বান্দরবান থানচি সড়কের নীলগিরির নিকটবর্তী একটি স্থান চন্দ্রপাহাড়। সমুদ্র পৃষ্ট থেকে প্রায় ২৪০০ ফুট উপরে চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ স্থানে চন্দ্রপাহাড়ের অবস্থান। উপরে বিস্তৃত নীল আকাশ, নিচে সবুজ গালিচা। যেদিকে চোখ যায় দীগন্ত রেখা পর্যন্ত শুধু ছোট বড় পাহাড় দেখা যায়। চন্দ্রপাহাড়ে আন্তর্জাতিক মানের রিসোর্ট ও ক্যাবল কার নির্মিত হলে দূর্গম ওই এলাকা উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। স্থানীয় হাজার হাজার উপজাতি মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বদলে যাবে পাহাড়িদের জীবনযাত্রা।
চিম্বুক রেঞ্জ নয়নাভিরাম এলাকা। আর চন্দ্রপাহাড় পাহাড়িদের কাছে নাইতং পাহাড় নামে পরিচিত। বান্দরবান সদর থেকে ৫০ কি.মি. দূরে থানচি প্রধান সড়ক ও লামা উপজেলার সীমানা লাগোয়া স্থানে আশেপাশে নেই কোন জনবসতি ও লোকালয়। চন্দ্রপাহাড়ের নিকটবর্তী চারটি পাড়া কাপ্রুপাড়া, ধলাপাড়া, এরাপাড়া ও কলাইপাড়া। চন্দ্রপাহাড় থেকে কাপ্রুপাড়া সাড়ে ৩ কি.মি.। উত্তর-পশ্চিমে ধলাইপাড়া ২.১ কি.মি. দক্ষিণে এবং কলাইপাড়া ৫ কি.মি. পূর্বে অবস্থিত।
স্থানীয় মাকং ম্রো, আলং ম্রো, মেনরাং ম্রো, সাংরাং ম্রো, জানান, চন্দ্রপাহাড়ে পর্যটন উন্নয়ন হলে পাহাড়ি জনগণ তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য আগত পর্যটকদের কাছে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। রাস্তার দুই পাশে ফলের দোকান ও রেস্তোরাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলতে পারবে স্থানীয় এলাকার পাহাড়ি সম্প্রদায়। পাহাড়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত একটি মহল বলে বেড়াচ্ছে, ফাইভ স্টার হোটেল হলে ৮শ’ থেকে ১ হাজার একর জায়গা দখল করা হবে। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে পাহাড়ি উপজাতীয়দের পানিয় জলের সমস্যা দূর হবে। বিদ্যুতায়ন হবে এলাকায়। উন্নত জীবন যাপনের ফলে উপজাতীয় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ সুবিধা বাড়বে। উপজাতীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড আরও বিকাশ ঘটবে। এছাড়াও উপজাতীয় শপিং কমপ্লেক্স এ বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও হাতের তৈরি দ্রব্যাদি বিক্রির মাধ্যমে তাদের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন হবে।
চিম্বুক রেঞ্জে অবস্থিত চন্দ্রপাহাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে পর্যটন উন্নয়নের জন্য আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর পক্ষে গত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫ সালে বান্দরবান সেনা রিজিয়নের সাথে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে বর্তমান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী স্থাপনা নির্মাণ ও সংশ্লিষ্ট ভ‚মি উন্নয়নে পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না। এছাড়াও পর্যটন শিল্প পরিচালনায় ও ব্যবস্থাপনায় জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়।
বর্তমানে সরকারি খাস খতিয়ানের ২০ একর জায়গায় একটি উন্নতমানের হোটেল নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। পাহাড়ের সৌন্দর্য ও প্রকৃতি ঠিক রেখে উন্নত নির্মাণ শৈলীর আদলে তৈরি করা হবে। ওই জায়গাটি একটি তৃতীয় শ্রেণির জায়গা এবং বসবাসের অযোগ্য। ওই জায়গাটিতে কোন রাস্তাঘাট, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ তথা কোন নাগরিক সুযোগ সুবিধা নেই। উক্ত এলাকাতে বর্তমানে লোক বসবাসও করছে না। ওই এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হলে পরিবেশের উপর কোন বিরুপ প্রভাব পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন