শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

নিজের আইডলকে পেয়ে আত্মহারা মাশরাফি

প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : কিংসটনে যেদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন কোর্টনি ওয়ালশ, তখনো কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু হয়নি মাশরাফির। ২০০১ সালের এপ্রিলে থেমে গেছেন ওয়ালশ, সে বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে মাশরাফির। অথচ কি জানেন, কাছ থেকে যার খেলা দেখেননি, টেলিভিশনে সেই কোটর্নি ওয়ালশকে দেখেই দারুণ এক ভাললাগা অনুভূতি হয়েছিল মাশরাফির। ওয়ালশকে অনুকরণ করেই হতে চেয়েছিলেন এই ক্যারিবিয়ান লিজেন্ডারীর মতো। সেই আইডলকেই ক্যারিয়ারের পড়ন্ত সময়ে এসে বোলিং কোচ হিসেবে পাচ্ছেন মাশরাফি! ওয়ালশের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করে ফেলেছে বিসিবি, গত পরশু সেই খবরটা শুনে মাশরাফির সে কি আনন্দ। গতকাল অনুশীলন শেষে মাশরাফির কথায় সে আনন্দই প্রকাশ পেয়েছেÑ ‘আমি নিজেই ছোটবেলা থেকে ওয়ালশের দারুণ ভক্ত। টিভিতে অনেক খেলা দেখেছি। ছোটবেলায় তাকে দেখেই পেস বোলার হওয়ার ইচ্ছা জাগে। তখন থেকে তাকেই আইডল মনে করে আসছিলাম। আমার সেই আদর্শই আজ বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ। সত্যিই এটা অন্যরকম একটি ভালো লাগা। ওর সঙ্গে এক ড্রেসিংরুমে থাকাই আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার।’
পাকিস্তানের ‘টু ডাব্লুউ’র (ওয়াসিম, ওয়াকার) যুগে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকগ্রাও ভয়ংকর রুপ ছড়িয়েছেন পেস বোলিংয়ে। অথচ, তাদের কাউকে নয়, মাশরাফির মনে ধরেছে ওয়ালশকে। তার কারণটা জানিয়েছেন নড়াইল এক্সপ্রেসÑ ‘আমাদের সময়ে ওয়াসিম-ওয়াকারদেরও দেখেছি। কিন্তু ওয়ালশকে আমার সবসময় আলাদা মনে হতো। কারণ, তার অ্যাকশনটা ছিল দারুণ মসৃণ। মনে হতো দৌড়ে এসে বল করত, তা আম্পায়ারকে পর্যন্ত তিনি বুঝতে দিতেন না।’ ওয়ালশকে মাশরাফির পছন্দ করার আর একটি কারণ, তার চারিত্রিক গুণাবলী, মুখে সারাক্ষণ হাসি লেগে থাকাÑ ‘শুধু বোলার হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবেও তিনি দারুণ। বল করার পর ওর হাসি টিভিতে দেখেছি।’
টেস্ট ক্রিকেটে সেরা পেস বোলারদের মধ্যে  ম্যাচ সংখ্যায় ওয়ালশকে ছুঁতে পারেনি কেউ। এমনকি পেস বোলারদের মধ্যে সর্বাধিক ৫৬৩ উইকেটের মালিক ম্যাকগ্রাও নয়। সেরা পেস বোলারদের মধ্যে টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৭ বছর পার করেছেন, ওয়ালশের পাশে এই তালিকায় আছেন শুধু ওয়াসিম আকরাম। তাই ওয়ালশকে পেয়ে টেস্ট ক্রিকেটে নুতন করে স্বপ্ন দেখতে পারে বাংলাদেশ, লম্বা সময় ধরে ফিটনেস ঠিক রেখে ক্যারিয়ার টেনে নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে ভয়ংকর রুপ ছড়ানো যায় কিভাবে? তার রেসিপিটা শিখতে পারে বাংলাদেশ বোলাররা, তা মনে করছেন মাশরাফিÑ ‘টেস্ট ক্রিকেটে ২০ উইকেট নিতে হলে পেস বোলিংয়ের বড় ভূমিকা থাকতেই হবে। ওয়ালশের অভিজ্ঞতা তাই আমাদের কাজে লাগবে। ১৩২টা টেস্ট খেলেছে। ফাস্ট বোলার হয়েও ১৭ বছর সার্ভিস দিয়েছে দলকে। নিজেকে কিভাবে ফিট রাখা যায়, এটাও শেখার ব্যাপার। তাছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে আমাদের তো আর ডেল স্টেইন নেই, বিধ্বংসী কোনো পেসার নেই। আমাদের দলের জন্য প্রয়োজন এমন একজন পেসার যে ধারাবাহিকভাবে ভালো করে যেতে পারে। সেভাবে কাউকে তৈরি করে দেয়ায় সাহায্য করতে পারে ওয়ালশ।’
ওয়ালশের বোলিংয়ে বিশেষত্ব ছিল এক্সট্রা বাউন্স। লম্বা স্পেলে করতে পারতেন বল এই ক্যারিবিয়। তাই কাছ থেকে এ দু’টো কৌলশ শিখতে চান তাসকিনÑ ‘ছোটবেলা থেকেই বাবার মুখে ওয়ালশ-অ্যামব্রোসের কথা শুনেছি। সর্বশেষ যেবার ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েছিলাম, তখন দেখা হয়েছিল ওয়ালশের সাথে, কথা হয়নি। এবার কোচ হিসেবে পাচ্ছি। রোমাঞ্চকর ব্যাপার। ব্যক্তিগতভাবে প্রথমেই শেখার চেষ্টা থাকবে ওর এক্সট্রা বাউন্স আদায় করার ব্যাপারটি। ন্যাচারাল গতিতে লেংথ থেকে বাড়তি বাউন্স করাতে পারত, সেটা শেখার চেষ্টা করব। ১৩২টি টেস্ট খেলেছেন তিনি, সোজা কথা নয়। তো কিভাবে ফিট থাকা যায়, ইনজুরি মুক্ত থাকা যায়, লম্বা স্পেলে বল করা যায়, এসব ব্যাপার শেখার চেষ্টা করব।’
যাকে ঘিরে এতোটা স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ, সেই কোর্টনি ওয়ালশ নিজেই নাকি বাংলাদেশ দলের স্পেশালিস্ট বোলিং কোচের দায়িত্ব পেয়ে রোমাঞ্চিতÑ ‘বিসিবিতে স্পেশালিস্ট বোলিং কোচ হিসেবে যোগ দিয়ে আমি রোমাঞ্চিত। এই গ্রুপটির সঙ্গে কাজ করার দিকে তাকিয়ে আছি। গত ক’বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেট দেখে মনে হয়েছে এখানে যথেষ্ট মেধাবী ক্রিকেটারের সমাবেশ আছে।’ উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েও বোর্ডটির প্রতি কৃতজ্ঞ ওয়ালশÑ ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডে নির্বাচক হিসেবে কাজটা আমি দারুণ উপভোগ করেছি। সুযোগটা দেয়ার জন্য ওদেরকে ধন্যবাদ জানাই। অবশ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজই আমার ঘর, তবে প্রতিভাবান একটি দলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোচিংয়ে নতুন মাত্রায় যাওয়ার সুযোগ এটি। এই সুযোগ আমি হাতছাড়া করতে চাইনি।’ তার লক্ষ্য এখন একটাই, বাংলাদেশ দলের হেড কোচ হাতুরুসিংহের সাথে দারুণ একটি জুটি গড়ে তোলাÑ ‘প্রধান কোচ হিসেবে চন্ডিকা হাথুরুসংহে অসাধারণ কাজ করছেন। তার তার স্কিলের প্রশংসা করে  ইতিবাচক প্রক্রিয়ায় উন্নতির ধারাবাহিকতার প্রত্যাশা করছি।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন