নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এনসিসিআই)’র প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশিরের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৭ মন্ত্রী, এমপি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, ও ব্যবসায়ী নেতাদের দাওয়াত পত্রে এই অনিয়ম করা হয়েছে। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী সংসদ সদস্যগণ রাষ্ট্রের ১৩ নম্বর ব্যক্তি। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে সাবেক মন্ত্রীদের কোনো মর্যাদার কথা উল্লেখ নেই।
২৪ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ। কিন্তু এনসিসিআই’র বার্ষিক সাধারণ সভার দাওয়াতপত্রে নরসিংদী-গাজীপুরের মহিলা এমপি তামান্না নুসরাত বুবলির নাম ছাপা হয়েছে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন ভূইয়া ও সাবেক এমপি কামরুল আশরাফ খান পোটনের নিচে। যেহেতু ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্সে সাবেক এমপিদের কোন পদমর্যাদা নেই এবং যেহেতু জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানগণ ক্রমতালিকায় রাষ্ট্রের ২৪ নম্বর ব্যক্তি সেহেতু সাবেক এমপি পোটনের নামও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নামের নিচেই থাকার কথা। কিন্তু ছাপা হয়েছে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নামের উপরে। প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মেয়রগণ রাষ্ট্রের ২৪ নম্বর শ্রমিকের ব্যক্তি। সেই অনুযায়ী নরসিংদী পৌরসভার মেয়রের নাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নামের নিচে থাকার কথা। কিন্তু দাওয়াতপত্রে তার নাম দেয়া হয়েছে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের নামের নিচে। অথচ ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স দলীয় নেতাদের কোন পদমর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
এক্ষেত্রে এন সি সি আই প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির দলীয় নেতা এবং রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিদেরকে একত্রে গুলিয়ে ফেলেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। একইভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভার মেয়রগণ ক্রমানুসারে রাষ্ট্রের ২৫ নম্বর ব্যক্তি। এতদসত্তে¡ও মাধবদী পৌরসভার মেয়র মোশারফ হোসেন মানিক ও নরসিংদী পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র পদপ্রার্থী আমজাদ হোসেন বাচ্চরু নাম ছাপা হয়েছে দলীয় নেতৃবৃন্দের নিচে। একইভাবে উপজেলা চেয়ারম্যানগণ রাষ্ট্রীয় ক্রমানুসারে রাষ্ট্রের ২৫ নম্বর ব্যক্তি। এক্ষেত্রে নরসিংদী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সফর আলী ভূঁইয়া নাম ছাপা হয়েছে দলীয় নেতাদের নিচে। ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্স ভঙ এবং রাষ্ট্রীয় ব্যক্তিদের সাথে দলীয় নেতাদের গুলিয়ে ফেলার ঘটনা নিয়ে নরসিংদীতে দুদিন ধরে চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। দীর্ঘদিন ধরে একদিকে জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে সুস্পষ্ট বিভাজন এবং অপরদিকে এনসিসিআই’র দাওয়াতপত্রে অসঙ্গতি ও এনসিসিআই প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশিরের স্বেচ্ছাচারিতার দাবি করেছেন ব্যবসায়ী সদস্যরা।
২৭ মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক নেতা ও ব্যবসায়ী নেতাকে অতিথি করে বার্ষিক সাধারণ সভার আয়োজন করা হলেও শেষ পর্যন্ত প্রায় অতিথি শূন্য অবস্থায় অনুষ্ঠিত হয়েছে সাধারণ সভা। ২৭ জন অতিথির মধ্যে একজন মহিলা এমপি ছাড়া আর কোন এমপি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়নি। শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন ছিলেন প্রধান অতিথি। বিশেষ কারণবশত তিনি অনুষ্ঠানে আসতে পারেনি। একজন মেয়রও যোগ দেয়নি। মাধবদীর একটি বিনোদন কেন্দ্রে এই ঘটনাটি ঘটে। সমিতির সাধারণ সদস্যরা বলছেন, এনসিসিআই ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিষ্ঠান। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এনসিসিআই পরিচালিত হবার কথা। কিন্তু এনসিসিআই,র প্রেসিডেন্ট আলী হোসেন শিশির তার রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে এনসিসিআইকে আওয়ামী লীগের একটি অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করেছেন।
দাওয়াতপত্রে এনসিসিআইর সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হালিম এবং আব্দুল্লাহ আল মামুনের নাম রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে এনসিসিআইর আলী হোসেন শিশিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সমাবেশে তারা যোগ দেয়নি। আমি চেয়েছিলাম সকলকে এক মঞ্চে উঠাতে তারা আমার প্রচেষ্টাকে মূল্য দেয়নি। শিল্পমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যাননি তার অসুস্থতার কারণে। অন্যান্য এমপিও রাজনৈতিক নেতারা সবাই জানি তাদের অন্তঃদ্বন্দ্বের কারণে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন