, ডোবানালা এসব বর্ষার পর পরই শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে গাছগাছালি না থাকায় পাখিরা যেমন তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে, তেমনি খাল-বিল, ডোবানালা শুকিয়ে যাওয়ায় তীব্র খাদ্য সঙ্কটেও পড়ছে। বক পাখি সাধারণত পানির ছোট ছোট মাছ এবং পোকামাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করে। এখন নদীনালা, খালবিল শুকিয়ে যাওয়ায় খাবারের সন্ধানে ওরা যেখানে পানি আছে, সেখানে যাচ্ছে। রাজধানীর গুলশান লেকেও এসব বক পাখি খাবার এবং নিরাপদ আবাসস্থলের সন্ধানে এসেছে বলে তারা মনে করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল ইনকিলাবকে বলেন, অনেক এলাকায় গ্রামেগঞ্জের নদীনালা, খালবিল বর্ষা যেতে না যেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বক পাখির মতো যে সব পাখি মাছ বা পানির অন্যান্য পোকামাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করে তারা খাদ্য সঙ্কটে পড়ছে। তাই জীবন ধারনের জন্য এসব পাখি খাদ্যের সন্ধানে যেখানে পানি আছে, গাছগাছালি আছে সেখানে ছুটে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার করে এগুলো পরিষ্কার রাখলে এগুলোতে মাছের পাশাপাশি পাখির বিচরণও থাকত। গুলশান লেক খনন ও পরিষ্কার করায় বিভিন্ন পাখি আসছে। সিটি করপোরেশন চাইলে এখানে পাখির অভয়ারাণ্য গড়ে তুলতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন