রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

করোনায় ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারী-বেসরকারীখাতের সমন্বয় প্রয়োজন- ডিসিসিআই

ডিসিসিআই’র ওয়েবিনারে বক্তারা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:১০ পিএম

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারীখাতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক ওয়েবিনার মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রæয়ারি) অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক-এর সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ বিশেষ আলোচক হিসেবে যোগদান করেন।

ওয়েবিনারের মূল প্রবন্ধে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, কোভিড-১৯ মহামারীর নানামুখী প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্তে¡ও গত ৬ মাসে দেশের অর্থনীতি কাঙ্খিত মাত্রায় পরিচালিত হয়েছে, তবে আমাদের বেসরকারীখাতের উন্নয়নে আরো বেশকিছু কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং এলক্ষ্যে সরকারী ও বেসরকারীখাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদশের জিডিপি ৩৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নীত হলেও, উক্ত সময়ে জিডিপি’র লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪৩.৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তিনি দেশের রাজস্ব খাতে দ্রুততার সাথে অটোমেশন প্রক্রিয়ার পুরোপুরি বাস্তবায়ন এবং অর্থবছরের ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে কোভিড মহামারী মোকাবেলায় ঘোষিত বাজেট কার্যক্রমের পর্যালোচনা এবং বাজেটে বরাদ্দকৃতে অর্থ ব্যবহরের অগ্রগতি মূল্যায়নের উপর জোরারোপ করেন। তিনি করোনা মহামারী মোকাবেলায় এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত প্রণোদনা প্যাকেজ দ্রুততার সাথে ক্ষতিগ্রস্থ উদ্যোক্তাদের মাঝে বিতরণ নিশ্চিতকরনের প্রস্তাব করেন এবং একই সাথে এসএমই ব্যাংক প্রবর্তন, সিএসএমইখাতের সংজ্ঞা পুনঃনির্ধারণ ও এসএমই উদ্যোক্তাদের ডাটাবেইজ প্রস্তুতকরণে জোরারোপ করেন। ডিসিসিআই সভাপতি দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং বেসরকারীখাতকে এর সাথে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আর্কষন এবং ব্যবসা পরিচালনায় ব্যয় হ্রাসে বিশেষকরে সমুদ্রবন্দর সহ সকল বন্দর সমূহের দক্ষতা উন্নয়ন করা প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, এ মহামারীর কারণে সারা পৃথিবীতে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যার প্রভাব আমাদের দেশীয় বাজারের এ খাতেরও পরিলক্ষিত হয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন, মহামারীর সময় আমাদের স্বাস্থ্য খাতের দৈন্যদশা পরিলক্ষিত হয়েছে এবং এ অবস্থা উন্নয়নে বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের জিডিপি’র ৪-৫% বরাদ্দের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির উপর গুরুত্বারোপ করেন।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বর্তমান সময়ের বিবেচনায় জাতীয় সঞ্চয়ের কার্যকর ব্যবহার এবং একই সাথে অর্থনীতিতে অর্থপ্রবাহ নিশ্চিতরাখার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সরকার করোনা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবেলা করেছে এবং এ লক্ষ্যে সহায়ক নীতিমালা প্রণয়ন ও সময়োপযোগী বাস্তবায়নের ফলে দেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই পরিচালিত হচ্ছে। উপদেষ্টা বলেন, সরকার দেশের কৃষি খাতের আধুনিকায়ন, সমাজের অতিদরিদ্র এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন প্রভৃতি বিষয় বেশি মাত্রায় গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। রফতানির সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক বলে উল্লেখ করে তিনি বেসরকারীখাতের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেলেও, যেসব দেশে আমাদের প্রবাসীরা বেশি হারে নিয়োজিত রয়েছেন, সেখান থেকে প্রবাসীরা দেশে ফেরত আসলে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।


বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, করোনা মহামারীর কারণে আমাদের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে, তবে করোনা মোকাবেলায় সরকারের নেতৃত্ব সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে এবং বাস্তবতায় নিরিখেই সরকার ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থায় ৬% হারে প্রবৃদ্ধি হলেও আমাদের অবস্থান ভালো থাকবে, তবে এ অবস্থা উত্তরণে প্রণোদনা প্যাকেজ সহ নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ, প্রয়োজনীয় নীতিমালার সহজীকরণ এবং ঘোষিত নীতিমালায় এ মূহুর্তে কোন ধরনের পরিবর্তন উচিত নয় বলে মত প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি অন্তভূক্তিমূলক অর্থনীতির উপর আরো বেশি হারে গুরুত্বারোপের আহ্বান জানান এবং কৃষি ও এমএসএমই খাতকে বেশি হারে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি ডিজিটাল ব্যবস্থার বাস্তাবায়নের মাধ্যমে সকলকে করের আওতায় নিয়ে আসার উপর জোরারোপ করেন। তিনি তথ্য-প্রযুক্তি খাত কে আরো সহায়তা আরো বেশি করা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এবং এ জন্য উদ্যোক্তাদের নীতিসহায়তা প্রদানের পাশপাশি নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি অবকাঠামো উন্নয়নে নীতিসহায়তার পাশাপাশি অর্থ সহযোগিতা প্রদানের প্রস্তাব করেন। আতিউর রহমান বলেন, সবুজ অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নে উপর আরো বেশি গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন, একই সাথে প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রমে বিনিয়োগ আরো বাড়ানোর আহ্বান জানান। সর্বোপরি তিনি স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং মানব সম্পদ উন্নয়নে আরো বেশি হারে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।


পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (পিআরআই)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা বড় ধরনের সংকটের মুখোমুখি হইনি, তবে ভবিষ্যতের যাত্রাপথের প্রস্তুুতি এখনই গ্রহণ করতে হবে। তিনি স্থানীয় বাজারের চাহিদা বাড়ানো এবং দারিদ্র বিমোচন প্রক্রিয়ায় আরো নজর দিতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিতে আনতে প্রয়োজনীয় সংষ্কারের পাশাপাশি নীতিসহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান এবং বিনিয়োগ কেন কাঙ্খিত মাত্রায় হচেছ না, তার কারণ খুঁজে বের করার উপর জোরারোপ করেন। তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষজন ও বস্তিবাসীদের সহ সকলকে কোভিড ভ্যাকসিন গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হবে। পিআরআই’র নির্বাহী পরিচালক চামড়া খাতের উন্নয়নে সাভার ট্যনারী পল্লীতে ইটিপি বাস্তবায়নের কার্যক্রম দ্রুততার সাথে কাজ করা প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। তিনি এসএমই খাতের উন্নয়নে কৃষি ব্যাংকের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যমান অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো সক্রিয় হতে বলে মত প্রকাশ করেন এবং জিডিপিতে করের অবদান বৃদ্ধিতে রাজস্ব আহরণে মাত্রা বাড়ানোর জন্য সকলকে করের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করেন।

পলিসি এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান ড. এম মাশরুর রিয়াজ বলেন, করোনা সময়ে আমাদের কৃষিখাত সচল ছিল এবং এছাড়াও সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত থাকায় খাদ্য ব্যবস্থাপনা সক্রিয় থাকায়, যার ফলে আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি বলেন, গত জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের রপ্তানি ১% কমেছে, তবে স্থানীয় চাহিদা এবং ক্রেডিট কার্ড এবং ব্যাংক হতে কনজুমরার লোন গ্রহণের হার বেড়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের রপ্তানি পণ্যের সম্ভাবনাময় বাজারের দেশগুলোর কোভিড থেকে বের হতে আরো বেশকিছু সময় লাগবে, তাই রপ্তানি নিয়ে আমাদের আরো বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতিমালা কে যুুগোপযোগী করার আহ্বান জানান পাশাপাশি আরো অধিক সংখ্যক দেশের সাথে এফটিএ স্বাক্ষরের আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি বিনিয়োগ আকর্ষনের জন্য সম্ভাবনাময় দেশগুলোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

ডিসিসিআই প্রাক্তন সভাপতি ও বিল্ড-এর চেয়ারপার্সন আবুল কাসেম খান বলেন, দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে আছে, তবে এ অবস্থা উত্তরণে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তিনি কর নীতিমালায় আরো সংষ্কার এবং জিডিপিতে করের অবদান আরো বাড়ানো প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেন। বিল্ড চেয়ারম্যান বিদ্যমান অডিট প্রক্রিয়াকে ব্যবসায়ীদের জন্য হয়রানি হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এটিকে দ্রুততার সাথে অডিট প্রক্রিয়া সংশোধনের আহ্বান জানান।


ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এন কে এ মবিন, এফসিএস, এফসিএ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

ঢাকা চেম্বারের সহ-সভাপতি মনোয়ার হোসেন সহ ঢাকা চেম্বারের পরিচলনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ এ ওয়েবিনারে যোগদান করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন